পাঠক মত

কোভিড-১৯ এর সচেতনতা প্রান্তিক মানুষের ভাষায় করতে হবে

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাস বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগের বিষয়। করোনাভাইরাস সমাজে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যা জনজীবনে আতঙ্ক ও অস্বস্তিতে প্রতীয়মান হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের মুখে কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য। পরিস্থিতি মোকাবিলা করে নূ্যনতম স্বাস্থ্যবিধি ও ব্যাপক প্রচার করে যাচ্ছে সরকার। মার্চের গোড়া থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে সর্বত্র বিশেষ বার্তা প্রচার করা হয়েছে। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এই প্রচারে মূল গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে। কিন্তু দেশের সর্বস্তরের জনগণকে কি এই প্রচারণা দ্বারা উপকৃত হচ্ছে? নাকি শুধু প্রচারণায় সীমাবদ্ধ থাকছে। করোনাভাইরাসের কারণে রুদ্ধ হয়ে পড়েছে গোটা দেশ। অসহায় করে দেশের অনেক মানুষকে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রতিরোধ সম্পর্কে জনসচেতনতা করছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে দেশের প্রায় সব শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিলবোর্ড স্থাপন, প্রচারপত্র বিলি, এমনকি মোবাইলে কল করার আগে করোনা সম্পর্কে জনসচেতনতা করা হচ্ছে। এসব বিলবোর্ড ও প্রচারপত্রে কোভিড-১৯ কীভাবে ছড়ায়, এর লক্ষণগুলো, কাদের ঝুঁকি বেশি, প্রতিরোধে কী কী করণীয়, আক্রান্ত হলে কি করণীয় এবং সরকার ঘোষিত হটলাইন নাম্বারও সংযোজন করা হয়েছে। যা সত্যি প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের মতো ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে এই মহামারি মোকাবিলা করতে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধে অনেক উত্তম হবে। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত পৃথিবীতে করোনাভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন বাজারে আসেনি। কিন্তু চরম সত্য হলো এসব প্রচারণা এখনো অনেক মানুষের বোধগম্য হয়নি। কারণ বাংলাদেশ একটি গ্রামপ্রধান দেশ। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো গ্রামে থাকে, গ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত। যার ফলে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যেসব জনসচেতনতামূলক প্রচারণা করা হচ্ছে তা শতভাগ ফলপ্রসূ হচ্ছে না। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ যেসব মানুষের সচেতনতামূলক প্রচারপত্র দিচ্ছে তারা অনেকে এসব প্রচারপত্র না পড়ে ফেলে দিচ্ছে। দেওয়ালে যেসব পোস্টার লাগানো হয় তা গ্রামের বেশির ভাগই মানুষ পড়তে পারে না। পোস্টারগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার নিয়ম, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করার যেসব কথা লেখা থাকে তা শুধু পোস্টারে সীমাবদ্ধ থাকছে। দেওয়ালে পোস্টার লাগানো ছাড়াও দেশের প্রতিটি টেলিভিশন চ্যানেলে, রেডিও, এমনকি মোবাইল অপারেটরগুলো মেসেজের মাধ্যমে এবং কল দেওয়ার আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এসব মেসেজ তো দেশের অনেক মানুষ পড়তে পারে না। মোবাইলে, টিভিতে, এবং রেডিওতে প্রচারিত চলতি ভাষা অনেকে বুঝতে পারে না। যদিও এসব মাধ্যমে অনেক মানুষ সচেতন হচ্ছে। কিন্তু যারা এসবের থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাদের কি হবে? কারণ দেশ তো শুধু যারা শিক্ষিত তাদের নিয়ে চলে না। কুলি, মজুর, কৃষক, জেলে সবাইকে নিয়ে চলে। দেশের এই প্রান্তিক মানুষ নিরাপদ না হওয়া মানে গোটা দেশে আতঙ্কের মধ্যে থাকা। এমনিতেই সমাজের মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব লক্ষণীয়। তার মধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে নানাবিধ তথ্য চলমান। যদিও অনেক গুরুত্বসহকারে দেখছেন আবার অনেক অবহেলা করছেন। তা ছাড়া করোনাভাইরাস নিয়ে সমাজে বিভিন্ন ধরনের গুজব লক্ষণীয়। যেমন- গরমে নাকি করোনাভাইরাস কম ছড়ায়, করোনাভাইরাস নাকি বড় তাই মাটিতে পড়ে যায়, গরম পানিতে রসুন দিয়ে খেলে নাকি সংক্রমণ কমে থাকে ইত্যাদি। এসব তথ্য সঠিক নয়। আর মানুষকে এসব তথ্য যে সঠিক নয় তা জানাতে হবে। অন্যথায় দেশে এক কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। যেখানে পুরো উন্নত বিশ্ব করোনার ভয়াবহতা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে এই রোগ প্রতিরোধে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের জন্য তা এক ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ। কেননা, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শিকার একেকজন ব্যক্তি একেকটি মানব বোমা, যার সংস্পর্শে এলে শত শত মানব বোমার সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় দেশের প্রান্তিক মানুষ যাতে করোনা প্রতিরোধের সচেতনতা সম্পর্কে ভালোভাবে সচেতন হতে পারে তার জন্য, প্রান্তিক মানুষের ভাষায় প্রচারণা করতে হবে। অন্যতায় এসব প্রচারণার কার্যকর কোনো ফল বয়ে আনবে না। প্রত্যেক এলাকায় তাদের আঞ্চলিক ভাষায় কোভিড-১৯ সম্পর্কে জনসচেতনতা করতে হবে। আমার মনে হয় এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গুরুত্ব্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। তা ছাড়া গ্রামের যুবসমাজ, মসজিদের ইমাম ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ের পুরোহিতরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। \হ শাহ জাহান আল সাদাফ শিক্ষার্থী আইন বিভাগ কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় রামপুর, কোটবাড়ি, কুমিলস্না