কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

৪৬১ কারখানার পোশাকশ্রমিকরা বেতন পাননি

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রপ্তানিমুখী শিল্প-প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তা সত্ত্বেও ৪৬১ কারখানার পোশাকশ্রমিকরা বেতন পাননি। বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক ও দুঃখজনক। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সদস্যভুক্ত এক হাজার ৯২৬টি তৈরি পোশাকশিল্প কারখানা বর্তমানে চালু রয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে এক হাজার ৪৬৫টির মালিক তাদের শ্রমিকদের জুন মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছেন। তবে এখনো ৪৬১টি কারখানার শ্রমিকরা বেতন-ভাতা পাননি। সরকারের দেয়া পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের সিংহভাগ অর্থই ঋণ হিসেবে পেয়েছেন পোশাক শিল্পের মালিকরা। ফলে দুই মাস ধরে শ্রমিকদের বড় একটি অংশের মজুরি হচ্ছে প্রণোদনার টাকায়। তারপরেও কেন বেতন বাকি থাকবে সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। এরপরেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চলমান সংকটে শ্রমিক-কর্মচারীদের আরও তিন মাসের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য বিশেষ অর্থ বরাদ্দ চেয়েছেন দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকরা। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, এখনো সব কারখানায় শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি, এই অভিযোগ সত্য হলে সরকার কীভাবে নতুন করে প্রণোদনা দেবে। আর দেয়া কতখানি যৌক্তিক হবে, সেটাই ভাবনার বিষয়। আমরা মনে করি, সবার আগে শ্রমিক শোষণ বন্ধ করতে হবে, দিতে হবে তাদের নিয়মিত বেতন। উলেস্নখ্য, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে শতাধিক পোশাকশ্রমিক আক্রান্ত হয়েছে। এই আক্রান্তের সংখ্যা দ্রম্নত বাড়বে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। সুতরাং বলা সঙ্গত যে, শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে, তাদের বেতন বাকি থাকবে কেন? করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার মধ্যেই রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে মালিকপক্ষকে কারখানা চালানোর অনুমতি দেয়। শতাধিক শ্রমিক আক্রান্ত হওয়ার পর তার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দেশের সচেতন মহলে। বিজিএমইএর তৈরি প্রটোকল বা স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী কারখানা চালানোর নির্দেশের পরেও কোনোভাবেই সংক্রমণ ঠেকানো যায়নি। কারখানায় যোগ দেওয়া অনেক শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ক্রয়াদেশ না পেলে অনেক কারখানাতেই জুলাই মাস পার হওয়ার পর কাজ থাকবে না, এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে। বিদেশি ক্রয়াদেশ থাকা সাপেক্ষে বর্তমানে এর সদস্যভুক্ত যেসব কারখানা চালু রয়েছে তাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ইসু্যগুলো পালন করা হচ্ছে কি না তা তদারকিতে কাজ করছে অন্তত ছয়টি দল। পাশাপাশি তাদের নিয়মিত বেতন পরিশোধ করতে হবে। করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে শ্রমিক ছাঁটাই হলে তা 'মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা' হবে মন্তব্য করে কারখানা মালিকদের মানবিক দিক বিবেচনা করে শ্রমিকদের প্রতি সদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আমরাও তাই মনে করি। মনে রাখতে হবে, তৈরি পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে, পাশাপাশি মালিকরাও বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন এদেরই অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে। যাদের শ্রমে-ঘামে এই শিল্প দাঁড়িয়ে আছে, বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে, তাদের নিয়মিত বেতন প্রদানসহ স্বাস্থ্যসুরক্ষা মালিকদেরই নিশ্চিত করতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।