করোনাকালে অনলাইন কিংবা টেলিভিশন শিক্ষা

কোভিডের আক্রমণে গৃহবন্দি কক্ষচু্যত শিক্ষার্থীদের বিকল্প কক্ষপথে স্থাপন করতে সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে। হৃদযন্ত্রের মূল ধমনি বন্ধ হয়ে হার্ট অ্যাটাক হলে যেমন শল্য চিকিৎসক বাইপাস সার্জারি করে কৃত্রিম উপধমনি বানিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়, তেমনি কোভিড-১৯ এর আক্রমণে বিশ্ব শিক্ষাব্যবস্থার হার্ট অ্যাটাক হওয়া মুখোমুখি শিক্ষার প্রধান সরণি বন্ধ হয়েছে। তাই এক কিংবা প্রয়োজনে একাধিক উপসরণি বানিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমকে জীবিত রাখতে হবে। অনলাইন কিংবা টেলিভিশন শিক্ষা অনেকটা উপসরণির মতো

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০২০, ০০:০০

ড. রাশিদ আসকারী
কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বপরিস্থিতিকে যে এভাবে দুমড়ে-মুচড়ে উলটপালট করে ফেলবে সত্যিই তা কেউ ভাবতে পারেনি। এই তো গত ফেব্রম্নয়ারিতেই কি কেউ ভেবেছিল যে সাদা-রঙ্গা (যিরঃব-পড়ষড়ৎ) কর্মচারীরা সম্পূর্ণ ঘরে বসেই অফিস চালাবে। কিংবা অযুত-নিযুত শিক্ষার্থী ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে বসে পড়া সারবে। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনেই মানুষকে ঘরের বাইরে যেতে হচ্ছে। কারণ, কেউ জানে না মানবজাতির এই অদৃশ্য শত্রম্ন কবে ক্ষান্ত দেবে। কবে মানুষ আবার আগেকার জীবনে ফিরে আসবে। শহর-বন্দর কোলাহলমুখর হবে। মানুষ পরম নিশ্চিন্তে করমর্দন করবে। উষ্ণ আলিঙ্গন করবে। মাস্ক খুলে বুক ভরে শ্বাস নেবে। তবে করোনাভীতি যাক বা না যাক মানুষকে কিন্তু ফিরে যেতেই হবে স্বাভাবিক (হড়ৎসধষ) জীবনে- তা সে সত্যকার স্বাভাবিক হোক আর ছদ্ম স্বাভাবিক হোক। হাতে দস্তানা মুখে মাস্ক পরেই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে কর্মক্ষেত্রে। এই অনিবার্য প্রত্যাবর্তন যেহেতু স্বাভাবিক নয়, তাই একে তত্ত্ব করে 'নব্য স্বাভাবিক' ইংরেজিতে 'নিউ নরমাল' বলা হচ্ছে। জীবনের সব ক্ষেত্রে একেবারে জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ পর্যন্ত, যতদিন করোনার আতঙ্ক বিরাজিত আছে, এই 'নিউ নরমাল' জগতের বাসিন্দা থাকবে পৃথিবীর সব মানুষ। প্রেসিডেন্ট থেকে প্যাডলার পর্যন্ত কারুরই এর থেকে নিস্তার নেই। আর তাই মানবজাতির এই অমোঘ পরিণতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর আয়োজন চলছে দুনিয়াজুড়ে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, বাণিজ্য সবক্ষেত্রেই। শিক্ষা ক্ষেত্রে 'নিউ নরমাল' পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য রকমারি ভার্চুয়াল/রিমোট/ডিসট্যান্স পদ্ধতির সুপারিশ নিয়ে এসেছেন বিশেষজ্ঞরা। অনলাইন ক্লাসের সাড়া পড়ছে দিকে দিকে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য যেখানে এখনো আমরা ১৫৬ হাজার বর্গমাইলকে পুরোপুরি ফ্রি ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনতে পারিনি, আবার নিম্নবিত্ত কিংবা নিম্নমধ্যবিত্তদের অনেকে যেখানে এই সেবার ক্রয়ক্ষমতা অর্জন করে উঠতে পারেননি বলে জানাচ্ছেন, সেখানে অনলাইন শিক্ষার ইতিমধ্যে গৃহীত উদ্যোগটির সফল বাস্তবায়ন সংশয়ের মুখে পড়েছে। এদিকে সবাইকে সংশ্লিষ্ট না করে তৎপরতা চালিয়ে যাওয়াও এসডিজি-৪ অভিলক্ষের বরখেলাপ হবে। তবে এই অনলাইন শিক্ষাক্রম কোভিড-১৯ এর ঘোর সংকটের কালে নাই মামার চাইতে কানা মামার ভূমিকায় যে অধিক সফলতার সঙ্গে অবতীর্ণ হতে পারে সে কথা অস্বীকার করার জো আর এখন নাই। তবে একদিকে দূরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এবং অন্যদিকে মধ্য ও নিম্নআয়ের জনগণ সবাইকে সম্পৃক্ত করা- এ দুয়ের সুসমন্বয় ঘটাতে চাইলে মনে হয় শিক্ষা টেলিভিশনের ধারণা বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার ক্ষেত্রে 'নিউ নরমাল' মোকাবিলায় অন্যতম যুতসই ব্যবস্থা হলো শিক্ষা টিভির প্রবর্তন। অবশ্য নিম্ন ও মধ্যমআয়ের দেশগুলোতে ১৯৫০-এর দশক থেকেই টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষার প্রযুক্তি কম-বেশি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সম্প্রতি এটি আরও বেশি মিথষ্ক্রিয়ামূলক হয়ে উঠেছে। বস্তুত, এডুকেশন প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে আইটি টুলসের বহুমাত্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস রুমকে অধিকতর আকর্ষণীয়, অংশগ্রহণমূলক এবং প্রাতিস্বিক শিক্ষা উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে সবার মধ্যে এ বিশ্বাস স্থির হয়েছে, সময়োপযোগী শিক্ষাপদ্ধতি বেছে নিতে শিক্ষা-প্রযুক্তির (ঊফঃবপয) বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মতো এশিয়া-আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোয় যেখানে সব মানুষের পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্য পুরোপুরি বিকশিত হতে পারেনি এবং সে কারণে প্রজন্ম জেড (এবহবৎধঃরড়হ ত)-যারা ১৯৯০ থেকে ২০১০-এর মধ্যে জন্মেছে এবং ছেলেবেলা থেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছে; কিংবা প্রজন্ম আলফা (এবহবৎধঃরড়হ অষঢ়যধ)-যারা ২০১০ থেকে ২০২০-এর মাঝামাঝি সময়ে জন্মেছে এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছে, তারা ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত দেশগুলোতে জন্মানো জেড কিংবা আলফা প্রজন্মের মতো সমভাবে বিকশিত হতে পারেনি। হলে তারাও এডটেকের এই চরম উৎকর্ষের যুগে ভারী ডেক্সটপ কম্পিউটার ছেড়ে ট্যাবলেট আর স্মার্টফোনের মাধ্যমে খেলাচ্ছলে মিথষ্ক্রিয় অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারত। সেই সুবর্ণ সময় না আসা পর্যন্ত শিক্ষা টিভি ব্যবহারের- ওপর নির্ভর করাটাই মনে হয় অধিকর যুক্তিযুক্ত। টেলিভিশন একটি শক্তিশালী অডিও-ভিজুয়াল যন্ত্র যাকে অত্যন্ত কার্যকরভাবে উচ্চশিক্ষার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। টেলিভিশনসংক্রান্ত সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলো যে স্মার্টবোর্ড প্রযুক্তির জন্ম দিয়েছে তা শিক্ষকরা খুব সহজেই শিক্ষাদানের কাজে ব্যবহার করতে পারেন। গবেষকরা বলছেন অডিও-ভিজুয়াল এই মাধ্যমটির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রদান ইন্দ্রিয় উদ্দীপনা তত্ত্বানুসারে অধিকতর কার্যকর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। বস্তুত, মুখোমুখি শিক্ষায় আরও কার্যকরভাবে এই কাজটি হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রত্যক্ষ উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে দৃশ্যমান শিক্ষকের পাঠদান। সেদিক থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের একটি অধিকর গ্রহণযোগ্য বিকল্প হিসেবে টেলিভিশন শিক্ষাই সর্বাধিক গ্রাহ্য। আর শুধু শিক্ষাদানই কেন, একজন শিক্ষার্থীকে সময়োপযোগী, সমাজ সচেতন, পরিবেশ সচেতন হিসেবে গড়ে তুলতে কিংবা তার মধ্যে সফট স্কিলস ডেভেলপমেন্টের জন্যও এই শিক্ষার বিকল্প নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো- কি হবে সেই উচ্চশিক্ষা টেলিভিশনের স্বরূপ? এটি কি কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত একটি টিভি হবে যেমন- বিটিভির একটি চ্যানেলে প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের করোনাকালে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি স্কুল-কলেজের জন্য যতটা সহজসাধ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যও কি ততটা সহজ হবে। টেলিভিশনের মাধ্যমে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ কার্যক্রম যেভাবে চালানো হয়, অন্যান্য সাধারণ, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কি সেভাবে চালানো যাবে? চীন, জাপান, ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টেলিভিশন কিংবা রেডিওর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা প্রদানের অনেক নমুনা আছে। করোনাকালে তারা সেসব উপায় প্রয়োগ করে 'নিউ নরমাল' পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। তাই বাংলাদেশেও শিক্ষা ক্ষেত্রে 'নিউ নরমাল' পরিস্থিতি মোকাবিলায় উচ্চশিক্ষায় টিভির ধারণাটিও কাজে লাগানো যায়। কিন্তু সেখানেও প্রচুর চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে একটি উচ্চশিক্ষা টিভি প্রতিষ্ঠিত করে উচ্চশিক্ষার বিচিত্র শাখা-প্রশাখার ওপর তৈরি করা কনটেন্ট সুবিন্যস্তভাবে পরিবেশন করা সহজসাধ্য নয়। আবার প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা টিভি করাও অনেক বড় ব্যাপার। তাই বলে আবার শিক্ষাঙ্গনে কোভিড নিয়তি মেনে নিয়ে হাত-পা গুটিয়ে সুদিনের প্রত্যাশায় বসে থাকাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মোদ্দা কথা হলো, কোভিড কবলিত শিক্ষাঙ্গনে 'নিউনরমাল' পরিস্থিতির মোকাবিলায় এডটেকের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রযুক্তির এক চমৎকার রূপায়ন হলো অডিও-ভিজুয়াল টিভি মাধ্যম। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কনটেন্ট প্রস্তুত করে আপাতত ইউজিসি নিয়ন্ত্রিত একটি শক্তিশালী টিভি কিংবা একাধিক টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে পরিবেশন করা গেলে বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি বাড়তি সুবিধের দিক খুলত। পরে পোস্ট-কোভিডকালেও তা কাজে লাগানো যেত এবং পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করতে পারত। তথ্য, ধারণা, দক্ষতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবেশনায় টেলিভিশনের গুরুত্ব গবেষণা স্বীকৃত। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শিক্ষা টিভিতে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন লক্ষ্য করলেই শিক্ষা টিভির গুরুত্ব আঁচ করা যায়। বিবিসির পরিচালকের ভাষ্যমতে 'গৃহ এবং পাঠশালার পর আমি মনে করি মানবজাতির ওপর গভীর প্রভাব সৃষ্টি করতে অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমের তুলনায় টেলিভিশনের ভূমিকা সর্বাধিক।' আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক সব ধরনের শিক্ষা প্রদানে গণমাধ্যম হিসেবে টেলিভিশনের ভূমিকা অগ্রগণ্য। ইলেকট্রনিক এই মাধ্যমটিকে শিক্ষাপদ্ধতি এবং কোর্স-কারিকুলামের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন উদ্দেশ্য এবং উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাঠ্যবস্তুর ব্যবহারিক প্রয়োগ এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রদর্শন করা যেতে পারে। দূরশিক্ষণের মানবিকীকরণ, বাস্তবধর্মী, জীবন ঘনিষ্ঠ দৃষ্টান্ত প্রদর্শন, কেসস্টাডি প্রভৃতির মাধ্যমে টেলিভিশন ফলাফল নির্ভর (ড়ঁঃপড়সব নধংবফ) এডুকেশনের উৎস হিসেবে বাস্তব ক্লাসরুম প্রশিক্ষণের যোগ্যতর বিকল্প হতে পারে। তা ছাড়া, ব্রডকাস্ট প্রোগ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন নন ব্রডকাস্ট অডিও-ভিজুয়াল ক্যাসেটের মাধ্যমে কিংবা স্স্নাইড টেপ এবং ফ্লিপচার্টের মাধ্যমেও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় ল্যাবরেটরি এক্সপেরিমেন্টের বিকল্প প্রদর্শন করা যায় এই টেলিভিশনে। সামাজিক বিজ্ঞান এবং ভাষাশিক্ষায় জীবন ঘনিষ্ঠ পরিস্থিতি প্রদর্শনের সুযোগ থাকে এই দূরশিক্ষণ মাধ্যমে। 'নিউ নরমাল' পরিস্থিতিতে বিকল্প ধারার শিক্ষারীতি হিসেবে অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতির চেয়ে অনেক সময় বেশি কার্যকর হলেও টেলিভিশন শিক্ষাও কোনো অবিমিশ্র পদ্ধতি নয়। এ ক্ষেত্রেও ডিজিটাল ডিভাইডের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। বাসায় ইন্টারনেট কিংবা স্যাটেলাইট কানেকশন না থাকলে দূরশিক্ষণের এই সুবিধে কাছে আনা যাবে না। তা ছাড়া শিক্ষার্থীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ কিংবা নিরীক্ষণের সুযোগ থাকে না। শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন পদ্ধতির চেয়ে এই দূরশিক্ষা পদ্ধতিতে প্রতারণার সুযোগও বেশি থাকে। যাই হোক, টেলিভিশন শিক্ষা অনলাইন শিক্ষার চেয়ে ভালো-না মন্দ তা বিচারের দায়িত্ব এ লেখার প্রতিপাদ্য নয়। কোভিড পরিস্থিতির শিকার শিক্ষার্থীদের জন্য আপতকালীন বিকল্প হিসেবে দুটোরই দরকার আছে। তবে স্কুল শিক্ষক আর অস্থিরমতি তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন শিক্ষা এবং অপেক্ষাকৃত বয়স্ক শিক্ষার্থী যাদের বিরামহীন প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং যারা অধিকতর দায়িত্বশীল তাদের জন্য দূরশিক্ষাই বেশি কার্যকর। যাই হোক, বাংলাদেশের জন্য আসলে একটি সুসমন্বিত মিশ্র (নষবহফবফ) শিক্ষাপদ্ধতি দরকার এবং তার একটি শক্তিশালী স্থায়ী অবকাঠামো থাকা প্রয়োজন। এডটেকের সর্বাধুনিক সুবিধাগুলোও ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকা চাই। সবচেয়ে বড় কথা হলো প্রস্তুতি। আজ বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের যে তান্ডব, যে লাগামহীন সংক্রমণ তার কারণ যতটা না এই ভাইরাসের ভয়াবহতা তার চেয়ে বেশি মানুষের অপ্রস্তুতি। রবীন্দ্রনাথ তার 'শেষের কবিতায়' অমিত রায়ের মুখে এই প্রস্তুতির বিষয়টি চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। অমিতের ভাষ্যে সম্ভবপরের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকাই সভ্যতা। অসভ্যেরা সব ব্যাপারেই অপ্রস্তুত। অর্থাৎ সভ্যতার আরেক অর্থ প্রস্তুতি। জীবন এবং জগতের সম্ভাব্য সব সঙ্কটের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকাই সভ্যতার লক্ষণ। শিক্ষা ক্ষেত্রে এই আপতকালীন প্রস্তুতির মধ্যে টেলিভিশন শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষাদর্শনের মূল কথা হলো চতুর্থ শিল্প বিপস্নবের রকমারি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী জনসম্পদ তৈরির জন্য এবং অর্জিত ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে ফলাফলনির্ভর (ড়ঁঃপড়সব নধংবফ) শিক্ষাকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। আর সেজন্য দরকার শিক্ষাকার্যের ধারাবাহিকতা। কোভিডের আক্রমণে গৃহবন্দি কক্ষচু্যত শিক্ষার্থীদের বিকল্প কক্ষপথে স্থাপন করতে সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে। হৃদযন্ত্রের মূল ধমনি বন্ধ হয়ে হার্ট অ্যাটাক হলে যেমন শল্য চিকিৎসক বাইপাস সার্জারি করে কৃত্রিম উপধমনি বানিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়, তেমনি কোভিড-১৯ এর আক্রমণে বিশ্ব শিক্ষাব্যবস্থার হার্ট অ্যাটাক হওয়া মুখোমুখি শিক্ষার প্রধান সরণি বন্ধ হয়েছে। তাই এক কিংবা প্রয়োজনে একাধিক উপসরণি বানিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমকে জীবিত রাখতে হবে। অনলাইন কিংবা টেলিভিশন শিক্ষা অনেকটা উপসরণির মতো। ড. রাশিদ আসকারী : কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট, রাজনীতি বিশ্লেষক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া