দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিন

বানভাসি এলাকায় বাড়ছে রোগ-বালাই

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনা মহামারিকালে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত হয়েছে দেশের লাখ লাখ মানুষ। বন্যার সময় তুলনামূলকভাবে পানির উচ্চতা প্রবাহ নদীর তীর অতিক্রম করে ধাবিত হয়, তীর ছাড়িয়ে পানি আশপাশের সমভূমিকে পস্নাবিত করে এবং ক্ষেতের ফসল, বৃক্ষ, গবাদি পশু ও ঘরবাড়িসহ মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। ভারি বৃষ্টিপাত, হিমালয়ে তুষার গলন এবং হিমবাগুর স্থানান্তর সংঘটনের কারণে সাধারণত বন্যা দেখা দেয়। উলেস্নখ্য, ১৯৮৮ সালে পানি ১১২ সেন্টিমিটার এবং ১৯৯৮ সালে বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দেশে বন্যার সৃষ্টি করেছিল। এবার অবশ্য পরিস্থিতি ওই পর্যায়ে যায়নি। তারপরেও বন্যাকবলিত মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। জুলাইয়ের প্রথমার্ধে দ্বিতীয় দফার বন্যায় পস্নাবিত দেশের অন্তত এক চতুর্থাংশ জেলার নিম্নাঞ্চল। টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে নদনদীর পানি বাড়ার সঙ্গে উপদ্রম্নত এসব জনপদের প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ মানুষ। পাশাপাশি অবকাঠামোগত ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতিও বাড়ছে। পালস্না দিয়ে বাড়ছে বন্যাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবও। দুর্গত এলাকায় ডায়রিয়া, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, শ্বাসনালির প্রদাহসহ নানা রোগে প্রায় তিন হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। ৩০ জুন থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত বন্যাকবলিত এলাকায় ৫৫ জনের মৃতু্য হয়েছে নানাভাবে। এর মধ্যে পানিতে ডুবে ৪৪ জন, ডায়রিয়ায় একজন, সাপের কামড়ে তিনজন ও বজ্রপাতে সাতজনের মৃতু্য হয়েছে। লালমনিরহাটে নয়জন, কুড়িগ্রামে ১৪ জন, গাইবান্ধায় সাতজন, রংপুরে দুজন, সুনামগঞ্জে একজন, সিরাজগঞ্জে তিনজন, জামালপুরে ১৪ জন, টাঙ্গাইলে তিনজন ও নেত্রকোনায় দুজন মারা গেছেন। উপদ্রম্নত এলাকায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে ২৮৯৮ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় ১৫৭১ জন, শ্বাসনালির প্রদাহে ৩৮৪ জন, চর্মরোগে ১৩২ জন, চোখের প্রদাহে ৩২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর বাইরে সাত শতাধিক মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বন্যার্ত এলাকায়। অন্যদিকে সব জেলায় ধানকাটা শেষ হলেও বন্যায় পাট, ডাল ও শাকসবজির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আমন ধানের বীজতলাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতি সামলাতে কৃষি মন্ত্রণালয় উঁচু জায়গায় আমনের বীজতলা করে কৃষকদের বিনামূল্যে তা সরবরাহ করবে। বন্যা পরিস্থিতি কোথাও উন্নতি আবার কোথাও কোথাও অবনতি হয়েছে। বন্যা উজানের পানি কমতে থাকায় দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও মধ্যাঞ্চলে অবনতি হয়েছে। এই অবস্থায় মধ্যাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছবে। আমরা মনে করি, বন্যার্তদের দুর্ভোগ নিরসনে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পাশাপাশি দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ ও খাবার সংকট যাতে না দেখা দেয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করতে হবে। কোনো রকম দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। বন্যা মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে স্থায়ী পরিকল্পনার দিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়েও নিতে হবে যথাযথ উদ্যোগ এবং এর কোনো বিকল্প নেই।