করোনা পরীক্ষায় জালিয়াতি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জরুরি

প্রকাশ | ২২ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনা পরীক্ষায় জালিয়াতি ও প্রতারণা চলছেই। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, করোনাভাইরাস শনাক্তে ভুয়া রিপোর্ট দিচ্ছিল রাজধানীর গুলশানের সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। কৌশলে রোগী ভর্তি রেখে অতিরিক্ত বিলবাণিজ্যও করছিল হাসপাতালটি। পাশাপাশি রোগীদের বিল বাড়াতে একই টেস্ট বারবার করাচ্ছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু তা-ই নয়, এই জালিয়াতি ঢাকতে হাসপাতালটি বিলের ডাটা পর্যন্ত ডিলিট করে দিয়েছে বলে জানিয়েছের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব)। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই হাসপাতাল রোগী ভর্তি রেখে অতিরিক্ত বিলবাণিজ্য করছিল। এছাড়া রোগীদের বিল বাড়াতে একই টেস্ট দুই থেকে তিনবারও দেখানো হতো। কোভিড-১৯ নেগেটিভ রোগীদের ভুয়া পজিটিভ রিপোর্ট দিয়ে তাদেরও ভর্তি করা হতো। পাশাপাশি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত নানা টেস্ট দেখিয়ে তাদের আইসিইউ ও কেবিনে রেখে বানানো হতো মোট অঙ্কের বিল। যদিও করোনা ইসু্যতে প্রতারণার অভিযোগ অস্বীকার করেছে সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। \হএর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহ করার চুক্তি করেছিল জোবেদা খাতুন সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (জেকেজি হেলথ কেয়ার)। বাসা থেকে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার ৬০০ টাকার বিনিময়ে তারা নমুনা সংগ্রহ করছিল এবং ভুয়া প্রতিবেদন দিচ্ছিল। একই কাজ করছিল রিজেন্ট হাসপাতাল। নানা অনিয়ম, প্রতারণা, সরকারের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ, করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট, চিকিৎসায় অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের প্রধান কার্যালয়, উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দিয়েছে র?্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র?্যাব)। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়াসহ নানা প্রতারণার অভিযোগে অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট গ্রম্নপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাবরিনা ও আরিফকে। রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে ১০ হাজারের বেশি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। অথচ হাসপাতালটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি করেছিল করোনা আক্রান্ত রোগীদের ফ্রি-তে চিকিৎসা দেবে বলে। একইভাবে অর্থ আত্মসাৎ করেছে জেকেজি হেলথ কেয়ার। তারা নাকি ১৫ হাজার মানুষের নমুনা সংগ্রহ করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরপর তিনটি ঘটনা সাজালে কী দাঁড়ায়? মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে এরা। দেশের সচেতন মহলের ধারণা অনুসন্ধান করলে এমন প্রতারণা জালিয়াতির ঘটনা আরো বেরিয়ে আসবে। এ ব্যাপারের্ যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতকে আরো সক্রিয় করতে হবে। গ্রেপ্তার ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে অপরাধীদের। মানুষ দুটো কারণে জালিয়াতি প্রতারণার আশ্রয় নেয়। কেউ পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে আবার কেউ লোভের বশবর্তী হয়ে। রাতারাতি তাকে ধনী ও ক্ষমতাবান হতে হবে, এই স্বপ্ন তাকে পেয়ে বসে, বিভোর করে ফেলে। ফলে ওই ব্যক্তি নিষ্ঠুরতা, অমানবিক ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়। এর পরিণতি কী হতে পারে ভেবেও দেখে না। কেউ অফিস খুলে চাকরি দেয়ার নামে, কেউ বিদেশে পাঠানোর নামে, কেউ অনলাইনে পণ্য কেনার নামে, কেই বা হায় হায় কোম্পানি খুলে কোটি কোটি টাকা মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অবলীলায়। এদের প্রতিহত করতে হবে যে কোনো উপায়ে। না হলে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। দ্রম্নত সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। মনে রাখতে হবে, করোনা পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট দেয়া কিংবা জালিয়াতি করা মানে দেশের সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে প্রতারণা করা এবং এই রোগ সংক্রমণের সুযোগ করে দেয়া- যা বড় ধরনের অপরাধ। এর ফলে বিদেশেও আমাদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এই প্রতারণার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরি।