পাঠক মত

উচ্চমাত্রার হর্ন ও শব্দদূষণ প্রতিরোধ জরুরি

প্রকাশ | ২২ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নীরব ঘাতক উচ্চমাত্রার হর্ন বা শব্দদূষণের কবলে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহর। শহরের যানবাহন, যানবাহনের হর্ন, মাইক, লাউড-স্পিকার, ইট ও পাথর ভাঙার মেশিন, জেনারেটর ইত্যাদি থেকে নির্গত শব্দ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শ্রবণের জন্য শব্দের কম্পাঙ্ক ৪৫ ডেসিবল সহনীয় মাত্রা কিন্তু ১০৬ ডেসিবলের শব্দ অতিমাত্রায় দূষণ ঘটায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬০ ডেসিবেল শব্দে মানুষের সাময়িক শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে এবং ১০০ ডেসিবেল শব্দে চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে। অথচ প্রতিদিনই রাজধানী শহর ঢাকায় ১০৭ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ তৈরি হচ্ছে। শব্দদূষণের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার শিশুর শ্রবণক্ষমতা ধ্বংস হচ্ছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন বিধি-বিধান থাকলেও তার তেমন কোনো প্রয়োগ হচ্ছে না। ঢাকা নগরীর রাজপথ থেকে আবাসিক এলাকা-সর্বত্রই শব্দদূষণের ফলে জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শব্দদূষণের ফলে সৃষ্ট শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি রোধ করতে হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধ করা হলেও যানবাহন মালিক, চালকরা এগুলো মানছেন না। স্কুল কিংবা হাসপাতালের সামনে হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ হলেও কে শোনে কার কথা। অব্যাহত যানজট শব্দদূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। পরিবেশ অধিদপ্তর শব্দদূষণ প্রতিরোধে অভিযান পরিচালনা করছে, জরিমানা করছে, কিন্তু শব্দদূষণ বন্ধ করতে পারছে না। যানবাহনের দুর্ভোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জেনারেটরের বিকট শব্দ, যা পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। হাসপাতালে যখন চিকিৎসা চলে, তখন দেখা যায়, রাস্তায় মাইক দিয়ে কেউ বক্তৃতা দিচ্ছে, মাইক দিয়ে গান বাজিয়ে লটারির টিকিট বিক্রি করছে, কারণে-অকারণে বাস ও ট্রাকচালকরা হাইড্রোলিক হর্ন বাজিয়ে বাইরে থেকে হাসপাতালের ভেতর শব্দদূষণ করছে। শব্দদূষণের কারণে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, বুক ধড়ফড়, খিটখিটে মেজাজ, মাথাব্যথা, পেপটিক আলসার, অস্থিরতা, অমনোযোগী ভাব, ঘুমে ব্যাঘাত, শ্রবণশক্তি ও স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ মানুষের লিভার সিরোসিস, গ্যাস্ট্রিক, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, রক্তচাপজনিত রোগ, মাথা ধরা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, মনোযোগ নষ্টসহ নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হচ্ছে। রোগী, গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য শব্দদূষণ মারাত্মক ক্ষতির কারণ। শব্দদূষণের কারণে বিকলাঙ্গ শিশুও জন্মগ্রহণ করতে পারে। প্রচন্ড শব্দ শিশুদের মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনছে। কোনো শিশুর কানে যদি খুব কাছ থেকে উচ্চশব্দ আসে, তাহলে তার শ্রবণক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শব্দদূষণের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার শিশুর শ্রবণক্ষমতা ধ্বংস হচ্ছে। এর প্রতিকার জরুরি। মো. জিলস্নুর রহমান ব্যাংকার ও লেখক, ঢাকা