ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতারণা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ২৪ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রতারণা হচ্ছে অসদুপায় অবলম্বন করে বাঁকা পথে কোনো কিছু অর্জনের চেষ্টা। সারাদেশেই এর জয়জয়কার চলছে, কোনোরকম প্রতিকারহীনভাবে। যতই দিন যাচ্ছে নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতারণা বেড়েই চলেছে। আর এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বিদেশিরাও। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, রাজধানীর পলস্নবী এলাকা থেকে বাংলাদেশি এক নারীসহ ১২ নাইজেরিয়ান নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। সংস্থাটি বলছে, চক্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রতারণার মাধ্যমে সারাদেশ থেকে গত দুই মাসে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- নন্দিকা ক্লিনেন্ট, ক্লেটাস আছুনা, ওইউকুলভ টিমটি, একিন উইসডোম, চিগোই, ইভুন্ডে গ্যাব্রিল ওবিনা, স্যালেস্টাইন প্যাট্রিক, ডুবুওকন সোমায়ইনা, ইয়েরেম প্রেসিওস, ওক উইসডম, মর্দি ন্যামডি এবং বাংলাদেশি রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রতারণার শিকার হয়ে এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তারা অভিনব উপায়ে বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব তৈরি করেন। বন্ধুত্বের একপর্যায়ে তারা ম্যাসেঞ্জার থেকে একটি উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দেন। পরে ম্যাসেঞ্জারে এসব মূল্যবান সামগ্রীর এয়ারলাইন বুকিংয়ের ডকুমেন্ট পাঠান। উপহারের বক্সে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে বলেও ভুক্তভোগীকে জানানো হয়। তারা ভুক্তভোগীকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কাস্টম গুদাম থেকে সেগুলো রিসিভ করতে বলেন। এ সময় তাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন নিজেকে কাস্টমস কমিশনার পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীকে চার লাখ ২৫ হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে বলেন। তারা সেই টাকা কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে পরিশোধের জন্য চাপ দেন। প্রতারকদের পাঠানো উপহার সংগ্রহ না করলে আইনি জটিলতার ভয় দেখায় প্রতারক চক্রটি। ভুক্তভোগী একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে তাদের দেয়া বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তিন লাখ ৭৩ হাজার টাকা জমা দেন। একইভাবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে সারাদেশ থেকে দুই মাসের মধ্যে শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে এ ধরনের প্রতারণা করে আসছে। তাদের বাংলাদেশে (নাইজেরিয়ান) অবস্থানের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এই ধরনের প্রতারণা হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। এর আগেও বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার হয়েছে। এ ছাড়াও প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। মানুষ দুটো কারণে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। কেউ পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে আবার কেউ লোভের বশবর্তী হয়ে। রাতারাতি তাকে ধনী ও ক্ষমতাবান হতে হবে, এই স্বপ্ন তাকে পেয়ে বসে, বিভোর করে ফেলে। ফলে ওই ব্যক্তি নিষ্ঠুরতা অমানবিক ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়। এর পরিণতি কী হতে পারে ভেবেও দেখে না। এদের প্রতিহত করতে হবে যে কোনো উপায়ে। না হলে একদিকে যেমন ব্যক্তি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অন্যদিকে জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়বে। আমরা প্রত্যাশা করছি, এই প্রতারণার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। সরকারের পরিকল্পিত ও কঠোর উদ্যোগই কেবল পারে এই প্রতারণার অবসান ঘটাতে।