দুর্নীতি, দুঃশাসন ও বৈষম্য

অর্থনৈতিক কর্মচঞ্চলতা, উৎপাদন-দক্ষতা, সম্পদ সৃষ্টি ও মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সক্ষমতার সঙ্গে কর্ম পরিচালনা করতে হলে সম্পত্তির অধিকার ও চুক্তি আইনের যথাযথ ও সময়োপযোগী প্রয়োগ অতীব জরুরি। চুক্তি প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন উত্তম প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ, উত্তম প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও পদ্ধতি। আর এসবের জন্য প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও সুশাসন।

প্রকাশ | ২৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০

আবদুল আউয়াল মিন্টু
বিশ্বব্যাপী দুর্নীতিকে একটা দুষ্টক্ষত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথে দুর্নীতি যেমন সবচেয়ে ক্ষতিকর তেমনি সমাজ কল্যাণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে দুর্নীতি হলো এককভাবে সবচেয়ে বিপজ্জনক বাধা। সমাজের অনেক জটিলতার মতো দুর্নীতির সংজ্ঞা নির্ধারণও কঠিন। গত শতকের শুরুতে রবার্ট সি ব্রম্নকস (১৯১০) দুর্নীতির একটা সংজ্ঞা দেন। তার সংজ্ঞা অনুযায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে কাজ ঠিকমতো না করা বা কোনো স্বীকৃত কর্তব্য পালনে অবহেলা কিংবা কমবেশি সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে (নগদে বা সামগ্রীতে) সুবিধা হাসিলের মতলবে ক্ষমতার অনভিপ্রেত অনুশীলনকে 'দুর্নীতি' বোঝায়। তবে আধুনিক বিশ্বে দুর্নীতির সংজ্ঞায় সুনির্দিষ্টভাবে আরও কয়েকটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেমন- বিশ্বাস ভঙ্গ; সরকারিপর্যায়ে প্রতারণা (ড়ভভরপরধষ ষবাবষ ফবপবঢ়ঃরড়হ); পরিকল্পিত বা ইচ্ছাকৃতভাবে জনস্বার্থের ওপরে ব্যক্তির স্বার্থকে ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া; আইনের মারপঁ্যাচ খাটিয়ে বা আইনের যৌক্তিকতা দিয়ে দুর্নীতিমূলক কাজকে আড়াল করার চেষ্টা; উচ্চপদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের স্বজনপ্রীতি ও তোষণ; পোষকতা পদ্ধতির প্রাতিষ্ঠানীকরণ; সত্য ঘটনা গোপন করা কিংবা ঘটনার মিথ্যা উপস্থাপনা; অবৈধ সুবিধা বা লাভের জন্য যোগসাজশ; নির্বাহী কর্তৃত্বের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয় এড়িয়ে যাওয়া; রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার একতরফা অনুশীলন; এবং পরিকল্পিতভাবে প্রভাব খাটিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করা। এ ছাড়া একজন সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক প্রত্যাশিত কর্তব্যকর্ম পালন না করা বা ওই কাজে বাধা সৃষ্টি করা, অর্থের বিনিময়ে কাজ করার চেয়েও বড় দুর্নীতি। দুর্নীতির প্রভাব প্রতিক্রিয়াগুলো এক এক করে এভাবে বর্ণনা করা যায়: দুর্নীতি সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তা করে; সংগঠিত অপরাধের প্রসার ঘটায়; আইনের বিকৃতি ঘটায়; সমাজে প্রতিযোগিতা ও প্রতিযোগিতার প্রবণতা ক্ষুণ্ন করে; রাজনীতি ও ব্যবসা থেকে ভালো, সৎ ও যোগ্য লোকদের দূরে সরিয়ে দেয়; সম্পদের অসম ও বিষম বণ্টন ঘটায় এবং সামাজিক উন্নয়নে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করে; চোরাচালান ও কালোবাজার অর্থনীতির (ঁহফবৎমৎড়ঁহফ বপড়হড়সু) প্রসার ঘটায়। উৎপাদনশীল ও অনুৎপাদনশীল খাতের মধ্যকার সম্পর্কগত পার্থক্যের বিষয়টির বিকৃতভাবে উপস্থাপনা করে; সরকার, সরকারি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দেয় ও দেশে সুশাসনের পরিবর্তে কুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে; সঞ্চয়ের বিদেশগামী প্রবাহ (বিদেশে সম্পদ পাচার) বৃদ্ধি করে; ফলে জাতীয় স্তরে সঞ্চয় কমে যায়; দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমে যায়; অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সংস্কারে গুরুতর প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে; জাতীয় সংস্কৃতি, দৃষ্টিভঙ্গি ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায়; রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আস্থা কমায় এবং রাজনৈতিক সংঘাত ও অস্থিতিশীলতা বাড়ায়; পরিমাণগতভাবে সামাজিক মূল্যবোধ ও মূলধন হ্রাস করে; সুনাম, সমাজে সাধারণ মানুষের চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সততার চেয়ে সহজে টাকা বানানোর আকর্ষণ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে; এবং পরিশেষে, অবৈধ অর্থ আইনের চেয়ে বেশি সরব হয়ে ওঠে। টাকা হয়ে ওঠে প্রতিনিধিত্বশীল কর্তৃপক্ষের চেয়েও বেশি গুরুত্ববহ। এমনকি অবৈধ টাকা কর্তৃপক্ষের চেয়েও অনেক বেশি ওজনদার ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আমার ধারণা বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থা বিবেচনা করলে এ বিষয়গুলো সহজেই পাঠকের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। বর্তমান সময়ে দুর্নীতি আমাদের রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে সংক্রমিত দুরারোগ্য ক্যান্সারের মতো বিস্তার লাভ করছে যা থেকে নিস্তার লাভ করা খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সর্বত্র এ সমাজব্যাধি শক্ত শেকড় গেড়ে বসেছে। পরিতাপের বিষয় হলো- এই যে গুটিকয়েক ব্যক্তি ও দুই একটি সমাজ প্রতিষ্ঠান ছাড়া সুশীল সমাজের সদস্যরা কেউ প্রকাশ্যে এ কথা স্বীকার করছেন না যে আমাদের গোটা সমাজ অসম্ভব রকমের দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। আমরা এক মারাত্মক সামাজিক ব্যাধিতে ভুগছি। অনেক নামিদামি সংগঠন ও বুদ্ধিজীবী নামধারি সুশীল সমাজের সদস্যরা আজকাল মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। এটা বিস্ময়কর বলে মনে হয়। তাতে ধরে নেওয়া যায় যে এসব ব্যক্তি ও সমাজ প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজে দুর্নীতি ও অন্যায়ের সুবিধাভোগী। সুশীল সমাজের এসব সংগঠন ও সদস্যরা, সমাজের এই অমার্যাদাকর অবস্থার কাছে নতি স্বীকার করার ফলে বর্তমানে গুটিকয়েক দুর্নীতিবাজ লোকদের হাতে রাজনীতি ও ক্ষমতা, এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্য কুক্ষিগত হয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে আজকাল সাধারণ জনগণ এটাকে তাদের নিতান্ত নিয়তির ললাট লিখন হিসেবে এই সমাজব্যাধির কাছে নীরবে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। যতই কষ্টসাধ্য হোক, সমাজের এই দুষ্টক্ষত যদি অনতিবিলম্বে নিরাময় করা না হয় তাহলে আমাদের সমাজব্যবস্থা অচিরেই পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়বে। দুর্নীতির কারণে অকার্যকর সমাজে শাসনব্যবস্থা দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল শাসনব্যবস্থা একদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সুশাসনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, অন্যদিকে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে। তাতে দরিদ্রতার হার বেড়ে যায়। এসব একত্রে মিলেমিশে রাষ্ট্রের তাত্ত্বিক ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়। দেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকে না। সম্পদের যথাযথ সুষম বণ্টনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাতে সমাজে কালো টাকার দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে। পরিণতিতে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। তাছাড়া কালো টাকার প্রভাবে রাজনীতি ক্রমান্বয়ে কুলষিত হয়ে ওঠে। এ সুযোগে অবৈধ অর্থের বা কালো টাকার মালিকরা সংগঠিত অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। সমাজে দুর্নীতি ও কালো টাকার প্রভাব-প্রতিক্রিয়াগুলোকে এক এক করে এভাবে বর্ণনা করা যায় যেমন: দুর্নীতি- সম্পদের অবৈধ সঞ্চয় গড়ে তোলে; সংগঠিত অপরাধের প্রসার ঘটায়; আইনের বিকৃতি ঘটায়; সমাজে প্রতিযোগিতা ও প্রতিযোগিতার প্রবণতা ক্ষুণ্ন করে; রাজনীতি ও ব্যবসা থেকে ভালো, সৎ ও যোগ্যদের দূরে সরিয়ে দেয়; সম্পদের অসম ও বিষম বণ্টন ঘটায়; সামাজিক উন্নয়নে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করে; চোরাচালান ও কালোবাজার অর্থনীতির (ঁহফবৎমৎড়ঁহফ বপড়হড়সু) প্রসার ঘটে; উৎপাদনশীল ও অনুৎপাদনশীল খাতের মধ্যকার সম্পর্কগত পার্থক্যের বিষয়টি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে; সরকারকে দুর্বল করে দেয় ও দেশে দুঃসাশন বা কুশাসন প্রতিষ্ঠা করে; সঞ্চয়ের বিদেশগামীপ্রবাহ (বিদেশে সম্পদ পাচার) বৃদ্ধি করে, ফলে জাতীয় ও অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় কমে যায়; অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের উদ্দেশ্য সাধনে সংস্কার কার্যক্রমে গুরুতর প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে; জাতীয় সংস্কৃতি, দৃষ্টিভঙ্গি ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায়; রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আস্থা কমায় এবং রাজনৈতিক সংঘাত ও অস্থিতিশীলতা বাড়ায়; পরিণামে সামাজিক মূল্যবোধ ও মূলধন হ্রাস করে; সুনাম, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সততার চেয়ে সহজে টাকা বানানোর আকর্ষণ মানুষের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে; এবং অবৈধ অর্থ আইনের চেয়ে বেশি সরব হয়। টাকা হয়ে ওঠে প্রতিনিধিত্বশীল কর্তৃপক্ষের চেয়েও বেশি গুরুত্ববহ। এমনকি অবৈধ টাকার ক্ষমতা আইনগত কর্তৃপক্ষের চেয়েও অনেক বেশি ওজনদার ও গুরুত্বপূর্ণ (নামিদামি) হয়ে ওঠে। এসব থেকে পরিত্রাণের উপায় বের না করে যতই হাঁকডাক আর বিভ্রান্তিকর বড় বড় বুলি শোনানো হোক না কেন দেশে আর্থসামাজিক উন্নয়নে গতি আসবে না। অতএব, আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও দরিদ্রতা কমাতে হলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। সুশাসন ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন সুশাসন কেবল বাঞ্ছনীয়ই নয়, বরং আর্থসামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। কারণ সুশাসন বা শাসনের উচ্চমান রাষ্ট্রীয় সামর্থ্য গড়ে তোলে ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোকে শক্তিশালী করে। সেই সঙ্গে গড়ে ওঠে বিধিবিধান ও প্রতিষ্ঠান, সৃষ্ট হয় রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি লেনদেনের যথার্থ পরিচালনার একটা কাঠামো। বস্তুতপক্ষে, সুশাসন হলো জনগণের জীবনমান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের গতি দ্রম্নততর করার একটি যথাযথ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনযাত্রার মান ও তার উৎকর্ষ বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সুশাসন একদিকে নাগরিকদের আত্মমর্যাদার উপলব্ধিতে সমর্থন জোগায়, অন্যদিকে সমাজের আর্থসামাজিক রূপান্তরে সহায়তা করে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য সুশাসনের প্রয়োজনীয়তা ক্রমেই বাড়ছে। আজকে বাংলাদেশে যে সঙ্কট চলছে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের জীবনধারায় প্রতিফলিত। দেশের মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি ছাড়া আপামর জনগণের সঙ্গে কথা বললে বা তাদের জীবনমানের দিকে তাকালেই সহজে এটা বোঝা যায়। এ কারণে, আর্থসামাজিক উন্নয়নে সুশাসনভিত্তিক এক নতুন রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন অত্যাবশ্যক; যাতে বর্তমান সময়ের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সর্পিল গন্ডি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারি। সুশাসনের অঙ্গ-উপাদান নানা জন, নানা মত সুশাসনের সংজ্ঞা ও অঙ্গ-উপাদান নিয়ে নানা ধরনের মতামত আছে। তবে বিশ্বব্যাংক (১৯৯২) সুশাসনের একটা সংজ্ঞা দিয়েছে। এ সংজ্ঞানুযায়ী সুশাসন বলতে 'উন্নয়নের জন্য দেশের আর্থসামাজিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ক্ষমতার অনুশীলন' বোঝায়। আর সুশাসন 'সুষ্ঠু উন্নয়ন ব্যবস্থাপনারই সমার্থক।' বিশ্বব্যাংকের এই সংজ্ঞার বিস্তারিত বর্ণনায় শাসনের চারটি ক্ষেত্রের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রতিটি ক্ষেত্রে 'সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা' বলতে কি বোঝায় তারও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে। ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে- ক) সরকারি বা রাষ্ট্রীয় খাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা; খ) জবাবদিহিতা; গ) উন্নয়নের জন্য আইন কাঠামো ও সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ; ও ঘ) তথ্যপ্রবাহ ও স্বচ্ছতা। আরও উদারভাবে বলতে গেলে, বলিষ্ঠ ও ন্যায়ানুগ উন্নয়নের পৃষ্ঠপোষকতা করার লক্ষ্যে একটি সুষ্ঠু নীতিমালার মাধ্যমে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা ও সেই পরিবেশকে টেকসই করে অব্যাহতভাবে বজায় রাখাই হলো 'সুশাসন'। তাই সুষ্ঠু অর্থনৈতিক নীতিমালা সুশাসনের একটি অন্যতম জরুরি উপাদান (পড়সঢ়ড়হবহঃ)। একটা সুষ্ঠু নীতিমালার মধ্যে বাজারব্যবস্থা সাধারণত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবে এবং কোনো ব্যর্থতার ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা তৈরি করে বাজারব্যবস্থাকে সংশোধন করবে। এসব সুষ্ঠু নীতিমালা তৈরির ক্ষেত্রে সরকার তার অতীব গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক ভূমিকাটি যথাযথভাবে পালন করবে। যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক উন্নয়ন প্রশাসন (ঙউঅ) ১৯৯৩ সালে সুশাসনের চার অঙ্গ-উপাদান শনাক্ত করে। এগুলো হলো- ক) সরকারের সিদ্ধতা বা বৈধতা এ বিষয়টি অস্তিত্বশীল অংশীদারি প্রক্রিয়া ও শাসিতদের সম্মতি থাকার ওপর নির্ভরশীল; খ) রাজনীতিক ও আমলা সরকারের উভয় অঙ্গ-উপাদান তথা উভয় তরফের সিদ্ধান্ত প্রণয়নে স্বচ্ছতা ও কাজের পারস্পরিক জবাবদিহিতা; গ) যথোপযুক্ত নীতিমালা প্রণয়ন সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন, সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সেবাপ্রদানে সরকারের দক্ষতা ও যোগ্যতা; ঘ) মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বাধীনতা এবং ব্যক্তি অধিকার ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান। তা ছাড়া, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কার্যকলাপের একটা কাঠামো রচনা এবং সব ব্যক্তির অংশীদারিত্বে অধিকার প্রদান ও তাতে উৎসাহ জোগানো। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিক থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে সুশাসনের গুরুত্ব হিসেবে আনা হচ্ছে। সুশাসন এ কথাটি নানাজনের কাছে নানা অর্থ ও তাৎপর্য বহন করে। এ জন্য প্রত্যেকের কাছে সুশাসনকে বোধগম্য করে তুলতে এই পারিভাষিক শব্দটির বহু সংজ্ঞা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী সংজ্ঞাটি হচ্ছে- 'দক্ষতা বাড়াতে দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়াবলি এবং লভ্য সম্পদগুলোর যথার্থ ব্যবস্থাপনা'। সুশাসন উন্নয়ন প্রক্রিয়ার যথার্থ ব্যবস্থাপনার সঙ্গেও সম্পর্কিত। আর এই যথার্থ ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্র, জনসাধারণ, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতগুলোও সম্পর্কিত। যদিও সুশাসন শব্দটির অর্থ একেকজন একেকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে তবে মূল সারাংশ একই। সুশাসন বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, কয়েকটি বিষয়কে তুলে ধরে সুশাসনকে সম্ভবত এভাবে সংক্ষেপে বর্ণনা করা যায়। যেমন- প্রদেয় কর সংগৃহীত হয়ে সেই অর্থ প্রকৃতপক্ষেই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে। দুর্নীতির মাধ্যমে অংশবিশেষ সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কোষাগারে জমা হবে না। সংগৃহীত অর্থ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে যথাযথভাবে ব্যয়িত হবে; রাষ্ট্রীয় ক্রয় তথা উপকরণ সংগ্রহ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দক্ষ অর্থাৎ লুটপাট নয়; বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলগুলো রাজনৈতিক বিক্ষোভস্থল নয়, হতে হবে শান্তিপূর্ণ শিক্ষা ও বিদ্যাচর্চার কেন্দ্র; অধ্যাপক ও শিক্ষকরা হবেন সত্যিকারের শিক্ষাদাতা, রাজনীতিক বা রাজনৈতিক দলাদলির বিভাজন নয়। তারা হবেন উচ্চশিক্ষিত, যোগ্য, যথাযথ সনদের অধিকারী, পূর্ণকালীন শিক্ষাদান ও জ্ঞানচর্চায় অনুপ্রাণিত। তারা শুধু বেতন পাওয়া কিংবা শ্রেণিকক্ষের বাইরে প্রাইভেট পড়ানোর উদ্দেশ্য সাধনে নিয়োজিত থাকবেন না। শিক্ষাদান হবে তাদের পেশা ও নেশা- রাজনীতি নয়; গরিব লোকেরা স্বাস্থ্য স্থাপনা তথা সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মৌলিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও ওষুধপত্রের সুযোগ-সুবিধা পাবে। সরকার কর্তৃক বিনামূল্যে বিতরণ করা ওষুধপত্র গরিব লোকদের পয়সার বিনিময়ে খোলা বাজার থেকে কিনতে হয় না। জ্বালানি শিল্প সুনিয়ন্ত্রিত। গ্রাহকরা শুধু তাদের বিদু্যৎ ব্যবহারের জন্য যথাযথ মূল্য পরিশোধ করে। তাদের ভুতুড়ে বিলের পরিণতি ভোগ করতে হবে না; রপ্তানিকারকরা উচ্চতর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবেন, যাতে - ক) ব্যবসা-বাণিজ্যের নীতি-কৌশলগত বিষয়াদি পরিচালনা হবে উন্নততর; খ) জবরদস্তিমূলক অর্থ আদায় ছাড়াই আমদানি ও রপ্তানিকৃত পণ্য বন্দর (সমুদ্র ও স্থলবন্দর) হয়ে চলাচল করতে পারে; শিল্পের কর্ণধার ব্যক্তিরা অথবা শিল্পোদ্যোক্তারা হয়রানি, চাঁদাবাজি তথা জবরদস্তিমূলকভাবে অর্থ আদায়ের ঝামেলা থেকে আত্মরক্ষায় ব্যস্ত না থেকে তাদের নিজ নিজ ব্যবসায়ের প্রবৃদ্ধি ও সৎ মূলনীতির অনুশীলনে ব্যবসা পরিচালনায় মনোনিবেশ করতে পারেন; ব্যাংকাররা সত্যিকার বিনিয়োগের জন্য উত্তম ঋণ প্রদান করবে, যে ঋণের প্রভাবে প্রবৃদ্ধি বেড়ে যায়; যে ঋণ শেষ পর্যন্ত জাতীয় অর্থনীতির ওপর কুঋণের দায় হিসেবে চেপে বসে না; গরিব, ক্ষুদ্র ঋণগ্রহণকারীদের পাশাপাশি ধনী ঋণগ্রহীতারাও ঋণ পরিশোধ করবে; দেশের আইন জনস্বার্থে কাজ করবে। সমভাবে প্রয়োগ করা হবে। বিচার বিভাগ, পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের পেশাদারি দক্ষতা ও চারিত্রিক দৃঢ়তার সঙ্গে এসব আইন প্রয়োগ করার মাধ্যমে জনসাধারণের আস্থা অর্জন করবে; সমাজ ও অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা থাকবে; যাতে কঠোর পরিশ্রমী, সৎ ও একান্ত নিষ্ঠাবান ব্যক্তিরা তাদের আত্মোন্নয়নে সম্মিলিত প্রয়াস কাজে লাগিয়ে গৌরববোধ করতে পারে; জাতীয় সম্পদের অপচয় রোধ করা এবং সুযোগের সদ্ব্যবহার করে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা; রাজনৈতিক নেতারা মিথ্যা বক্তব্য দিলে বা ওয়াদা বরখেলাফ করলে তাদের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এরকম আরও অনেক বিষয় অবতারণা করা যায় যেগুলো সুশাসনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পর্কিত। বাস্তবিক অর্থে উলিস্নখিত বিষয়গুলো সুশাসন বলতে যা বোঝায় তার কিয়দংশ মাত্র। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন সুবিন্যস্ত, শক্তিশালী ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান এবং উপযোগী প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ। সুশাসন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় ব্যর্থতার মূলে রয়েছে দুর্নীতি ও দুঃশাসন। সেই সঙ্গে দুর্বল ও ঘুণে-ধরা প্রতিষ্ঠান, অনুপযোগী প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ ও দুর্বল জবাবদিহিতা। আর এই ব্যর্থতা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উভয় ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, এ দুর্বলতার উৎপত্তি প্রধানত অতিমাত্রায় কেন্দ্রায়িত রাজনীতিতে। তবে কার্যকর, পাল্টা প্রতিরোধক ও ভারসাম্যবিধায়ক ব্যবস্থার অনুপস্থিতিও এর কারণ। আর এসব মিলে যে রাজনীতি গড়ে উঠেছে তাতে নির্বাচনী খেলায় বিজয়ী পক্ষ সব কিছুই হাতিয়ে নেয়, আর বাকি সব পক্ষের জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। জাতীয় রাজনীতিতে বিজয়ী পক্ষের 'সবকিছু হাতিয়ে নেওয়ার প্রবণতা' ও তার নেতিবাচক পরিণতির প্রভাব-প্রতিক্রিয়া কমানোর জন্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকারগুলোকে শক্তিশালী করলে স্থানীয়পর্যায়ে একটা ভারসাম্য গড়ে উঠত। কিন্তু সেটাও অনুপস্থিত। যা ছিল সেটাও ভেঙে-চুরে চুরমার করে দেওয়া হচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে এখন মুষ্টিমেয় রাজনীতিক নেতার হাতে অতিমাত্রায় ভারসাম্যবিধায়কহীন ক্ষমতা কেন্দ্রায়িত। কোথায়ও জবাবদিহিতা নেই। শাসনের মান অতিমাত্রায় নিচু। বলা যায় দুঃশাসন বা কুশাসন। পরিণতিতে দ্রম্নতগতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন ও দারিদ্র্য হ্রাসে গতিশীলতা হারিয়ে গেছে। শাসনে দুরবস্থা জাতীয় অর্থনীতি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুরে কুরে খাচ্ছে। বাংলাদেশকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অবনতির অতল গহ্বরে, আর দেশের কঠোর শ্রমজীবী মানুষকে তাদের সম্ভাবনা ও সুযোগ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তাদের প্রাপ্য সামাজিক ন্যায়বিচার, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার পরিবেশ বিপন্ন করে দিয়েছে। সবাই কেমন যেন অসহায় ও নিরুপায় অবস্থা মেনে নিয়ে দিনাতিপাত করছে। দুর্নীতি এখন বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এক বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই দুর্নীতির কারণেই ক্ষমতাবান লোকেরা দুর্বলের সম্পদ চুরি করছে, এমনকি সৎ নাগরিকদেরও তাদের এ ঘৃণ্য খেলায় জোর করে টেনে আনছে। সেই অতিকথার মোহসৃষ্টিকারী প্রকান্ড অজগরের মতো তারা (মুষ্ঠিমেয় কিছুসংখ্যক ক্ষমতাধর ব্যক্তি-গোষ্ঠী) গোটা সমাজকে ফাঁদে ফেলে তাদের নেতিবাচক মূল্যবোধকে বাংলাদেশের আপামর জনগণের দৈনন্দিন জীবনের সচরাচর রীতি হিসেবে চাপিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক একটা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত সামান্যই ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। রাষ্ট্রীয় খাতে সুশাসনের অভাব এমন একপর্যায়ে উপনীত হয়েছে যেখানে বেসরকারি খাতের অনেকেই টুক-টাক ব্যবসায়ী নামধারী রাজনীতিকদের সঙ্গে একত্রে মিলেমিশে জনসাধারণের আস্থার অপব্যবহার করে চলেছে অপ্রতিরোধ্যভাবে। এতে একদিকে বেসরকারি খাতের ওপর অপবাদ জুটছে, অন্যদিকে জনসাধারণের মনে বেসরকারি খাতের ওপর একটা নেতিবাচক তাৎপর্য ঘনীভূত হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন দুর্নীতিগ্রস্ত নিকৃষ্ট শাসনে আক্রান্ত। জাতীয় আর্থিক ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতি বিপজ্জনক রকমের দুর্বল হয়ে পড়েছে। মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি ক্রমেই বিপরীতমুখী হয়ে উঠছে। এসব কারণে বাংলাদেশে উন্নয়নে যারা অংশীদার, সহযোগী বা বহিঃঝুঁকিগ্রাহক তারা সবাই এখন বাংলাদেশের সার্বভৌম জনসাধারণের মতোই হতাশায় ভুগছেন। অদূর ভবিষ্যতে এসবের সঙ্গে যোগ হবে কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাব। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে দুর্নীতি কমবে, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সমৃদ্ধ হবে। প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ জনগণের জন্য সহায়ক হবে। তাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুফল আরও ন্যায়সঙ্গতভাবে ভাগাভাগি হবে। এসব অর্জন করতে হলে প্রয়োজন হবে এমন নীতি-কৌশল প্রণয়ন ও কার্যসম্পাদন, যার মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষ, তারা যে দলেরই সমর্থক হোক, সরকার বা বিরোধী দল অথবা বিত্তবান ও দরিদ্র সব তরফেই পরিবর্তন আসবে ও সবার ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। স্থিতাবস্থা (ঝঃধঃঁং য়ঁড়) রক্ষা করার পক্ষপাতী কায়েমি স্বার্থধারীদের জন্য পরিবর্তনের এ বাস্তবতা এক বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কায়েমি স্বার্থধারী মহল হতে পারে ক্ষমতাধর, হতে পারে শক্তিশালী ও বিত্তবান, কিন্তু তারা দেশের সাধারণ জনগণ, যারা নিত্যনিয়ত ন্যায্য অংশীদারিত্বের স্বপ্ন দেখে- যারা সুশাসন চায়, তাদের চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, অথবা শক্তিশালীও নয়। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, দুর্নীতি সাধারণত এক ধরনের পশ্চাদমুখী কর (ৎবমৎবংংরাব :ধী) হিসেবে কাজ করে। গরিব মানুষ তার আয়ের একটা বিরাট ও অসমানুপাতিক অংশ প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়ার জন্য ঘুষ হিসেবে দিতে বাধ্য হয়। সরকারি ও সমাজ প্রতিষ্ঠানগুলো, কোনো না কোনোভাবে আর্থসামাজিক উন্নয়নে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থা, যেমন- বিনিয়োগে অর্থ সংস্থান, বেসরকারি খাতের বিকাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি ও পরিবেশের মতো পণ্য ও সেবা প্রদানের বহু খাতের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। সবচেয়ে বড় কথা, যাদের আর্থিক অবস্থা সবচেয়ে খারাপ, যারা সবচেয়ে বেশি বিপন্ন, অসহায় ও দুর্বল বিশেষ করে, স্বল্পশিক্ষিত এবং শহর ও পলস্নী জনপদের দরিদ্র লোকগুলোকেই সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ অবস্থা থেকে কেবল তখনই উত্তরণ হতে পারে যখন বাংলাদেশ তার বর্তমান শাসনব্যবস্থা বা দুঃশাসনকে সুশাসনে রূপান্তরিত করতে পারবে এবং শাসনের ব্যর্থতার কারণগুলোকে দূর করতে পারবে। আমি দুর্নীতি ও শাসনের যে ব্যর্থতার কথাগুলো লিখেছি তার প্রধান কারণ হলো, ক্ষমতার মাত্রাতিরিক্ত কেন্দ্রায়ন, মুষ্টিমেয় লোকের হাতে সব ক্ষমতা, দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্রের অতিরিক্ত রাজনৈতিকীকরণের ফলে মেধা ও পেশাদারি মানের অভাব। বিগত দশকগুলোতে বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রে জনবলের পরিমাণ বেড়েছে জ্যামিতিক হারে। মেধা ও পেশাদারিত্বের উৎকর্ষ বেড়েছে মাত্র গাণিতিক হারে। বাংলাদেশের আরও একটি প্রধান সমস্যা হলো সম্পত্তির অধিকার ও চুক্তি আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বলবৎকরণে ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার কারণ হলো বিরূপ প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশে রাজনৈতিকীকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমান্বয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত, পক্ষপাতদুষ্ট ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক কর্মচঞ্চলতা, উৎপাদন-দক্ষতা, সম্পদ সৃষ্টি ও মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সক্ষমতার সঙ্গে কর্ম পরিচালনা করতে হলে সম্পত্তির অধিকার ও চুক্তি আইনের যথাযথ ও সময়োপযোগী প্রয়োগ অতীব জরুরি। চুক্তি প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন উত্তম প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ, উত্তম প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও পদ্ধতি। আর এসবের জন্য প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও সুশাসন। আবদুল আউয়াল মিন্টু : সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই