সুষ্ঠু বিচার ও সচেতনতাই পারে বিকৃত মানসিকতা থেকে মুক্তি দিতে

বিকৃত যৌনাচার সমাজে কখনো কাম্য নয়। বিকৃত মানসিকতার লোকদের রুখে দিতে চাই সুষ্ঠু আইন ও আইনের সুষ্ঠু বিচার।

প্রকাশ | ২৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০

ইকবাল হাসান
বালককাম একবিংশ শতাব্দীর সব সমাজেই বিকৃত যৌনাচার। বর্তমান সমাজে নারীর পাশাপাশি ছোট ছেলে অর্থাৎ বালকের প্রতিও যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। শিশুরা জলের মতো। তাদের যেরকম শিক্ষা দেওয়া হয় কিংবা পায় তারা সেরকমভাবেই বেড়ে ওঠে। তাদের সঙ্গে এরকম আচরণের ফলে অনেকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। সাধারণ দশটা ছেলেদের মতো সে তার শৈশব কাটাতে পারে না। দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে বেড়ায় অতীত। সামনের দিনেও মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকে অন্যদের চেয়ে। বালক তথা ছেলেদের সঙ্গে এরকম ঘৃণিত ঘটনা বেশির ভাগ ঘটে থাকে মাদ্রাসাগুলোতে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যেখানে মুসলমান সেখানে এরকম ঘটনা সবার জন্য অস্বস্তিকর। পেডেরাস্টি শব্দটির অর্থ বালকপ্রীতি বা বালককাম। এই বালককামের প্রচলন এই দেশে বহু আগে থেকেই। প্রায় দেড়শ বছর আগের বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলায় বৈষ্ণব আখড়ায় ঘেঁটু গান নামে নতুন গ্রামীণ সংগীতধারা সৃষ্টি হয়েছিল।  নতুন এই সংগীত ধারাতে কিশোররা মেয়েদের পোশাকে নাচার চল প্রচলিত হয়। গ্রাম্যাঞ্চলের অতি জনপ্রিয় নতুন সংগীতরীতিতে নারী বেশধারী কিশোরদের উপস্থিতির কারণেই এর মধ্যে অশ্লীলতা ঢুকে পড়ে। সেই সময়ের জোতদাররা এরকম কিশোরদের পাওয়ার জন্য লালায়িত হতে থাকে। ঘেঁটু পুত্রের চল এখন না থাকলেও কিশোরদের প্রতি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের যৌনতার বিষয়টি এখনো আছে। বেসরকারি তথ্য সূত্র মতে, ২০১৯-এর মে মাস পর্যন্ত প্রায় ২৩৩টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৬টি ছেলে শিশু। ছয়টি ছেলে শিশুর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে; কিন্তু এর বাইরেও অনেক কিছুই রয়ে গেছে অধরা। অপরাধীর মাধ্যমে বিভিন্ন ভয়-ভীতি বা হুমকির শিকার হয়ে ছেলেশিশুরা যৌন হয়রানি বা নির্যাতনের অভিযোগ গোপন করে। এ ছাড়া ধর্ষণকে সাধারণভাবে শুধু নারীর বিরুদ্ধে হওয়া যৌন অপরাধ মনে করার পেছনে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও দায়ী। ছেলেশিশুদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিকৃত যৌনাচারগুলো ঘটে থাকে অনেকাংশে আপনজন দ্বারা। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় মাদ্রাসার হুজুর কর্তৃক ছাত্র ধর্ষণের ঘটনা উঠে এসেছে। প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনাই সমাজের জন্য ন্যক্কারজনক ঘটনা। এরকম ঘৃণিত কাজের জন্য দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে শাস্তির আনা প্রয়োজন; কিন্তু আমরা মাদ্রাসায় হুজুর কর্তৃক সংগঠিত এরকম কাজের পিছনের ব্যাপারগুলো কি ভেবে দেখেছি? ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত মাদ্রাসার প্রকরণগুলো হলো- ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, দাখিল মাদ্রাসা, আলিম মাদ্রাসা, ফাজিল মাদ্রাসা, কামিল মাদ্রাসা, হাফিজিয়া মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসা।  হুজুর কর্তৃক ছাত্রের সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারগুলো বেশি ঘটে থাকে কওমি মাদ্রাসায়। এসব মাদ্রাসা অনেকাংশে পরিচালিত হয় বেসরকারিভাবে। অর্থাৎ জনগণের দানের টাকায় এসব মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতি বছর বিশালসংখ?্যক ছাত্র কওমি থেকে বের হয়; কিন্তু সেই তুলনায় চাকরি থাকে সেই মসজিদের ইমামতি, বাচ্চাদের আরবি পড়ানো ইত্যাদি। এসব থেকে খুব বেশি আয় না হলেও নামাজ পড়াতে কিংবা বাচ্চাদের পড়াতে দেরি হলে সাধারণ মুসলিস্নরা নানান কথা শোনায়। অনেক সময় চাকরি চলে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এই ক্ষেত্রে অতি অল্প টাকায় সংসার চালানোর জন্য তার পরিবারকে দূরে কোথাও রাখতে হয়। এর ফলে, হুজুর কিংবা মাদ্রাসার ওস্তাদদের স্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক বজায় থাকে না। এমনকি তারা পরিবারের সঙ্গে দেখা করতেও যেতে পারে না চাকরি হারানোর ভয়ে। এর ফলে তাদের মনে ধীরে ধীরে বিকৃত মানসিকতার জন্ম হয়। তাদের স্বাভাবিক যৌন প্রয়োজন না মিটায় সেটা অস্বাভাবিকভাবে মিটায় তারা। বিকৃত যৌনাচার সমাজে কখনো কাম্য নয়। বিকৃত মানসিকতার লোকদের রুখে দিতে চাই সুষ্ঠু আইন ও আইনের সুষ্ঠু বিচার। এই বিকৃত মানসিকতা দূর করতে যেসব হুজুর আমাদের নামাজ পড়ায় কিংবা বাচ্চাদের ওস্তাদ হিসেবে আছে তাদের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল করা উচিত। তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান, অধিক কর্মসংস্থান ও পর্যাপ্ত ছুটির ব্যবস্থা করা উচিত। এ ছাড়া বাচ্চাদের শেখানো উচিত কোনটা ভালো স্পর্শ আর কোনটা খারাপ স্পর্শ। সর্বোপরি, প্রত্যেককে প্রত্যেকের জায়গা থেকে সচেতন থাকলেই এ ধরনের বিকৃত মানসিকতা থেকে মুক্তি মিলবে। ইকবাল হাসান : কলাম লেখক