পাঠক মত

অপার সম্ভাবনার পর্যটনশিল্প

প্রকাশ | ২৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অপার সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি বাংলাদেশ। প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যের যেন অভাবই নেই এই সোনার বাংলায়। এই বাংলাদেশেই রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। যার দীর্ঘ ১২০ কিলোমিটারের ভিতর কাদার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। যা কক্সবাজারকে দিয়েছে বিশ্বের অন্যসব সমুদ্র সৈকতের থেকে অনন্য তাৎপর্যতা। বাংলাদেশেই রয়েছে বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। যেখানে জীববৈচিত্র্য সুন্দরবনকে করেছে অনন্য। সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত শত শাখা নদীতে ঘেরা এই বনভূমিটিতে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণসহ নানা ধরনের পশুপাখি ও হরেক রকমের গাছ-গাছালি। যা এই সুন্দরবনকে দেশ ও দেশের বাইরের মানুষের কাছে যে কোনো পর্যটন কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্ররূপে উপস্থাপন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নামে পরিচিত রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এই তিনটি জেলার সৌন্দর্য একবার দেখলে চোখের পাতায় লেগে থাকবে সারাজীবন। সুউচ্চ পাহাড়ের গায়ে সবুজের সঙ্গে মেঘের খেলা দেখে মনে হবে যেন হারিয়ে যাই মেঘের মধ্যে। বর্ষায় তো ঠিক অনন্য হয়ে যায় অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ভ্রমণপিপাসুদের কাছে। সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা যেখানে দেখা যায় সূর্যোদয়ের ও সূর্যাস্তের অপরূপ সৌন্দর্য। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আরেক নাম বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল। উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ চা বাগান 'মালনীছড়া'। জাফলং যা দেশের সৌন্দর্যের রানী নামে খ্যাত, বিছানকান্দির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, স্বচ্ছ পানির লালাখাল, সুউচ্চ পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনা সাথে হাকালুকি হাওর। হাওরের কথা এলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিকলী হাওরের বুকের উপর দিয়ে যাওয়া সেই রাস্তায় ছুটে চলা। ৭ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর জলাভূমিতে ৪০০-র বেশি হাওর নিয়ে এই হাওরাঞ্চল গঠিত। যা বর্ষাকালে ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে প্রথম পছন্দের জায়গা হয়ে যায়। বাংলাদেশের এমন নৈসর্গিক সৌন্দর্য বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। এই সৌন্দর্যগুলোই অপার সম্ভাবনার পর্যটনশিল্পকে ঢেলে সাজানোর কথা বলছে। দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের পর্যটনশিল্পের চেহারা পাল্টে গিয়েছে। ২০০০ সালে দেশে পর্যটকসংখ্যা যেখানে ছিল ৩-৫ লাখ ২০১২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ লাখের মতো। ২০১৮-তে যা ৮৫-৯০ লাখে এখন কয়েক কোটিতে দাঁড়িয়েছে দেশের পর্যটকের সংখ্যা। শুধু এ দেশে নয়- বিশ্বব্যাপী বেড়েছে পর্যটনশিল্পের প্রসার। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড টু্যরিজম কাউন্সিলের (ডঞঞঈ) তথ্যমতে বিগত এক দশকে (২০০৮-২০১৮) বিশ্বের পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৫ শতাংশের উপরে। ব্যয় করছে বিলিয়ন ডলার যা সমৃদ্ধ করছে বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতি। এই তুলনা অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। অনেক দেশের অর্থনীতি অনেক বড় অংশ পর্যটনশিল্পকেন্দ্রিক। সিঙ্গাপুরে জাতীয় আয়ের ৭৫, তাইওয়ানের ৬৫, হংকংয়ের ৫৫, ফিলিপাইনের ৫০ আর থাইল্যান্ডের ৩০ শতাংশ পর্যটনশিল্পের অবদান। মালদ্বীপের জাতীয় আয়ের অধিকাংশই আসে এই পর্যটনশিল্প থেকে মালয়েশিয়ার জিডিপির ৭% আসে এই শিল্প থেকে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের এই খাতের আয় অনেক কম। ভারতের আয় ১০ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলারের উপরে, মালদ্বীপে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের উপরে, শ্রীলংকায় ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের উপরে, নেপালে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার সেখানে বাংলাদেশের আয় ৭৫ মিলিয়ন ডলারের মতো। তবে আশার কথা হচ্ছে (ডঞঞঈ) এর তথ্যমতে ২০২০-এর পর পর্যটন সংখ্যা ২০০ কোটির মতো হবে যার ৭৫%ই এশিয়ার দেশগুলোতে ভ্রমণ করবে। তাই বাংলাদেশের প্রথম কাজ হবে এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে অর্থনীতির চাকাকে বেগবান করা। পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবহণ, হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, এয়ারলাইন্স ও অন্যান্য সেক্টর থেকে অন্যদেশের মতো বাংলাদেশও অনেক রাজস্ব আয় করতে পারবে। বাড়বে জীবনযাত্রার মান, কমবে বেকারত্ব। এর জন্য পর্যটনশিল্পটির জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এই অপার সম্ভাবনার শিল্পটিতে। সঙ্গে নিতে হবে কিছু পদক্ষেপ যা পাল্টে দেবে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ। তার মধ্য অন্যতম কিছু পদক্ষেপ হচ্ছে- পর্যটনসমৃদ্ধ এলাকাগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন, বিমানবন্দর, নৌবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন করা, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এর জন্য পর্যটক পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, বিদেশি পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক গাইডের ব্যবস্থা, পর্যটকদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা পর্যটন মেলা করা এবং দক্ষ মানবশক্তি নিয়োগ করা যাদের হাত ধরেই বাস্তবায়ন হবে এসব যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে প্রচারণায়। প্রচারণার মাধ্যমে পর্যটকদের মধ্যে দেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্যগুলো তুলে ধরতে হবে। দেশ ও দেশের বাইরের মানুষের কাছে দেশের সৌন্দর্য তুলে ধরে জানিয়ে দেওয়া যাবে কতটা অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। রেজুয়ান রিজভী শিক্ষার্থী, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সু্যরেন্স বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়