স্বেচ্ছাশ্রমের নিদর্শন দেখতে যদি চাও বঙ্গবন্ধু সড়ক বেয়ে নিচ্‌ তালিমপুর যাও

প্রকাশ | ২৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
উত্তরবঙ্গের শস্য ভান্ডারখ্যাত নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলাবাসী হিসেবে আমরা যতটা গর্বিত, ঠিক ততটাই আমরা উপেক্ষিত বঞ্চিত একই উপজেলার একডালা ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত নিচ্‌ তালিমপুর গ্রামের অধিবাসী হিসেবে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, আমাদের উপজেলায় এমন একটি গ্রামও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে গ্রামে যাতায়াতের উপযোগী এক বা একাধিক পাকা সড়ক নেই। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শুধু আমাদের নিচ্‌ তালিমপুর গ্রামটিই। আমাদের গ্রাম থেকে পাকা সড়কের দূরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটারের মতো। আনুমানিক এক/দেড় যুগ আগে গ্রামটি থেকে পাকা সড়ক পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য প্রায় দেড় কিলোমিটার একটি মাটির সড়ক নির্মিত হলেও আজ পর্যন্ত কেউ সড়কটি সংস্কারে এগিয়ে আসেনি। অথচ এলাকার সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউপি মেম্বার এমনকি সরকারদলীয় স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিচ্‌ তালিমপুর গ্রামবাসীর সুগভীর সম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। কিন্তু কি এক অজানা কারণে গ্রামবাসীর চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি চলাচল উপযোগী করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের সবাই উদাসীন। বর্তমানে গ্রামটিতে কেউ অসুস্থ হলে তাকে কাঁধে করে নিয়ে দেড় কিলোমিটার দূরে পাকা সড়কে নিতে হয়। আবার গ্রামের কেউ অন্যত্র মারা গেলে তার লাশ কাঁধে করে দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গ্রামে এনে দাফন করতে হয়। গ্রামটির শিক্ষার্থীরা বছরের প্রায় অর্ধেক সময় রাস্তত্মা সংকটের কারণে বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। চলাচল উপযোগী একটি রাস্তার অভাবে ওই গ্রামের কৃষকদের উৎপাদিত বার্ষিক প্রায় ১৫,০০০ মণ ধান মণপ্রতি অন্তত বাজারদরের চেয়ে ৬০-৭০ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হয়। অন্যদিকে কৃষি উপকরণ যেমন সার, বীজ, তেল ইত্যাদির চেয়ে তুলনামূলক বেশি খরচ করতে হয় গ্রামবাসীকে। এমন অবস্থায় নিচ্‌ তালিমপুর গ্রামবাসী এবং গ্রামটির সঙ্গে লাগোয়া বিষ্ণুপুর গ্রামের অধিবাসীরা সম্মিলিতভাবে ইতিমধ্যেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত ধান, চাল, হাঁস-মুরগি এমনকি মা-বোনদের দেওয়া হাঁস-মুরগির ডিম বিক্রির টাকা এবং সেই সঙ্গে গ্রামবাসীর কায়িক পরিশ্রমে দেড় কিলোমিটার রাস্তাটি স্ব্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নির্মাণ করে গ্রামবাসীরা স্ব্বেচ্ছাশ্রমের এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা স্ব্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নির্মিত এই সড়কটি গ্রামবাসীরা সর্বসম্মতি ক্রমে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে সড়কটির নামকরণ করেছেন বঙ্গবন্ধু সড়ক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আজীবন এ পদেশের শোষিত, বঞ্চিত কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পিতার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে দেশে-বিদেশে সর্বত্রই সমাদৃত। সুতরাং সংগত কারণেই বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সুষম উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে অত্র এলাকার সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতাকর্মী এবং স্থানীয় প্রশাসনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমাদের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বঙ্গবন্ধু সড়কটি আমাদের এই অজপাড়াগাঁয়ে সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা বন্যাবিধৌত পলিস্নমায়ের আঁচলে সযত্নে লালিত হবে আমাদের তথা অত্র এলাকাবাসীর প্রত্যাশা এতটুকুই। গ্রামবাসীর পক্ষে কলাম লেখক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম