জাল টাকার বিস্তার রোধ করতে হবে

প্রকাশ | ২৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রতিবারই কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে জাল টাকার বিস্তার বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি এমনটি আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে পশুর হাটে নগদ লেনদেনকে কেন্দ্র করে অপরাধীদের তৎপরতা বেড়ে যায়। চলে জাল টাকার ছড়াছড়ি। কোরবানির পশুর হাটে নগদ লেনদেনকে কেন্দ্র করে অপরাধীদের তৎপরতা ঠেকাতে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও রাজধানীসহ দেশের সব জেলা-উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পশুর হাটে থাকবে জাল নোট শনাক্তকরণ বুথ। ঈদের আগের রাত পর্যন্ত এসব বুথ থেকে বিনামূল্যে জাল নোট শনাক্তের সেবা দেবে ব্যাংকগুলো। মহামারি করোনাভাইরাসের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে এবার যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব বুথ স্থাপন করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে একটা নেতিবাচক দিক হচ্ছে, মুদ্রা জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতরা বেশ 'অভিজ্ঞ' এবং তারা গ্রেপ্তার হলে আইনের ফাঁক-ফোকরে জামিন নিয়ে বেরিয়ে একই কাজে ফের সম্পৃক্ত হয়। তাদের স্বপ্ন রাতারাতি বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, 'যাদের আমরা গ্রেপ্তার করছি, তাদের অতীত ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে আগেও বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়েছে, তারপর জামিনে বেরিয়ে তারা আবার একই কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছে।' এতে বোঝা যায় বিদ্যমান আইন শক্তিশালী নয়। কারণ মুদ্রা জাল করার সঙ্গে জড়িত অধিকাংশই জামিন বেরিয়ে আসছে। এটা ভালো খবর নয়। জাল মুদ্রার কারবারিদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা হলেও অপরাধীদের অধিকাংশই কেন খালাস পেয়ে যায় সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বিশেষ ক্ষমতা আইনের এবং দন্ডবিধির কয়েকটি ধারায় জাল নোট তৈরি, সরবরাহ, ক্রয়-বিক্রয়সহ সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়ে থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আসামিরা খালাস পেয়ে যায়, কারণ সাক্ষীর অভাব। যে এলাকা থেকে জাল নোটের কারবারিকে ধরা হয়, সেই এলাকায় স্থানীয় কাউকে যদি সাক্ষী করা হয়, দেখা যায় সেই সাক্ষী দুই-একবার আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসার পর পরবর্তী সময়ে আর আসেন না। ফলে সাক্ষীর অভাবে আসামি খালাস পেয়ে যায়। এটা আইনের দুর্বলতার লক্ষণ বলে প্রতীয়মান হয়। মুদ্রা জালকরণ, প্রস্তুত, ক্রয়-বিক্রয়সহ সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও দন্ডবিধি কয়েকটি ধারায় মামলা করা হলেও পুরনো আইনের 'দুর্বল ধারার' কারণে অপরাধীরা বেরিয়ে যায় বলে সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য। আমরাও তাই মনে করি। এই সীমাবদ্ধতার কারণে এবং বিদ্যমান পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়া মতামতের গ্রহণের জন্য গত ৯ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। 'জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ আইন- ২০২০' খসড়ায় মুদ্রা জালকরণ, ক্রয়-বিক্রয়সহ ১৪ ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার দায়ে সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদন্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড এবং সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন বা এক কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। পুরাতন আইনে জাল মুদ্রার কারবারি ও সংশ্লিষ্টদের বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে যাতে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে আসামিরা বেরিয়ে যেতে না পারে সে জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এবারের ঈদে ও পশুর হাটে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ,র্ যাব ও আনসার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। নোট যাচাইকালে জাল নোট ধরা পড়লে সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই নির্দেশনা মেনে চলা উচিত। আমরা এও মনে করি, এখন নতুন যে আইন হচ্ছে সেই আইনে বিচারের পদ্ধতি যেন সহজ হয়। তিন মাসের মধ্যে এসব অপরাধের বিচার সম্পন্ন করতে পারলে অপরাধীরা সাজা পাবে এবং এই অপরাধ কমে আসবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরিকল্পিত ও কঠোর উদ্যোগই কেবল পারে দেশ থেকে জাল টাকার বিস্তার রোধ করতে।