বন্যা পরিস্থিতি

ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একদিকে করোনার সংক্রমণে পুরো বিশ্ব বিপর্যস্ত, দেশেও বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা; অন্যদিকে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগও বাড়ছে। দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল মিলিয়ে অন্তত ১৮ জেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল টানা তিন সপ্তাহ ধরে বানের জলে ভাসছে। স্বাভাবিকভাবেই বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় চরম দুর্ভোগে রয়েছে এসব এলাকার মানুষ। একই সঙ্গে প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে এমনটিও জানা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি অত্যন্ত ধীরে কমায় পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে এর পরিপ্রেক্ষিতে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করা। বলা দরকার, এর আগে টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। আমরা মনে করি, যখন বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং মানুষের ভোগান্তি-দুর্ভোগ বাড়ছে- তখন এই অবস্থা নিশ্চিতভাবেই অত্যন্ত উদ্বেগের। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জানিয়েছেন, চলমান বন্যায় দেশের অন্তত ৩১ শতাংশ নিম্নাঞ্চল ইতিমধ্যে পস্নাবিত হয়েছে। এ ছাড়া তথ্য মতে জানা গেছে, শনিবার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে, আর তাতে আগামী কয়েক দিনে পস্নাবিত এলাকা আরও বাড়বে এমন আশঙ্কাও উঠে এসেছে। উলেস্নখ্য, বন্যা এবার দীর্ঘায়িত হচ্ছে আবার এটাও জানা যাচ্ছে, কোথাও দ্বিতীয় দফা চলছে, কোথাও তৃতীয় দফা বন্যা শুরু হয়েছে। আমরা মনে করি, যখন অন্তত তিন সপ্তাহের বেশি টানা দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে বানভাসিরা- তখন তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের জীবনের বিপর্যস্ত পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমলে নেওয়া দরকার, দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, এক মাসের মধ্যে তিন দফায় দেশের ৩১টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে; ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। সঙ্গত কারণেই আমরা বলতে চাই, বন্যার স্থায়িত্ব বেড়ে যাওয়ায় যেমন মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে- তেমিন দীর্ঘ সময় বন্যা থাকলে বাঁধ ধসের আশঙ্কাও থাকে। এ ছাড়া রোগের প্রাদুর্ভাবও বাড়ে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ যেমন দুর্ভোগে পড়েছে তেমনি ভুগছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে। গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি হয়ে মহাবিপাকে পড়েছে বন্যার্ত মানুষ। অনেক জায়গায় নষ্ট হয়ে গেছে খেতের ফসল। বানের পানির সঙ্গে কোথাও কোথাও পালস্না দিয়ে বাড়ছে নদীভাঙনও এমনটিও জানা গেছে। নদীভাঙনের শিকার হয়ে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়েছে অনেক পরিবার। স্যানিটেশন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে দুর্গত এলাকায়। আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে বন্যা পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সৃষ্ট সংকট নিরসনে কাজ করতে হবে। মনে রাখা দরকার, বিশুদ্ধ পানির সংকট সৃষ্টি হলে পানিবাহিত রোগ বাড়বে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। ফলে এই বিষয়টি সামনে রেখেও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একদিকে করোনা পরিস্থিতিতে কঠিন সময় অতিক্রম করতে হচ্ছে, আবার এর মধ্যে বন্যার অবনতির বিষয়টি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। এর আগে এমনটিও খবরে প্রকাশ পেয়েছিল, সরকারের পক্ষ থেকে কোথাও কোথাও ত্রাণ দেওয়া হলেও সেটা প্রয়োজনের তুলনায় কম। ফলে এই বিষয়টিও ভাবতে হবে সংশ্লিষ্টদের। পর্যাপ্ত ত্রাণ নিশ্চিত করা, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা জরুরি যা আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বিভিন্ন সময়েই ত্রাণসহ নানা রকম অব্যস্থাপনার অভিযোগ এসেছে। ফলে এবারে কঠোর তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ বন্যায় ক্ষত্রিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের বিষয়টি ভাবতে হবে। সুষ্ঠুভাবে এবং পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে। বলা দরকার, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতি বছরই বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই, কিন্তু প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। সঙ্গত কারণেই বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগ ও সার্বিক চিত্র আমলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হোক এমনটি কাম্য।