পবিত্র হজ সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পালিত হোক

প্রকাশ | ৩০ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আজ পবিত্র হজ। প্রতিবছর পবিত্র হজ পালনের জন্য সারা বিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান সৌদি আরবে যান। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। জানা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৌদি আরবে সীমিত পরিসরে এবারের হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। বুধবার থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক হজে ১০ হাজার লোক উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জানা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ সৌদি নাগরিক ও ৭০ শতাংশ সৌদি প্রবাসী। উলেস্নখ্য, প্রতিবছর কোরবানির ঈদের সময় ২৫ লাখ মুসলমানের অংশগ্রহণে সৌদি আরবে পালিত হয় ইসলাম ধর্মের অন্যতম 'ফরজ' হজ। উলেস্নখ্য, পবিত্র হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। আর্থিকভাবে সমর্থ ও শারীরিকভাবে সক্ষম পুরুষ ও নারীর জন্য হজ ফরজ। আরবি 'হজ' শব্দের অর্থ ও মর্ম খুবই ব্যাপক এবং বিস্তৃত। শব্দার্থের দিক দিয়ে হজ হলো, কোনো কাজের ইচ্ছা করা বা দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা। বৈয়াকরণ খলীলের ভাষায়, হজ অর্থ কোনো মহৎ ও বিরাট কাজের জন্য বারবার ইচ্ছা ও সংকল্প করা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় হজ হলো, আলস্নাহর ঘরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কতকগুলো বিশেষ ও নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে আলস্নাহর ঘরের জিয়ারতের সংকল্প করা। বলাই বাহুল্য, সুপ্রাচীন কাল থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এর সঙ্গে আদি মানব-মানবী হজরত আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.), হজরত ইব্রাহীম (আ.), হজরত ইসমাইল (আ.) ও মহানবীর (সা.) স্মৃতি জড়িয়ে আছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ নির্মিত হয় তা তো বাক্কায় (মক্কায়), তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নানাভাবেই থমকে গেছে মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা। এমন পরিস্থিতিতে হজ সীমিত পালিত হচ্ছে। ফলে বিধিবিধান মেনে যারা সুযোগ পাচ্ছেন তারা হজ সম্পন্ন করুন এমনটি কাম্য। উলেস্নখ্য, মহামারির কারণে এবার অন্য দেশ থেকে কারও মক্কা গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সৌদি আরব। তবে দেশটিতে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্য থেকে সীমিতসংখ্যক এই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, এবার কোভিড-১৯ মহামারি ইসলাম ধর্মের এই আনুষ্ঠানিকতাকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছিল। সৌদি আরবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর কাবা শরিফেও নামাজ আদায় বন্ধ করে দিয়েছিল সৌদি সরকার। জানা গেছে, এবারের হজে যারা অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তারা মক্কায় উপস্থিত হওয়ার পরপরই তাদের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা ও ভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের হজ শুরুর আগে ও পরে কোয়ারেন্টিনেও থাকতে হবে। চলতি সপ্তাহের প্রথমদিকে সৌদি তহবিলে পরিচালিত আল আরাবিয়া টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌদি আরবের হজবিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন, মক্কার হোটেলে চারদিন কোয়ারেন্টিনে থাকার আগে অংশগ্রহণকারীরা তাদের বাসায়ও কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে। মূলত মহামারির কারণে এবারের হজের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে সৌদি আরবের জাতীয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। বিধি অনুযায়ী, হজ পালনকারীরা কাবা শরিফে ও কালো পাথরে চুমু খেতে বা স্পর্শ করতে পারবেন না এবং শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছুড়ে মারার জন্য আগে থেকে জীবাণুক্ত প্যাকেটজাত পাথর ব্যবহার করতে হবে। হজ পালনকারী ও হজে দায়িত্বপালনকারীদের অবশ্যই সুরক্ষা মাস্ক পরতে হবে এবং তা ব্যবহার শেষে সুনির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। হজ পালনকারীরা যেখানেই সমবেত হোন না কেন দুজনের মধ্যে অন্তত দেড় মিটার দূরত্ব রাখতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, হজের ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক দিক ছাড়াও আরও নানা দিক রয়েছে। হজ বিশ্ব মুসলিমের এক মিলনমেলা। হজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধি ও সংহত করে। পরস্পরকে জানার এর চেয়ে বড় সুযোগ আর কোনো বিশ্ব সম্মেলনে সম্ভব নয়। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য-সংহতি ও সৌভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধিতেও হজের ভূমিকা অপরিসীম। এবারে শুধু পরিস্থিতির কারণেই হজ সীমিত আকারে হচ্ছে। ফলে মহামারির কারণে বিধিবিধান মেনে হজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক এমনটি কাম্য।