দুর্যোগকালে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশ | ৩০ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাস বিপর্যয়ের বাস্তবতায় বিশ্বজুড়ে অভাবী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে দুর্যোগকালে খাদ্য নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এটা সত্য, বর্তমানে চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষের বেশিরভাগই নিম্ন এবং মধ্যআয়ের দেশগুলোর বাসিন্দা। দৈনিক মজুরি পেলে খাওয়া সম্ভব হয় এমন লাখ লাখ মানুষের জন্য এই মহামারি মারাত্মক বিপর্যয়কর। করোনাকালে বিশ্ব জুড়ের চলতে থাকা মন্দায় ইতিমধ্যে অনেকের সামান্য সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে। বিশ্ব জুড়ে এই বিপর্যয় সামাল দিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ ছাড়াও লাখো শিশুর মৃতু্যর আশঙ্কা জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিদ্যমান বাস্তবতায় ক্রমবর্ধমান অপুষ্টির পরিণতি হবে দীর্ঘমেয়াদি। এটি একটি প্রজন্মকে বিপদের মুখে ঠেলে দেবে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের অবস্থা কী দাঁড়াবে সেটা ভাবনার বিষয়। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, আমাদের খাদ্য ঘাটতির কোনো সুযোগ নেই, সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। করোনা সংকটে দেশে যেন খাদ্য ঘাটতি না হয় সে জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভার সূচনা বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। তিনি আরো বলেন, এটা ঠিক, করোনাভাইরাস আমাদের অনেকটা পিছিয়ে দিচ্ছে। তারপরও আমাদের কৃষির যে অগ্রগতি এটা ধরে রাখতে হবে। আমাদের মানুষের আর যাই হোক তাদের খাদ্যের অভাবটা যেন না হয়। সেটা আমাদের দেখতে হবে। নগদ অর্থসহায়তা, কৃষকদের সার, উন্নতমানের বীজসহ অন্য কৃষি উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। আমরাও এ ব্যাপারে আশাবাদী। করোনা ছাড়াও সাম্প্রতিক অতিবর্ষণজনিত কারণে সৃষ্ট বন্যায় ৩১টি জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে মানবিক সহায়তা হিসেবে এ পর্যন্ত সাত হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বন্যাকবলিত জেলা প্রশাসনসমূহ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে দুই কোটি দুই লাখ ১২ হাজার ৭০০ টাকা। শিশুখাদ্য ক্রয় বাবদ বিতরণের পরিমাণ ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, গোখাদ্য ক্রয় বাবদ বিতরণের পরিমাণ ৫৭ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে ৮২ হাজার ১২ প্যাকেট। এছাড়াও ঢেউটিন বিতরণ করা হয়েছে ১০০ বান্ডিল এবং গৃহ মঞ্জুরি বাবদ বিতরণ করা হয়েছে তিন লাখ টাকা। এ ছাড়াও করোনাকালে ৭ কোটি মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। মনে রাখা দরকার, গ্রামীণ জনপদের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। এরপরই রয়েছে প্রবাসী আয়। যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় দেশের অর্ধেক মানুষ। কিন্তু করোনায় চরম বিপাকে পড়েছেন গ্রামাঞ্চলের কৃষক থেকে শুরু করে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে করোনাভাইরাসের চলমান প্রভাবে মানুষ গ্রামমুখী হচ্ছে। স্থায়ীভাবে অসংখ্য মানুষ গ্রামে আসায় নানামুখী নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আয়ের উৎস। ফলে সামগ্রিকভাবে বাড়ছে সংকট। এমন অবস্থায় দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন ব্যাপার। তবে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবসম্মত সুষ্ঠু উদ্যোগই কেবল পারে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।