পবিত্র ঈদুল আজহা

সর্বত্র ত্যাগ ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পবিত্র ঈদুল আজহা আমাদের মধ্যে সমাগত। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এ ঈদ। ঈদ কেবল বাঙালি মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবই নয়, আনন্দ-বিনোদন এবং মিলনমেলাও। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য কারোর মধ্যেই যেন চেষ্টা ও আন্তরিকতার অভাব থাকে না। চারদিকে ঈদের আগমনী সুর ঝঙ্কৃৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছোট-বড় সবার মনে আনন্দের ফানুস উড়তে থাকে। আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে! নাড়ির টানে মানুষ ছুটে চলে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। নিজ ঘরে কিংবা গ্রামে ফেরার সে যে কী ব্যাকুলতা- তা বলে বোঝানো দুষ্কর। মানুষ ছুটে চলে তার আপন ঠিকানায়- জন্মভূমিতে। কিন্তু এবারের ঈদ ভিন্ন রকম। করোনার জন্য মানুষের মধ্যে আগের মতো উৎফুলস্নভাব নেই, তাড়না নেই গ্রামে ফেরারও। উপরন্তু মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। করোনায় মারা গেছে তিন হাজার ৮৩ জন মানুষ। আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮৯ জন। যা অত্যন্ত উদ্বেগ ও বেদনার। অন্যদিকে বন্যার প্রকট চলছে। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪২ লাখ মানুষ। মারা গেছেন ৯৩ জন। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে বন্যা। এই অবস্থায় বন্যাক্রান্ত এলাকার মানুষও আগের আনন্দ নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারবে না। যদিও বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১ হাজার ৫৯০টি। এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত লোকসংখ্যা ৮৮ হাজার ২৯৪ জন। সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এটা সত্য, বহুকাল ধরেই ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে ঈদ এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাঙালি প্রতিকূল পরিবেশে সংগ্রামশীল জীবনযাপনের মধ্যেও ঈদের আনন্দে মাতোয়ারা থাকতে চায়। কিন্তু দুর্যোগ যেন পিছু ছাড়ছে না। একদিকে মহামারি অন্যদিকে বন্যা। আগের মতো ঘরমুখো মানুষের ঢল নেই। ট্রেন, লঞ্চ ও দূরপালস্নার বাসে আগের মতো ভিড় নেই। তারপরেও মানুষ উৎসব আনন্দে গ্রামে যাচ্ছে নাড়ির টানে, বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা বিড়ম্বনা আতঙ্ক উপেক্ষা করে। বিশেষ করে দুই ঈদে মানুষ প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে চায়। এ যেন দৃঢ়চেতা অদম্য মানসিকতা। এ টান যে বড় বেশি প্রাণের। দুনিয়ার কোথাও কি মানুষ এভাবে ছোটে প্রাণের টানে, শেকড়ের সন্ধানে? এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বাঙালির আনন্দ-বিনোদনের জায়গা ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। একদিকে করোনা মহামারি বন্যা অন্যদিকে সামাজিক অবক্ষয় ও অস্থিতিশীলতা এবং প্রক্রিয়াশীল শক্তির উত্থানও এজন্য দায়ী। মানবজীবনের আনন্দ-বিনোদনের খন্ডিত সঙ্গী এ ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়; তাহলে তাদের ঈদ-আনন্দ মাটি হয়ে যাবে- এটাই স্বাভাবিক। ঈদে খাদ্যসামগ্রী থেকে পোশাক-পরিচ্ছদ, জীবনাচরণ সবকিছুতেই পরিবর্তনের আমেজ চোখে পড়ে। এ পরিবর্তন দেখে মনে হয়, আতঙ্ক-বিষাদের ঘন-কালো ছায়া কাউকে স্পর্শ করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে কি তাই? আমরা কোরবানির মাধ্যমে কে কতটুকু আত্মত্যাগের পরিচয় দিচ্ছি এবং মহান আলস্নাহর পবিত্র আদেশ কতটুকু পালন করছি, সেটাও উলেস্নখযোগ্য দিক। হযরত ইব্রাহিম (আ.) আলস্নাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইলকে (আ.) নিজ হাতে কোরবানি দিয়ে আত্মত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। আমরা কি কোরবানির মাধ্যমে আত্মত্যাগের মহিমা অর্জন করতে পারছি, সে প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। তারপরেও বাঙালি সব প্রতিকূলতা আতঙ্ক ও বন্যাজনিত দুর্ভোগ মাড়িয়ে মেতে উঠবে ঈদ-আনন্দে এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করছি। মনের আনন্দই দেহের শক্তির উৎস। মানুষ মাত্রই আনন্দের কাছে নিবেদিত হতে চায়। আমরা চাই না, কারও আনন্দ এবার বিষাদে রূপ নিক। করোনা ও বন্যার মধ্যেও প্রকৃত আনন্দ নিয়ে বাঙালির প্রতিটি ঘরে আসুক ঈদ। ধনী ঈদ করুক খুশিতে, গরিবের ঘরেও ছড়িয়ে পড়ুক খুশির আমেজ। ভেদাভেদ, হিংসা ভুলে ঈদ হোক সবার আনন্দময় উৎসব। আমরাও তেমনটি চাই। যায়যায়দিনের সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপন দাতা, এজেন্ট, হকার ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।