উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায় নিয়ে চীনের সংস্কারনীতি

চীনের কয়লার ৪০ ভাগ, তরল জ্বালানির ২২ ভাগ এবং গ্যাসের ২৮ ভাগ রয়েছে জিনজিয়াং প্রদেশে। যার ৪৫.৮৫ ভাগ ধারণ করে রয়েছে উইঘুর সম্প্রদায়।

প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

হাবিবুর রহমান মুন্না
উইঘুর শব্দের অর্থ হলো 'নতুন সীমান্ত'। উইঘুররা মূলত মধ্য এশিয়ায় বসবাসরত তুর্কি বংশোদ্ভূত জাতিগোষ্ঠী, যারা চীনের শিনচিয়াং/জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাস করে। চীনের জিনজিয়াং ও হুনান ছাড়াও কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তুরস্ক, জার্মানি, নরওয়ে, সুইডেন এসব দেশেও উইঘুরদের বসবাস রয়েছে। চীনের উইঘুররা সুন্নি ইসলামে বিশ্বাসী। তারা নিজেদের পূর্ব তুর্কিস্তানিও হিসেবে দাবি করে থাকে। যারা মূলত তুর্কি এবং রাষ্ট্রীয় মান্দারিন ভাষায় কথা বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। জিনজিয়াং প্রদেশে মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ (২০১৯) এর মধ্যে উইঘুরদের সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ (২০১৯)- যা জিনজিয়াংয়ের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক এবং পুরো চীনের মোট জনসংখ্যার ১-২ ভাগ। সংখ্যালঘু এই জাতির ইতিহাস প্রায় ৪ হাজার বছর আগের। বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে উইঘুররা নিজেদের স্বাধীন দাবি করলেও ১৯৪৯ সালে চীনের কমিউনিস্ট সরকার পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। তবুও তাদের রয়েছে নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য, সার্বভৌমত্ব, ধর্ম, সংস্কৃতি, রীতিনীতি, অভ্যাস ইত্যাদি। চীন সরকারের দাবি, উইঘুররা 'পশ্চাৎপদ' আর দেশের উন্নয়নের জন্য তাদের অধুনিকায়ন জরুরি। চীনা সরকার বলছে, উইঘুররা ' বিপজ্জনক ' ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত। এ কারণেই বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং উগ্রবাদী এই জাতির প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ দিয়েই অনগ্রসর এই জাতিকে উন্নত করার পরিপ্রেক্ষিতেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় প্রশিক্ষণালয়ে। কিন্তু উইঘুররা নিজেদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতে বেঁচে থাকার ওপর সার্বভৌমত্ব চায়। তাদের হাজার বছরের পুরনো সংস্কৃতি আর ধর্মকর্ম পালনের অধিকার চায়। আর এসব অধিকারের চেতনার কারণেই উইঘুরদের পিঠে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদ, অনগ্রসরবাদ আর উগ্রবাদের সিলমোহর। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা জাতিসংঘের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে বলেছে, 'চীনে গণহারে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের জোরপূর্বক আটক করা হচ্ছে।' উইঘুরদের আন্তর্জাতিক সংস্থা 'দ্যা ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস' জানায়, ক্যাম্পগুলোতে উইঘুরদের কোনো কারণ ছাড়াই আটকে রেখে, জোরপূর্বক কমিউনিস্ট পার্টির স্স্নোগান দিতে বলা হয়। অবরুদ্ধ মানুষের অনাহারে রাখা হয় এবং কঠোর নির্যাতন চালানো হয়। বন্দি করা মানুষের চুলের ছাঁট কেমন হবে, কোন ধরনের পোশাক পরিধান করবে, তাদের বাড়ির দরজা কতক্ষণ খোলা রাখা যাবে, সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ইতিমধ্যে তাদের শত শত মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। নামাজ পড়তে বাধা দেওয়া হয়। অনেক মসজিদকে পরবর্তী সময়ে পানশালায় পরিণত করা হয়েছে। জোরপূর্বক ধর্ম ত্যাগ ও নিজস্ব ধর্মের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকি রমজান মাসে রোজা রাখতেও তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জোরপূর্বক গর্ভপাত করিয়ে ভ্রূণ নষ্ট করে ফেলা, জন্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করা, একটি পরিবারে একটির বেশি সন্তান জন্ম দিলে অভিভাবকের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের ধারণা, ছোট বড় বন্দিশিবিরগুলো মিলে প্রায় পঞ্চাশ লাখ মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে। অবরুদ্ধদের রোজ মোগজধোলাই ও শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, মান্দারিন ভাষা বাধ্যতামূলক শেখানো হচ্ছে এবং তাদের বলা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের প্রতি অনুগত থাকতে। রেস্তোরাঁ, মসজিদ, বাস টার্মিনাল সর্বত্র মানুষের মুখাবয়ব ও পরিচয়পত্র স্ক্যান করা হচ্ছে। কেউ বাদ পড়লে পুলিশের কাছে খবর চলে যায় এবং তাদের বন্দিশিবিরে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। চীনের হ্যাকাররা উইঘুরদের অনলাইন কার্যক্রমে বাধা প্রদান করছে। তাদের ফোনে সরকার নির্ধারিত অ্যাপ ইনস্টল করা হয়ে থাকে- যা সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হয়। ফোন বন্ধ হলে সেই ব্যক্তি সরকারের সন্দেহের তালিকায় যুক্ত হয়। এছাড়াও সরকার কর্তৃক ডি এন এ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ভয়েস রেকর্ড সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং অত্যাধুনিক সি সি ক্যামেরায় ফেস রিকগনাইজার থাকায় সার্বক্ষণিক সবার চলাফেরা প্রদর্শন করা। চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে চীনা সরকারকে প্রশ্ন করা হলে তারা বরাবরের মতো সব দায় অস্বীকার করে। চীনের এরকম সহিংস কার্যক্রমে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেও চীন সরকার দাবি জানায়, 'সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, স্বেচ্ছামূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যেই তাদের সেখানে রাখা হয়। তাদের চলাফেরায় সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। চীন সরকারের এরকম পদক্ষেপের পরিণতি নিয়ে ইতিমধ্যে বহু নথি বের হলেও এবারের একটি নথি অনুসারে, 'চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, জিনজিয়াং এ বিচ্ছিন্নতাবাদ ও উগ্রবাদ দমনে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন।' এক নথির তথ্য অনুযায়ী, '২০১৪ সালে জঙ্গিরা জিনজিয়াংয়ের একটি ট্রেন স্টেশনে হামলা চালিয়ে ৩১ জনকে হত্যা করে।' এই জঙ্গি হামলার পর থেকেই মূলত কেন্দ্রীয় সরকার কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। ওই সময় প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের কোনো ছাড় না দেওয়ার নির্দেশে চীনের প্রতিরক্ষা বাহিনী হতে সন্ত্রাসবাদ, অনুপ্রবেশকারী ও বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং এ নির্দেশের মধ্য দিয়েই চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের বৈরী অবস্থা শুরু হয়। ২০১৬ সালে জিনজিয়াং প্রদেশের প্রধান করা হয় কমিউনিস্ট পার্টির 'চেন কুয়ানগু' যার ভাষ্য ছিল, 'যাদের যেভাবে আটক করা যায়, সবাইকে আটক করুন।' ২০১৭-২০১৮ সালে 'ওয়াং ইয়ানঝি' নামের এক নেতার ওপর তদন্ত চালিয়ে প্রশাসন জানতে পারে তিনি প্রায় আট হাজার অবরুদ্ধ উইঘুরদের শিবিরগুলো থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। যার ফলে চীন সরকার তার জন্য কঠোর সাজার ব্যবস্থা করেন। বিবিসি জানায়, ২০০৯ সালে জিনজিয়াংয়ের রাজধানী উরুমকিতে এক দাঙ্গায় কমপক্ষে ২০০ জন প্রাণ হারিয়েছে যাদের বেশির ভাগই চীনা হান। এছাড়াও পুলিশ স্টেশন ও সরকারি ভবনগুলোতে হামলা হয়। এরপরে ২০১৩ ও ২০১৭ সালের তিয়েনানমেন স্কয়ারে গাড়ি চালিয়ে এবং ছুড়ি দিয়ে হামলা করে মানুষকে মারা হয়। এতে অনেক মানুষ আহত ও বেশ কয়েকজন নিহত হয়। এ সময় সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা উইঘুরদের জন্য হুঁশিয়ারি বাক্য প্রয়োগ করেন এবং পরবর্তী সময়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। \হবেইজিং থেকে বলা হয়, 'উইঘুরদের অনেকে আইএস-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে সহিংসতামূলক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ছে।' তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বক্তব্য, 'উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীনের উগ্র দমননীতি, অন্যদের মনে বিষাদ সৃষ্টির ফলে সহিংসতা ঘটছে।' এক নথি অনুযায়ী, '২০১৭ সালে সাত দিনের মধ্যে জিনজিয়াংয়ের দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে প্রশিক্ষণের জন্য বন্দি শিবিরগুলোতে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয়।' বিবিসি অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়, '১৩৭ পৃষ্ঠার এক রেকর্ডে অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি কার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তারা কী পোশাক পরিধান করেন, কখন নামাজ আদায় করেন, তাদের পরিবারের আচরণ কেমন, পরিবারের কার্যক্ষেত্রের নিয়মাবলিসহ সব তথ্য লিপিবদ্ধ রয়েছে।' বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ 'আড্রিয়ান রেঞ্জ' বলেন, 'সম্প্রতি ফাঁস হওয়া প্রকৃত নথিটি সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ। যেখানে উইঘুরদের ধর্মীয় বিশ্বাসের কার্যাবলি থেকে বিরত রাখার এবং সরকার কর্তৃক গৃহীত অত্যাচার, নিপীড়ন ও শাস্তি দেওয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।' অনেকের মতে, 'চীনের এ ধরনের উগ্র সিদ্ধান্ত সামগ্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র ফুটিয়ে তোলে। ' হিউম্যান রাইট ওয়াচের মতে, " জিনজিয়াং বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চল যেখানে উইঘুরদের বসবাস, সেসব অঞ্চলের ম্যাসেজিং অ্যাপ ব্যববহারকারীদের কেউ বিদেশে যোগাযোগ করলে তাকে টার্গেট করছে কর্তৃপক্ষ। সেসব অঞ্চলে সংবাদমাধ্যম নিষিদ্ধ হওয়ায় প্রকৃত তথ্য পেতেও সমস্যা পোহাতে হয় সংবাদকর্মীদের।' জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কাউন্সিল জানিয়েছে, 'অবরুদ্ধ নিরীহ, নিরপরাধ উইঘুরদের দেহ থেকে মূল্যবান ওরগ্যানগুলো বের করে বিক্রি করা হচ্ছে।' এ বিষয়ে চীনা কর্তৃপক্ষ জানায়, 'এসব নিউজ পুরোপুরি গুজব।' কিন্তু তারা জানায়, 'মৃতু্যদন্ডে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা কার্যকরের পরে তাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ওরগ্যানগুলো নিয়ে চিকিৎসাক্ষেত্রে কাজে লাগানো হচ্ছে। এতে করে অনেকে জীবন ফিরে পাচ্ছে।' চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে কঠোর নিরাপত্তা ও নিষেধাজ্ঞার কারণে সংবাদকর্মীরা যেতে পারছে না, সেখানকার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারছে না। যার কারণে বাস্তব চিত্র ফুটে উঠছে না। সেখানে সার্বক্ষণিক সরকারি কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষের ফোন চেকিংসহ জিজ্ঞাসাবাদে ব্যস্ত। তবে, নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা ' ওমির ' নামের একজনের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। তিনি বলেন, 'আমরা ঘুমোতে পারতাম না। ঝুলিয়ে রেখে কয়েকঘণ্টা যাবৎ কাঠ, রাবার ও তার দিয়ে বানানো চাবুক দিয়ে পেটানো হতো। সুই দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুটিয়ে, পস্নাইয়ার দিয়ে হাত পায়ের নখ তুলে নেওয়া হতো। সার্বক্ষণিক কোনো না কোনো মানুষের অত্যাচারের চিৎকার শুনতে পেতাম। ' জিনজিয়াংয়ের ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাদের মধ্যযুগের রাজশাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যখন সিংহাসন বধ করে নিতে একেকজন তাদের বীরত্ব ও শৌর্য দেখিয়ে অন্যের গলা কাটতেও দ্বিধাবোধ করেনি। যে যুগে সম্পদ লুণ্ঠনের কাছে মানবজীবন তুচ্ছ করে দেখা হতো। চীনের পরিস্থিতি শুধু শোধনাগারে পরিণত হয়নি। এটি পরিণত হয়েছে একটি কুরুক্ষেত্রে। প্রশিক্ষণালয় শুধু একটি উপলক্ষ মাত্র বরং এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে নোংরা রাজনীতি। যে রাজনীতির পেছনে রয়েছে নিরীহ মানুষের যকৃৎ বিক্রি করে, নগরায়ন সৃষ্টির পরিকল্পনা। সভ্যতার এই যুগে এসে এসব ভাবতে গেলে শরীরের রক্ত হীম হয়ে আসে। চীনের অর্থনৈতিক উন্নতি বর্তমান বিশ্বের নতুন শক্তির আবির্ভাব ঘটিয়েছি। এতদিনে রাজত্ব করে আসা যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে চীন ক্রমেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। যুগে যুগে যত শক্তির উদ্ভব ঘটেছে তারা সব অত্যাচারী মনোভাব নিয়েই মাঠে নেমেছে। চীন ও এর উর্ধ্বে নয়, তাদের আগ্রাসী শিল্পনীতির ফাঁদে আটকে গিয়েছে বহু উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশ। বাংলাদেশেও যে চীনের বাণিজ্যনীতি সমানভাবে আগ্রাসী তা নিশ্চয়ই আমাদের বোধগম্যের বাইরে নয়। আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকায় তাদের আগ্রাসী শিল্পনীতির ওপর বিক্ষোভ ও আন্দোলন হলেও, আমাদের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো তাদের ঋণের ফাঁদে পড়ে সারাক্ষণ তোষামোদে ব্যস্ত। তাদের শুধু প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্যই নয়, রয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক মতবাদ এবং সম্প্রতি শুরু হওয়া সংখ্যালঘু নিশ্চিহ্নকরণ ব্যবস্থা। আর চীনের অর্থনৈতিক ক্ষমতার ছায়াতলে থাকা মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আজ নীরব। উইঘুরদের এই সমস্যা নিয়ে সমাধানের লক্ষ্যে এগিয়ে আসছে না কোনো রাষ্ট্র। সবাই চীনের বাণিজ্য হারানোর ভয়ে কাতর। এ সমস্যা সমাধানে সোচ্চার হয়ে তুরস্ক এগিয়ে এলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতির গুহায় পড়ে নিজেদের অবস্থান দুর্বল করে ফেলেছে। এমতাবস্থায় যখন সৌদি আরবের মতো মুসলিম রাষ্ট্র নীরব থেকে চীনের পক্ষাবলম্বন করে, তখন তুরস্ক নীরব থাকতে বাধ্য। চীনের কয়লার ৪০ ভাগ, তরল জ্বালানির ২২ ভাগ এবং গ্যাসের ২৮ ভাগ রয়েছে জিনজিয়াং প্রদেশে। যার ৪৫.৮৫ ভাগ ধারণ করে রয়েছে উইঘুর সম্প্রদায়। জিনজিয়াংয়ের অর্থনীতি কৃষি এবং বাণিজ্যভিত্তিক যার কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই অঞ্চলের শহরগুলোর ভেতর দিয়ে যাওয়া 'সিল্করোড'। আর চীন সরকারের মাথাব্যথা এখানেই। সংখ্যালঘু হয়ে বিপুলসংখ্যক এই সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা, যার কারণে কেন্দ্রীয় সরকার উইঘুর জাতির নিষ্পত্তি ঘটিয়েই এই সম্পদ রাষ্ট্রের কাজে লাগাতে বদ্ধ পরিকর। বিপরীতে চীনারা ৪ হাজার বছরের পুরনো জাতির নিশানা মিটিয়ে আবির্ভাব ঘটাতে চায় নতুন বাণিজ্য ব্যবস্থার- যা এই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের, বিশ্বে আধিপত্য বিস্তারে নতুন দ্বার উন্মোচনের পুঁজি হিসেবে ব্যবহৃত হবে। জিনজিয়াংয়ের মানচিত্র পরিণত হয়েছে বীভৎস বধ্যভূমিতে। রাতের আঁধারের কোলাহলমুক্ত পরিবেশে ভেসে আসে নিরীহ, পশ্চাৎপদ জাতির আর্তনাদ। সমস্ত নৃশংসতার জোগান দিয়ে উইঘুরদের বাসস্থলকে বানিয়েছে এক ধ্বংসযজ্ঞের কারখানায়। যাদের দিকে তাকালে প্রত্যেক মুসলিম রাষ্ট্র আয়নায় আত্মঅবয়ব খুঁজে পাবে। ইতিহাসের করুণায় দুর্বলরা মাত্রই বেঁচে আছে সম্মুখে ঘুণেধরা তলোয়ার নিয়ে, পশ্চাতে চলছে মারণ পঁ্যাচের স্তূপিকরণ। ডাল টেনে শেকড় তুলে আনার স্বপ্নে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা সমাজতান্ত্রিকদের পাতানো জালের বাইরে বেরোনোই মূল লক্ষ্য। হাবিবুর রহমান মুন্না: কলাম লেখক