লেবাননে ভয়াবহ বিস্ফোরণ সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি প্রত্যাশিত

প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পুরো বিশ্বই দিশাহারা। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন। এরই মধ্য লেবাননে ঘটল ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের সমুদ্রবন্দর-ঘেঁষা এলাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। পোর্ট অব বৈরুতের একটি গুদামে এই বিস্ফোরণে অন্তত ১৩৫ জনের মৃতু্যর তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। আর মৃতু্যর সংখ্যা বাড়তে পারে এমন আশঙ্কার বিষয়ও উঠে এসেছে। এছাড়া আহত হয়েছে চার হাজারের বেশি মানুষ। এই মর্মান্তিক ও ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা কতটা শোকাবহ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার ঘটনাটি আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। প্রসঙ্গত বলা দরকার, এই মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত ১৩৫ জনের মধ্যে, ২৫ বছর বয়সী মিজানুরসহ চারজন বাংলাদেশি রয়েছেন বলেও জানা গেছে। ফলে নিহত বাংলাদেশিদের বিষয়ে দেশের সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এমনটিও কাম্য। উলেস্নখ্য, এই বিস্ফোরণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানী ও আশপাশের এলাকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণে ঘরবাড়ি হারিয়েছে ৩ লাখের বেশি মানুষ। ক্ষতি হয়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। এ ক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এই দুর্ঘটনার পর অর্থনৈতিক সংকটের মুখে থাকা দেশটি আরও গভীর সংকটে পড়বে। ফলে সামগ্রিক বিষয় আমলে নিয়ে দেশটির সংশ্লিষ্টরা সব ধরনের উদ্যোগ জারি রাখুক এবং ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক এমনটি কাম্য। উলেস্নখ্য, লেবাননের রাজধানী বৈরুতে এই বিস্ফোরণের জন্য সরকারের অবহেলাকে দায়ী করছে সাধারণ মানুষ। এছাড়া এরই মধ্যে দেশটির বন্দরের কয়েকজন কর্মকর্তাকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। বৈরুতে কাঁদছে মানুষ, চিৎকার করছে এবং মানুষ এখন উদভ্রান্ত ও ক্লান্ত, এমনটিও জানা গেছে। এছাড়া এই ঘটনার পর লেবাননে দুই সপ্তাহের জন্য জরুরি অবস্থাও জারি করা হয়েছে। আর বিস্ফোরণের জন্য সরকারকে দায়ী করে এর বিচার চাইছেন বৈরুতবাসী। ঘটনার তদন্তও চলছে এবং দেশটির সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিল বলছে, দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হবে। অ্যামনেস্টি ইন্ট্যারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিস্ফোরণের ঘটনায় স্বতন্ত্র তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তারা সরকারি তদন্তের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছে। আমরা মনে করি, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত জরুরি এবং প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে এ ঘটনাকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের উদ্যোগ জারি রাখতে হবে। লক্ষণীয়, লেবাননের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় গুদামে রাখা ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণে এই বিস্ফোরণ হয়েছে। এছাড়া দেশটির কাস্টমস প্রধান বলেছেন, এসব রাসায়নিক পদার্থ সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য তার সংস্থা বললেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। এছাড়া এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়টি আমলে নেওয়া দরকার, ব্রিটেনের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা শহরে যে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছিল, সেটির দশভাগের এক ভাগ শক্তি ছিল বৈরুত বিস্ফোরণে। তারা এমনটিও বলছেন যে, বৈরুতের এই বিস্ফোরণ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক-বহির্ভূত বিস্ফোরণ। আমরা বলতে চাই, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে যে চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে তাতে ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনাতীত। এখন সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এই মর্মান্তিক এবং ভয়াবহ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টদের সতর্কতামূলক ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে তার পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প থাকতে পারে না। যদি অবহেলা বা যে কোনো ধরনের অসতর্কতার কারণে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটে তবে তা কতটা পরিতাপের, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা মনে করি, এমন ভয়ঙ্কর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়টিকে সামনে রেখে সম্মিলিত উদ্যোগ ও সার্বিক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ততের পাশে দাঁড়ানোসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।