বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫৫ লাখ মানুষ ত্রাণ ও পুনর্বাসন জরুরি

প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সাম্প্রতিক অতিবর্ষণজনিত কারণে সৃষ্ট বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৫ লাখ ৬৩ হাজার ৭৭৭ জন। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বন্যায় দেশের ৩৩টি জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণের জন্য এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৪৮ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বন্যাকবলিত জেলা প্রশাসনসমূহ থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে চার কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে দুই কোটি ৪২ লাখ ৭১ হাজার ২০০ টাকা। শিশু খাদ্য সহায়ক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ৬৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। গো-খাদ্য ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং বিতরণের পরিমাণ এক কোটি ৪৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক লাখ ৬২ হাজার এবং এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে এক লাখ ১৯ হাজার ৭৫৬ প্যাকেট। এছাড়াও ঢেউটিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩০০ বান্ডিল এবং এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ১০০ বান্ডিল, গৃহ মন্‌জুরি বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে নয় লাখ টাকা এবং বিতরণ করা হয়েছে তিন লাখ টাকা। আমরা মনে করি, সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে বন্যা মোকাবিলায় স্থায়ী সমাধানের দিকে যেতে হবে। ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। উলেস্নখ্য, বন্যাকবলিত জেলাগুলোর আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এক হাজার ৫৬৭টি। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত লোক সংখ্যা ৭৭ হাজার ৫২ জন। আশ্রয়কেন্দ্রে আনা গবাদিপশুর সংখ্যা ৭৪ হাজার। বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে ৯৮১টি এবং এখন চালু আছে ৪০৯টি। এটাও সরকারের ভালো উদ্যোগ। এ কথা সত্য, দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে একটি মডেল দেশ। বাংলাদেশের অবস্থান এমন এক এলাকায় যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিত্য-ঘটনা। গত ৫০ বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কয়েক লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এ দেশে। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস কেড়ে নিয়েছিল কয়েক লাখ মানুষের প্রাণ। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, বাঙালি জাতির অতীত গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে। সে ঐতিহ্য সাহস ও সংগ্রামের। সে ঐতিহ্য মানবিক চেতনাবোধের। নানা বৈরী পরিবেশ ও প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও জাতি হিসেবে বাঙালি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। অদম্য সাহসী এ দেশের মানুষ। তাদের প্রতিরোধ বা প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন। অতীতে তারা নানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে। প্রতিনিয়ত তারা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও টিকে আছে। নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যেও বাঙালির মনোবল কখনো দুর্বল হয়নি। দৃঢ় চেতা ও মনোবলসম্পন্ন বাঙালি জাতি সবসময় এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। কখনো বন্যা, ঝড়ঝঞ্ঝা, টর্নেডো, সাইক্লোন, নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলা করেছে, কখনো বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। বাঙালি জাতি বারবার প্রমাণ করেছে তারা অদম্য। তবে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর মানুষের কোনো হাত নেই। তবুও আগাম প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক প্রস্তুতি সরকার গ্রহণ করেছে- যা বর্তমান সরকারের সাফল্য হিসেবে বিবেচিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার নানামুখী কর্মসূচি ও উদ্যোগ গ্রহণ করায় সাধারণ জনগণের জানমাল যেমন এবার রক্ষা পেয়েছে তেমনি আগামী দিনেও এই ধারাবহিকতা বজায় থাকবে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামীতেও যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলা ও এর ঝুঁকি হ্রাস করতে বাংলাদেশ সক্ষম হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।