পাঠক মত

বেকারত্ব ও অবৈধ প্রবাসী

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আমাদের অর্থনীতিতে আয়ের বেশকিছু অর্থ আসে রেমিট্যান্স থেকে। বাংলাদেশের মানুষ যেমন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করে তাদের কষ্টের উপার্জনের অর্থ আমাদের দেশে পাঠায়, তেমনিভাবে বাংলাদেশ থেকে কাজ করেও অনেক বড় অঙ্কের অর্থ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লোকজন নিয়ে যায়। শুধু বাংলাদেশ নয়- পৃথিবীর সব দেশের কাজ পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন হয় অন্যদেশের লোকের, আর এর জন্য তৈরি করা হয় নির্দিষ্ট একটি আইন। যে দেশ যতটা সফলতার সঙ্গে এই আইনের প্রয়োগ করতে পারে, তারাই নিশ্চিত করতে পারে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। শুধু কাজের জন্যই মানুষ এক দেশ থেকে অন্যদেশে পাড়ি জমায় না কেউ আসে লেখাপড়া করতে, কেউ আসে ঘুরতে, কেউ আবার এসে তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়ন করে কেউ বা আসে খেলোয়াড় হিসেবে বিভিন্ন ক্লাবে চুক্তি করে। এভাবেই এক দেশের মানুষের অন্যদেশে পাড়ি জমানো। কিন্তু সবাই যে তাদের বৈধ উদ্দেশ্য হাসিলের বাইরে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয় এটাও আমাদের সবার জানা। সমসাময়িক কিছু ঘটনা দেখলে আমরা আরও বুঝতে পারি কতটা আইনের প্রয়োগ আছে বাংলাদেশে। এ দেশের সঙ্গে ব্যবসায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে বিভিন্ন দেশ তৈরি করছে তাদের দেশের শিল্প-কারখানা। আর এসব বিদেশি শিল্প-কারখানাগুলোতে আমাদের দেশের লোকের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে বাইরের দেশের অনেক লোক। এ ছাড়া আমাদের দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি খাতের কন্সট্রাকশনের কাজে নিয়োজিত আছে চীন জাপানসহ বিভিন্ন দেশের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। দক্ষ জনশক্তির অভাবে এসব কাজ পরিচালনা করার জন্য বাংলাদেশীয় শ্রমিকদের চেয়ে অন্যদেশের শ্রমিকরাই বেশি কাজ করে যাচ্ছে। আর এই কাজগুলো পরিচালনা করার জন্য বাইরের দেশের শ্রমিক নিয়ে আসতে অনুমতিও দিয়ে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদেশি এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকরাও অবৈধভাবে নিয়ে আসছেন তাদের দেশের অবৈধ শ্রমিক। আর তাদের দিয়েই পরিচালনা করা হচ্ছে এসব প্রকল্পের কাজ। এতে যেমন আমাদের দেশের অনেক শ্রমিক কাজ না পেয়ে বেকার হয়ে পড়ছে তেমনি বিদেশি এসব অনিবন্ধিত শ্রমিকের মাধ্যমে দেশের অনেক টাকাই চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। আর এসব টাকার কোনো রাজস্বও আদায় করতে পারছে না সরকার। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্লাবে খেলার চুক্তি করে সোমালিয়ান এবং নাইজেরীয় অনেক নাগরিক প্রবেশ করে বাংলাদেশে। নির্দিষ্ট একটি ক্লাবে তাদের খেলার কথা থাকলেই বিভিন্ন সময় দেখা যায় তারা আমাদের দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, উপজেলার টিমগুলোতে অংশগ্রহণ করে থাকে। এতে তারা যেমন বাড়িতে আয়ের সুযোগ পায় তেমনি অল্প টাকায় বিদেশি খেলোয়াড়ও পায় টিমগুলো। কিন্তু ক্ষতির কারণ হলো চুক্তিমতো এসব খেলার কথা উলেস্নখ না থাকায় এই উপার্জিত অর্থ থেকে যেমনি রাজস্ব আদায় করতে পারে না সরকার তেমনি দেশের মাটিতে গড়ে ওঠা নবীন খেলোয়াড়রা ছিটকে পড়ে খেলার মাঠ থেকে। এখন আসি শিক্ষার্থীদের কথায়- আমাদের দেশে রয়েছে বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটিসহ বেশকিছু নামকরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপের মাধ্যমে পড়তে আসে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশে পড়াশোনা করার পাশাপাশি অনেক শিক্ষার্থী খুঁজতে থাকে কাজের সন্ধান। আবার অনেকেই কাজ না করতে পেরে জড়িত হয় বিভিন্ন ধরনের মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আর আমাদের দেশের আইনের কঠোর প্রয়োগ না থাকার কারণে খুব সহজেই তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এসব মাদক পাচার করতে সক্ষম হয়। আর এভাবেই দিনের পর দিন সরকার হারাতে থাকে রাজস্ব আর বাড়তে থাকে বেকারত্ব এবং দেখা দিতে থাকে অর্থনৈতিক মন্দা। বিদেশি এসব নাগরিকের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি তালিকাভুক্ত ছাড়া অবৈধভাবে প্রবেশ করা শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো এবং এই সম্পর্কিত আইনের প্রয়োগই পারে আমাদের দেশের বেকার সমস্যা সমাধান করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে। শামীম আল-মামুন শিক্ষার্থী ব্যবস্থাপনা বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।