শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

দক্ষিণের মেয়রের প্রতি খোলা চিঠি

নতুনধারা
  ০৯ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যদি আপনি পুরনো ঢাকার দক্ষিণের অধিবাসী হন অথবা পুরনো ঢাকায় মাঝেমধ্যে পরিদর্শন করেন, তাহলে এখানকার রাস্তা-ঘাট, ময়লা-আবর্জনা, জলবদ্ধতা, অপরিষ্কার নর্দমা, স্ট্রিট লাইটগুলো অকেজো, ৫ বছর ধরে সূত্রাপুর বাজার অনির্মিত অবস্থায় পড়ে আছে দেখতে পাবেন। যত্রতত্র রাস্তার ওপর ময়লার কন্টেইনারগুলো এলাকার মানুষকে দুর্গন্ধে দুর্বিষহ করে তুলছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নতুন শহরের কয়েকশ গজ রাস্তা তৈরি করতে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই নতুন শহরকে তারা তিলে তিলোত্তমা করে গড়ে তুলুক, তাতেও আমাদের অর্থাৎ পুরনো ঢাকার জনগণের কোনো হিংসে নেই কিন্তু আমাদের বিশেষ করে পুরনো ঢাকার দক্ষিণাঞ্চলের বেহাল রাস্তাগুলোও তার ছিটাফোঁটা হিস্যা পেয়ে স্বাস্থ্যে-সৌন্দর্যে ঝলমলিয়ে উঠুক, এটা অবশ্যই কামনা করবেন। এখানকার এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতে যাত্রী সাধারণের প্রাণান্তকর অবস্থা দাঁড়ায়। এরপর আছে ওয়াসা, বিদু্যৎ, গ্যাস, টেলিফোন ইত্যাদির নানা খোঁড়াখুঁড়ি। প্রয়োজনে খোঁড়াখুঁড়ির প্রয়োজন হয় সত্য, কিন্তু সময়মতো তা ভরাট করার দায়িত্ব যারা খোঁড়েন তাদের ওপরই পড়ে। কিন্তু তারা সাধারণত সে দায়িত্ব পালন করেন না। পুরনো ঢাকার অধিবাসীরা জলবদ্ধতা, যানজট এবং ফুটপাত ও রাস্তার ওপর অবৈধ দোকানপাট, ধোলাইখালে অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড ও স্ট্রিট লাইট নিয়ে কম কথা বলা হয়নি। ময়লা আবর্জনায় ভরপুর, বন্ধ ড্রেন-নর্দমা, খানা-খন্দকে আর কাঁদা-পানি ও ধুলোবালিতে ভরপুর এই পুরনো ঢাকার জনগণ দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের নিকট এতদিন জিম্মি হয়ে ছিল। দেখার বা সমস্যাগুলো সমাধানের কেউ ছিল না। পরিচ্ছন্নকর্মীর সংকট, ময়লা-আবর্জনা বহন করার মতো পর্যাপ্ত ট্রাকের অভাব লেগেই আছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে জুরাইন কবরস্থান সংস্কারের নামে দীর্ঘসূত্রতা বড়ই পরিতাপের বিষয়। সামান্য বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার জন্য জুরাইন কবরস্থানে লাশ নিয়ে যাওয়া যায় না। তবে আপনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের চেহারার অনেক পরিবর্তন লক্ষণীয় ও দৃশ্যমান। এখন মশার ওষুধের গন্ধ নাকে লাগে। নগরীতে মশা কিন্তু নেই। বন্ধ কাজগুলো আবার শুরু হয়েছে। যানজটের কারণে পুরান ঢাকার সরু রাস্তা-ঘাট কিছুটা বড় করা নগরবাসীর স্বার্থে খুবই দরকার। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্ব্বাবধানে গেন্ডারিয়ার লোহারপুল হতে মিরপুর অথবা টঙ্গী পর্যন্ত বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করার ব্যবস্থা করলে পুরান ঢাকার জনগণের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ লাঘব হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সেবার নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অহংকার, অহমিকা, অসহযোগিতা সর্বোপরি নগরবাসীর প্রতি অবহেলা ও উদাসীনতা প্রদর্শন সত্যিই নগরবাসীকে হতাশ শুধু করেনি বরং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্মানিত নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতে নিজেকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারছি না। এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দৌরাত্ম্য আগের মতো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে গ্রাস করতে বসেছে। এবারের কোরবানির ঈদের সপ্তাহ খানিক আগে থেকেই আমি নিজেই দক্ষিণের প্রধান বর্জ্যব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, জোনাল ৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, জোনাল ৫-এর সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাসহ স্বয়ং আপনার সহকারী একান্ত সচিবের সঙ্গে টেলিফোনে এবং মুঠোফোনে ম্যাসেজ প্রেরণের মাধ্যমে একটু বিস্নচিং পাউডার ও ২টি বর্জ্য অপসারণের ব্যাগ সরবরাহের অনুরোধ করেছিলাম। এপিএস ছাড়া দক্ষিণের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের কথাবার্তায় সেবার পরিবর্তে বিরক্তির অভিব্যক্তি ছিল লক্ষণীয়। এক ছটাক বিস্নচিং পাউডার বা বর্জ্য অপসারণের একটি ব্যাগ তো দেননি বরং নগরবাসীর প্রতি তাদের অবহেলা ও উদাসীনতা ছিল প্রকট। একজন লেখক ও সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও ঈদের দিন পর্যন্ত আমাদের সড়কে বিস্নচিং পাউডার ছিটানো হয়নি। বর্জ্য অপসারণের ব্যাগ ও বিস্নচিং পাউডার সরবরাহ তো দূরের কথা বারবার যোগাযোগে তাদের অহমিকা ও বিরক্তি প্রকাশ আমাদের ব্যথিত করেছে। এবার বুঝুন সাধারণ নাগরিকদের কি অবস্থা? প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর সাহেব কেন আমি বিভিন্ন জায়গায় ম্যাসেজ পাঠাচ্ছি কোনোভাবেই বিস্নচিং পাউডার সরবরাহ করা সম্ভব নয় বলে ফোন রেখে দেন। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যাদের ধৈর্য, সহানুভূতি এবং মানবিক গুণাবলিতে ভরপুর এ ধরনের কর্মকর্তাদের ডিএসসিসিতে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে এরা নগরবাসীর সেবা দেওয়াকে মূলত প্রাধান্য দেবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিষয়টি গুরুতর। ইতিমধ্যে পুরনো ঢাকার বেশকিছু রাস্তা-ঘাট বিগত ৫ বছর ধরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বন্ধ ছিল তা আবার শুরু হয়েছে। মাননীয় মেয়র আপনাকে ধন্যবাদ। সেবার কাজে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে একটি মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে নগরবাসীর সহযোগিতা আপনি অবশ্যই পাবেন। আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করি। তবে সুখের খবর এই যে, আপনি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়ে আসার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকান্ডের গতি ফিরে এসেছে। আপনার গতিশীল নেতৃত্বের প্রতি স্যালুট ও পুরান ঢাকার জনগণের সহযোগিতা ও দোয়া সর্বত্র থাকবে। পরিতাপের বিষয় এই, ঢাকা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ঈদের পরে আমাদের এলাকার বিস্নচিং পাউডার ছিটায়নি। বিষয়টি দুঃখজনক। আমি স্বয়ং বিস্নচিং পাউডার ও বর্জ্যের ব্যাগগুলো চাওয়া সত্ত্বেও যা আজ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করেনি। আশা করি, মেহেরবাণী করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন।

মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী আহ্বায়ক, পুরনো ঢাকা জনকল্যাণ সমিতি ফরিদাবাদ-গেন্ডারিয়া

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে