চারদিকে প্রতারণার ফাঁদ পাতা। মানুষ যদি সচেতন না হয়, তা হলে এ ফাঁদে খুব সহজেই পড়তে পারে। সারা দেশেই নানাভাবে প্রতারণার জয়জয়কার চলছে, কোনোরকম প্রতিকারহীনভাবে। যতই দিন যাচ্ছে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতারণা বেড়েই চলেছে। আর এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বিদেশিরাও। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, আমেরিকান নাগরিক পরিচয় দিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিপরীত লিঙ্গের কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন বাংলাদেশে বসবাসরত চার নাইজেরিয়ান নাগরিক। একপর্যায়ে দামি উপহার পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে অভিনব পন্থায় হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা। আবার এই চার নাইজেরিয়ানকে কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে প্রতারণায় সহায়তা করে আসছিলেন বাংলাদেশি এক নারী। রাজধানীর কাফরুল ও পলস্নবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে নাইজেরিয়ান ওই চার নাগরিক ও বাংলাদেশি নারীকে আটক করেছের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব-৪)। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট, ব্যাংকে অর্থ জমা করার বই, চেকবই, ১২টি মোবাইল ফোন, একটি প্রাইভেট জিপ গাড়ি, নগদ তিন লক্ষাধিক টাকাসহ হোয়াটসঅ্যাপ-ইমো-ফেসবুকে কথোপকথনের স্ক্রিনশটের কপি জব্দ করা হয়। এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ঈদের আগে রাজধানীর পলস্নবী এলাকা থেকে বাংলাদেশি এক নারীসহ ১২ নাইজেরিয়ান নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। সংস্থাটির তথ্যমতে, চক্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রতারণার মাধ্যমে সারা দেশ থেকে গত দুই মাসে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রতারণার শিকার হয়ে এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তারা অভিনব উপায়ে বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব তৈরি করেন। একই কায়দায় বন্ধুত্বের একপর্যায়ে ম্যাসেঞ্জার থেকে একটি উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। পরে ম্যাসেঞ্জারে এসব মূল্যবান সামগ্রীর এয়ারলাইন বুকিংয়ের ডকুমেন্ট পাঠান। উপহারের বক্সে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে বলেও ভুক্তভোগীকে জানানো হয়। তারা ভুক্তভোগীকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কাস্টম গুদাম থেকে সেগুলো রিসিভ করতে বলেন। এ সময় তাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী রাহাত নিজেকে কাস্টমস কমিশনার পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীকে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে বলেন। তারা সেই টাকা কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে পরিশোধের জন্য চাপ দেন। প্রতারকদের পাঠানো উপহার সংগ্রহ না করলে আইনি জটিলতার ভয় দেখায় প্রতারকচক্রটি। ভুক্তভোগী একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে তাদের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা জমা দেন। একইভাবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে সারা দেশ থেকে দুই মাসের মধ্যে শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতারকচক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে এ ধরনের প্রতারণা করে আসছে। তাদের বাংলাদেশে (নাইজেরিয়ান) অবস্থানের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এ ধরনের প্রতারণা হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে- যারা গ্রেপ্তার হচ্ছে, তাদের কী ধরনের শাস্তি হচ্ছে। অবৈধভাবে বিদেশিরা কীভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছে সেটিও বড় প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর নজরদারি আরও বাড়াতে হবে।
এ ছাড়া প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। নগদ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। মানুষ দুটো কারণে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। কেউ পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে আবার কেউ লোভের বশবর্তী হয়ে। রাতারাতি তাকে ধনী ও ক্ষমতাবান হতে হবে, এই স্বপ্ন তাকে পেয়ে বসে, বিভোর করে ফেলে। ফলে ওই ব্যক্তি নিষ্ঠুরতা অমানবিকতা ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়। এর পরিণতি কী হতে পারে ভেবেও দেখে না। এদের প্রতিহত করতে হবে যে কোনো উপায়ে। এই প্রতারণার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে যাতে এরা বেরিয়ে যেতে না পারে সে দিকেও বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। সরকারের কঠোর পদক্ষেপই কেবল পারে এ ধরনের প্রতারণা থেকে জনসাধারণকে রক্ষা করতে।