মাদকবিরোধী অভিযানে ৫৫ জন গ্রেপ্তার আরও বেগবান করতে হবে

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না মাদকের ভয়াবহ বিস্তার। যা দেশের সবাইকেই উদ্বিগ্ন করছে। বিশেষ করে অভিভাবকরা উৎকণ্ঠিত। এর বিষাক্ত ছোবল অকালে কেড়ে নিচ্ছে অনেক প্রাণ। অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণী হচ্ছে বিপথগামী। মাদকাসক্ত সন্তান বাবা-মাকে খুন করছে। এটা সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত নজির। এ থেকে পরিত্রাণের যেন কোনো পথই খোলা নেই। যদিও সরকার সারা দেশে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, রাজধানীতে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সেবন ও বিক্রির অপরাধে ৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত ডিএমপি ও মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ২ হাজার ৭০৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২ কেজি ২৭৫ গ্রাম গাঁজা, ৩০টি নেশাজাতীয় ইনজেকশন, ১০ গ্রাম হেরোইন, ১২০ বোতল ফেনসিডিল ও ১০ লিটার দেশি মদ উদ্ধার করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে ৩৪টি মামলা করা হয়েছে। উলেস্নখ্য, মাদক থেকে পরিত্রাণের আশায় ১৯৯০ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন (১৯৯০ সালের ২০নং আইন) প্রণীত হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকল্পে ওই আইন ১৯৯০ সালের ১ ফেব্রম্নয়ারি প্রণয়ন করা হয়। এরপরেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। উন্নতি হয়নি দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়েও। প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে ইয়াবা আর ফেনসিডিলের বাজার তৈরি হওয়ায় মিয়ানমার এবং ভারত সীমান্তে অসংখ্য ইয়াবা আর ফেনসিডিলের কারখানা গড়ে উঠছে। এসব কারখানায় বাংলাদেশের যুবসমাজের জন্য মিয়ানমার মরণ নেশা ইয়াবা এবং ভারত থেকে ফেনসিডিল উৎপাদন করে তা নির্বিঘ্নে সরবরাহ করা হচ্ছে। বলতে দ্বিধা নেই, এসব দেশে মাদক তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশের যুবসমাজের জন্যই। বাংলাদেশঘেঁষা সীমান্তে মিয়ানমারে অসংখ্য ইয়াবা কারখানা গড়ে উঠেছে। সেসব কারখানায় কোটি কোটি পিস ইয়াবা তৈরি হচ্ছে। অথচ মিয়ানমারের মানুষ, সেখানকার যুবসমাজ খুব একটা ইয়াবা আসক্ত নয়। কোনো কোনো এলাকায় ইয়াবা কী তা সেখানকার অধিবাসীরা জানেনই না। মূলত বাংলাদেশিদের জন্যই সেখানে ইয়াবা কারখানা গড়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, এ ব্যাপারে সে দেশের সরকারের মৌন সম্মতিও আছে। মিয়ানমার সীমান্তে ইয়াবা কারখানার কথা আমরা জানি, আমাদের সরকারও জানে, কিন্তু ইয়াবা চোরাচালান রোধ হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না এটাই এখন বড় প্রশ্ন? মাদক কারবারিরা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হচ্ছে, ধরাও পড়ছে মাঝেসাজে। যারা মাঝেমধ্যে ধরা পড়ে তারা কেবল চুনোপুঁটি। আবার ওদের গডফাদারদের বদান্যতায় ওরা সহসাই ছাড়া পেয়ে যায়। দেশের প্রতিটি সীমান্তেই এমন হচ্ছে। ভারতের সীমান্তেও অসংখ্য ফেনসিডিলের কারখানা গড়ে উঠেছে। সেখানেও এই একই অবস্থা। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো বাংলাদেশে মাদকের বাজার তৈরি করে নিয়েছে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে। এজন্যই দেশ মাদকে সয়লাব হচ্ছে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে দেশের অনেক রাঘব-বোয়াল জড়িত। আমরা মনে করি এই সংখ্যা অনেক। এদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে আমাদের যুবসমাজকে রক্ষা করা যাবে না, সফল হবে না মাদকবিরোধী অভিযানও। সরকারের পরিকল্পিত ও সফল উদ্যোগই কেবল পারে যুবসমাজকে মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষা করতে।