পাঠক মত

শান্তি, সৌহার্দ্য আর সৌন্দর্যের আঁধার গাজীপুর সদর উপজেলার বড় কয়ের গ্রাম

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
গাজীপুর সদর উপজেলার অন্তর্গত বাড়িয়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম বড় কয়ের। যা পূর্বে কাপাসিয়া থানাধীন রসুলপুর গ্রাম নামে পরিচিত ছিল। প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার বিশাল জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশই এখানে সনাতন ধর্মাবলম্বী। প্রাচীন কাল থেকেই এখানে উভয় ধর্মের লোকের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। গ্রামের মধ্যভাগ দিয়েই চলে গেছে পিচঢালা পাকা রাস্তা। গ্রামের শুরুতে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে স্কুল, মধ্য-পূর্ব স্থানে অবস্থিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সঙ্গেই আছে উচ্চ বিদ্যালয় তার পাশেই গা ঘেঁষে আছে নূরানী হাফিজিয়া ও দাখিল মাদ্রাসা। আছে একক বৃহৎ জামাতের বহুতল ভবন বিশিষ্ট বিশাল আয়তনের এক মসজিদ। যা বড় কয়ের জামে মসজিদ নামে পরিচিত। গ্রামের পূর্ব পাশে রয়েছে ভূঁইয়া (বড়বাড়ী) এবং সরকারবাড়ীর বিশাল আয়তনের পারিবারিক কবরস্থান। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য রয়েছে একক ২০০ বসরের পুরনো মন্ডপঘর ও বড় বৌ পুকুর। শতভাগ স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন সিংহভাগ মানুষই এখানে শিক্ষিত ও উচ্চ শিক্ষিত। উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামী পন্ডিত ও বুজুর্গ ব্যক্তি মাওলানা কবির উদ্দিন সাহেবের জন্ম এই গ্রামেই। যাকে তদানীন্তন ( ব্রিটিশ শাসন কাল) সময়ে দিলিস্নর রহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়। গাজীপুর সিটির সঙ্গে এই বড় কয়ের গ্রামটির সম্পর্ক ছেদনকারী বালুনদী যাকে তুরাগ কন্যাও বলা হয়; সেই নদীর উপর রয়েছে একটি পাকা ব্রিজ যা বাকি দুনিয়ার সঙ্গে এই বড় কয়ের গ্রামকে সংযুক্ত করেছে। এই নদীটি গ্রামের উত্তর-পশ্চিমে বয়ে গেছে। গ্রামের পূর্ব দিক দিয়ে আরও একটি খাল- যা বগা দোনা খাল নামে পরিচিত, সেটি বয়ে গেছে। ভৌগোলিকভাবে এই গ্রামটা অনেকটাই যেন ঈসা খাঁর গড়া সেই রাজধানীর আদলে সৃষ্টি। বর্ষাকালে যার চতুর্দিকে থাকে পানি। বিধাতার সৃষ্টি অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে নিঃসন্দেহে এই বড় কয়ের গ্রামটিও তার একটি অনন্য উদাহরণ। গ্রামের পূর্ব অংশে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে বিল-বেলাই। বর্ষা মৌসুমে এই বিল-বেলাই হয়ে ওঠে আশপাশে অনেকগুলো গ্রামের মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস কথাটা অতু্যক্তি হবে কি না জানি না- তবে এতটুকু বলতে পারি যিনি একবার এই বিল-বেলাইয়ের মাছের স্বাদ আস্বাদন করবেন তিনি বাকি জীবনে তার স্বাদ ভুলতে পারবেন না। শুকনো মৌসুমে এই বিল-বেলাই জুড়ে হয় বোরো ধানের আবাদ। এখানকার বেশির ভাগ মানুষের সারা বছরের খাবারের জোগান হয় এই বোরো জমি থেকেই। গ্রামের উত্তর পাশে বিল-বিলাস পিকনিক স্পট আছে- যা নৌভ্রমণ পিপাসুদের জন্য চমৎকার স্থান হতে পারে। চারিদিক পানি বেষ্টিত ছোট্ট দ্বীপের মতো দেখতে এই রিসোর্টটি সৌন্দর্য পিপাসুদের অবশ্যই মন কাড়বে। ঢাকার অদূরে পূবাইল এলাকার এই গ্রামটি যাতায়াতের ক্ষেত্রেও বেশ সুবিধা জনক স্থানে। এখানকার বেশির ভাগ চাকরিজীবী যারা জীবিকার তাগিদে শহরমুখী হন তারা প্রায় সবাই নিজ বাড়ি থেকেই শহরে আসা যাওয়া করেন। এর চেয়ে শান্তি তাদের জন্য আর কি হতে পারে? অবশ্য মাঝে মাঝে ট্রাফিক জ্যামের কারণে যাতায়াত দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এটা আমাদের একক সমস্যার আওতাভুক্ত হতে পারে না। এই সমস্যা বাদে অবশ্যই বলা যায় শান্তি, সৌহার্দ্য আর সৌন্দর্যের আঁধার এই বড় কয়ের গ্রাম। তথ্য : 'ফ্রেন্ডস গ্র্যাজুয়েট ক্লাব' পুবাইল