বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুভ জন্মাষ্টমী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক সর্বত্র

নতুনধারা
  ১১ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রাণপুরুষ মহাবতার শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি- শুভ জন্মাষ্টমী আজ। এই মহাপুণ্য তিথিতে দেবকী ও বাসুদেবের আকুল প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে অত্যাচারী কংসের কারাকক্ষে পুত্ররূপে আবিভূর্ত হন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় উলেস্নখ আছে, যখনই পৃথিবীতে অধর্মের প্রাদুর্ভাবে ভক্ত ও সর্বসাধারণের জীবন দুর্বিষহ ও অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, দুরাচারীর অত্যাচার ও নিপীড়ন বৃদ্ধি পায়, তখন ধর্ম সংস্থাপনের জন্য কৃপাবশত ঈশ্বর 'অবতার' রূপে এই নশ্বর পৃথিবীতে আগমন করেন। তখন তিনি ষড়গুণ তথা ঐশ্বর্য, বীর্য, তেজ, জ্ঞান, শ্রী ও বৈরাগ্যসম্পন্ন 'পুণ্যাবতার'রূপে প্রকাশিত হন। তার আবির্ভাবে ধরণী হয় পাপভারমুক্ত। সাধুসজ্জন ও ভক্তদের মনে সঞ্চারিত হয় অনাবিল আনন্দ। প্রসঙ্গত 'জন্মাষ্টমী' হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব।

এই পৃথিবীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্মধারী শ্রীকৃষ্ণরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন দ্বাপর যুগে। তার জন্ম হয়েছিল বর্ণমালা পিতাসন পরিহিত অবস্থায়। সর্বাঙ্গে ছিল বহুমূল্য বলয় ও মণি-মুক্তাখচিত অলঙ্কারাদি। তার আগমনী বার্তায় কারাগারের লোহার শিকল ও বন্ধ দরজা আপনা-আপনি উন্মুক্ত হয়ে যায়। অঝোর বারিধারার সিঞ্চন থেকে রক্ষায় অনন্তদেব ফণা বিস্তার করে চক্রধারণ করেন। ভরা ভাদ্রের প্রমত্তা যমুনা তার গমনপথ সুগম করে দেয়। তিনি মানবদেহ ধারণ করে ১২৫ বছর জীবিত ছিলেন। তার জীবনকালকে বিন্যস্ত করলে দেখা যায়, মথুরায় তার জন্ম, গোকুলে নন্দালয়ে পরিবর্ধন, মথুরায় কংস বধ, রাজ্যাধিকার, কুরুক্ষেত্রে পান্ডবদের সঙ্গে সখ্য স্থাপন, দ্বারকায় রাজধানী স্থানান্তর ও অতঃপর লীলাবসান।

অত্যাচারী ও দুর্জনের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় সাধুজনের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই তিনি মানবদেহ ধারণ করেছিলেন। তিনি শিষ্টের পালন ও দুষ্টের দমনে ব্রতী ছিলেন। সত্য ও ন্যায়প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণ তাই ভগবানের আসনে অধিষ্ঠিত এবং পূজিত। শ্রীকৃষ্ণের শ্রেষ্ঠ অবদান শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের মুখ নিঃসৃত বাণীসমূহই এই মহাগ্রন্থে স্থান পেয়েছে। সব বেদ ও উপনিষদের সারসংক্ষেপও শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। গীতায় ঈশ্বর সাধনার বিভিন্ন পথ রয়েছে। জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তি যে কোনো পথ ধরে সাধনা করলে ঈশ্বরকে লাভ করা যায়। এজন্যই গীতা মানবজীবনের পূণার্ঙ্গ জীবনদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, বিশ্বাস ও প্রেমেই শ্রীকৃষ্ণকে পাওয়া যায়। তিনি অপরাজেয়, ক্ষমাশীল ও পুণ্যময়।

নিজের জন্ম সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, মানুষ জন্মগ্রহণ করে এবং মারা যায় কিন্তু আমি জন্মরহিত হয়েও আবির্ভূত হই এবং অবিনশ্বর হয়েও অন্তর্ধান হয়ে থাকি। আবির্ভূত এবং অন্তর্হিত হওয়া দুটোই আমার অলৌকিক লীলা। মানুষ কর্মের কারণে জন্ম নেয় এবং আয়ু ও সুখ-দুঃখ ভোগ করে। আর ভগবান সব সময় আয়ু, সুখ ও দুঃখের ঊর্ধ্বে। ভগবান শুদ্ধ প্রকৃতিরূপ শক্তিকে আশ্রয় করে আবির্ভূত হন এবং অবতাররূপে সেই শক্তি দিয়েই কাজ করেন। তিনি এই দেহকে মথুরা এবং আত্মাকে কংসরূপেও চিহ্নিত করেছেন। তিনি উলেস্নখ করেন, আত্মার মুক্তিই হচ্ছে প্রকৃত মুক্তি। গীতায় তিনি মানুষের নিষ্কাম কর্মের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বলেছেন- কর্মই শ্রেষ্ঠ। ফলের আশা না করে কর্ম করলে পরমাত্মায় বিলীন হওয়া যায়। আর এরূপ হলে তার আর পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে দুঃখ ভোগ করতে হয় না। তার আত্মা মোক্ষ লাভ করে। শ্রীকৃষ্ণের বাণী, উপদেশ-নির্দেশ মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি। তিনি ষড়গুণ যথা ঐশ্বর্য, বীর্য, তেজ, জ্ঞান, শ্রী ও বৈরাগ্য সম্পন্ন 'পুণ্যাবতাররূপে' প্রকাশিত হন। তার জন্মলীলা-ই জন্মাষ্টমী নামে অভিহিত।

শ্রীকৃষ্ণের ধরাধামে আবির্ভূতকালের মতো আমরা যেন এক এক অস্থির সময় অতিক্রম করছি। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের নানা অসঙ্গতির মধ্যদিয়ে প্রতিনিয়ত দিনাতিপাত করতে হচ্ছে আমাদের। মানুষের ভেতর থেকে ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে সদগুণাবলি। মানুষ একে অন্যের প্রতি হিংস্র হয়ে উঠছে। কাম-ক্রোধ-লোভে বশীভূত মানুষ স্বার্থের নেশায় অনাচারে লিপ্ত হয়ে উঠেছে। অশান্তি আর অরাজকতায় ভরে উঠেছে আমাদের চারপাশ। ফলে আজকের বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ধর্মীয় অনুশাসন আমাদের শান্তির পথ সুগম করতে পারে। বিশ্বের সব মানুষ আপনাপন ধর্মের অনুশাসন মেনে জীবনকে ঈশ্বরময় করে গড়ে তুলতে পারলেই কেবল এই পৃথিবী শান্ত ও শান্তিময় হতে পারে। শুভ জন্মাষ্টমী তিথিতে সবার অন্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক- এটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<108367 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1