দেশ এগিয়ে যাচ্ছে

ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে

প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ এমন নেতিবাচক অভিধা থেকে অনেক আগেই বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। যেসব দেশ এক সময় বাংলাদেশকে নিয়ে এমন বিরূপ সমালোচনা করত, বতর্মানে সেসব দেশই বাংলাদেশের অভ‚তপূবর্ উন্নয়নের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অস্বীকার করার অবকাশ নেই যে, স্বাধীন সাবের্ভৗম দেশ হিসেবে অভ্যুদয়কালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল শতকরা ৮৫ ভাগ। স্বাধীনতার ২৯ বছর পরে ২০০০ সালেও দেশে দারিদ্রের হার ছিল শতকরা ৪৮ দশমিক ২ ভাগ। অথার্ৎ প্রতি ১০ জনে প্রায় ২ জন গরিব ছিল। আশার কথা যে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবের্শষ জরিপ মতে, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার দঁাড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। দারিদ্র্যের হার কমে আসার এ ঘটনা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের সুনিদির্ষ্ট পদক্ষেপ ও দূরদশীর্ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের পরিপ্রেক্ষিতেই দারিদ্র্যের হার নিম্নমুখী। জানা যাচ্ছে, সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ২০১৭-১৮ অথর্বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার প্রক্ষেপণ করেছে ২১ শতাংশ। চলতি বছর শেষে এই হার কমে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশে দঁাড়াবে বলেও বিশেষজ্ঞরা প্রাক্কলন করেছেন। জানা যায়, দারিদ্র্য হ্রাস হচ্ছে এবং প্রবৃদ্ধি বাড়ছে; পাশাপাশি অথৈর্নতিক বৈষম্যও প্রকট, তখন স্বাভাবিকভাবেই দ্রারিদ্র্য হ্রাস কমর্সূচি বাস্তবায়নে উদ্ভ‚ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার যথাযথ উদ্যোগ নেয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। গণমাধ্যমের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে উঠে আসে, উন্নয়নশীল অনেক দেশের চেয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। আবার এটাও জানা যায়, দেশের মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। বতর্মান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আধুনিক প্রযুক্তিনিভর্র, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠনে ‘রূপকল্প ২০২১’ অনুযায়ী অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিভিন্ন কমর্সূচি, প্রকল্প ও নীতি গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন চলমান আছে। পরিকল্পনাসমূহের মূল লক্ষ্য হচ্ছে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অজের্নর মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসন ও আয় বৈষম্য দূরীকরণ এবং অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ ও জ্ঞানভিত্তিক অথৈর্নতিক কাঠামো গড়ে তোলা। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, দারিদ্র্য কমানোর পাশাপাশি যথাযথ নীতি নিধার্রণ এবং তার যথাথর্ বাস্তবায়ন ঘটানো জরুরি, যাতে বৈষম্য কমে সামগ্রিক উন্নয়ন আরও টেকসই হয়। তথ্য মোতাবেক, ৭০ ডলার মাথাপিছু আয় নিয়ে যাত্রা করা বাংলাদেশ তিনটি শতর্ পূরণ করেই উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে ২০২৪ সালে। তবে, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে অতি দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রবৃদ্ধির বতর্মান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে অতি দারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ হবে। আর এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে গড়ে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অজর্ন করতে হবে। আমরা মনে করি, ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে হলে দীঘর্ ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি উন্নয়ন পথের প্রতিবন্ধকতাসমূহ শনাক্ত ও তা দূরীকরণের ক্ষেত্রেও যথাযথ পদক্ষেপ থাকা অপরিহাযর্। বতর্মান সরকারের উন্নয়নবান্ধব নীতি ও দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এডিপি বাস্তবায়নে সবোর্চ্চ প্রয়াস নেয়ার ফলে দারিদ্র্য দিন দিন কমে আসছে। আমরা মনে করি এসব উন্নয়ন কমর্কাÐের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা আবশ্যক। সবোর্পরি বলতে চাই, প্রতিবেশী ও সমপযাের্য়র রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অভূতপূবর্ সাফল্য বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। দেশের সবের্ক্ষত্রে সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের আথর্-সামাজিক উন্নয়ন তথা দারিদ্র্য বিমোচনে সুশাসনের ভ‚মিকাও অপরিসীম। আমরা মনে করি, বৈষম্য কমাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বাড়াতে হবে। কমর্সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষার পরিধি আরও বিস্তৃত করতে হবে। জোর দিতে হবে নাগরিকের ক্ষমতায়নের ওপর। এ ছাড়া দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগে গতিশীলতা আনা, দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলা, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে মূলধন ও শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, সবুজ প্রবৃদ্ধি অজের্নর মাধ্যমে টেকসই, সমৃদ্ধ, অন্তভুির্ক্তমূলক এবং জলবায়ুসহিষ্ণু ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়াসহ সরকারের যেসব পরিকল্পনা রয়েছে, আমরা প্রত্যাশা করব এগুলো যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূতির্ আরও উজ্জ্বল হোক।