শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বানভাসিদের দুর্ভোগ কার্যকর পদক্ষেপ নিন

নতুনধারা
  ১৩ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা বন্যামুক্ত হচ্ছে। তবে দুর্ভোগ কমেনি বানভাসিদের। পানি কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। আমাশয়, ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগের সঙ্গে রয়েছে চর্মরোগ। দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকায় মানুষের হাত, পা ও আঙুল ফেটে ঘা হয়ে যাচ্ছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। বন্যাকবলিত বিভিন্ন জায়গায় টিউবওয়েল ডুবে গেছে। আর যেসব টিউবওয়েল জেগেছে সেগুলো দিয়ে পানি উঠছে না। নদী ও খাল-বিলের পানিতে বিভিন্ন আবর্জনা ভাসছে। পানি ফুটিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে খাওয়ার উপযোগী করার উপায় নেই। দুর্গত এলাকার লোকজন রোগব্যাধি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসাসেবা সহায়তা মিলছে না। তার ওপর মানুষের হাতে কাজ নেই; ফলে হাতে নেই টাকা পয়সা। এতে করে ঘরবাড়ি মেরামত করা, ভেঙে পড়া নলকূপ ও বাথরুম সংস্কার নিয়ে মানুষ বিপাকে পড়েছেন। এই অবস্থায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা চললেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল বলছেন বানভাসিরা। মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদি পশুও। একই সঙ্গে পশু খাদ্যেরও তীব্র সংকট। বেশিরভাগ গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে।

দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃত বন্যায় এ পর্যন্ত অর্ধকোটিরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় দেশের ৩৩টি জেলার ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৩১৩টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের ৫৪ লাখ ৫১ হাজার ৫৮১ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৩ জন। তবে সরকারি সাহায্য অব্যাহত রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত এলাকায় এ পর্যন্ত ১৯ হাজার ৫০০ টন ত্রাণের চাল, চার কোটি ২৭ লাখ টাকা, শিশুখাদ্য কেনা বাবদ এক কোটি ৫৪ লাখ টাকা, গো-খাদ্য কেনা বাবদ তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এক লাখ ৬৮ হাজারটি শুকনা খাবারের প্যাকেট, ৪০০ বান্ডিল ঢেউটিন এবং গৃহ নির্মাণের জন্য ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত ৩৩টি জেলায় এক হাজার ২৯৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৪০ হাজার ৩৬০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় কেন্দ্রে আনা গবাদি পশুর সংখ্যা ৬৭ হাজার ৪০৮টি। আরো আশার খবর হচ্ছে, ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বন্যাদুর্গত ৩৭ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে শাকসবজির বীজ বিতরণের জন্য ১০ কোটি ২৬ লাখ ৯২ হাজার ৬৮৫ টাকার প্রণোদনা দেবে সরকার। এজন্য ৩৭ জেলার জেলা প্রশাসক ও কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির অনুকূলে প্রণোদনার অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এক লাখ ৫১ হাজার ৬০০ জন কৃষক প্রণোদনা পাবেন। এ প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় স্বল্পমেয়াদি সবজি হিসেবে লালশাক, ডাঁটাশাক কলমিশাক, মুলাশাক, পুঁইশাক, পালংশাক ও পাটশাকের বীজ কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। মধ্যমেয়াদি সবজি হিসেবে শসা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, করলা, মরিচ, বরবটি ও শিমের বীজ বিতরণ করা হবে। শিম বীজ স্বল্পকালীন এবং অন্যান্য সব সবজির বীজ হাইব্রিড হবে।

বানভাসিদের জন্য সরকারের নানা ইতিবাচক উদ্যোগ ও তৎপরতার কারণে তাদের দুর্ভোগ কমে যাবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। তবে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাদের কাজের ব্যাপারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো রকম অনিয়ম দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। বানভাসিদের ব্যাপারে মানবিক হতে হবে। এই দুর্যোগে সরকারের পাশাপাশি দেশের বিত্তবানদেরও তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<108580 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1