জিডিপি কমলেও মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনা পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতাও হারিয়েছে। এমন অবস্থায় করোনা সংকটে বিশ্ব অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল যে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (ডিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমেছে তবে মাথাপিছু আয় বেড়েছে। তথ্য মতে, ডিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। বিপরীতে মাথাপিছু গড় আয় বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৪০ টাকা। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও মাথাপিছু আয়ের নয় মাসের সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে। এতে বিদায়ী অর্থবছরের মার্চ মাসের হিসাবে এমনই চিত্র উঠে এসেছে। তবে করোনাভাইরাস মহামারিকালের এই কঠিন সময়ে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে খুবই আনন্দের এবং আশাব্যঞ্জক বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। বলা দরকার, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে সরকার। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে মহামারির সময়ে উচ্চাভিলাষী এই প্রবৃদ্ধি ধরার জন্য বাজেট ঘোষণার পর পরই অর্থনীতিবিদরা সরকারের সমালোচনাও করেছিলেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরেও জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। করোনার কারণে তা কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ পুনর্র্নিধারণ করেছিল সরকার। তবে মহামারির মধ্যেও কৃষিতে উৎপাদন ভালো হয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স খুবই ভালো ছিল। বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাথাপিছু গড় আয় হয়েছে দুই হাজার ৬৪ ডলার। অর্থাৎ প্রতি ডলার সমান ৮৫ টাকা ধরলে বার্ষিক আয় এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৪০ টাকা। এক্ষেত্রে গড়ে প্রত্যেকের মাসিক আয় ১৪ হাজার ৬২০ টাকা। আগের অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৯০৯ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ১৫৫ ডলার আয় বেড়েছে। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয়ের ঊর্ধ্বগতি আশাপ্রদ বিষয়। কিন্তু করোনার কারণে প্রবৃদ্ধি কম হলেও মাথাপিছ আয় বেড়েছে, এই বিষয়টিকে আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। প্রসঙ্গত, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে এটা বলা দরকার যে, মাথাপিছু আয় বাড়লেও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে এমন বিষয় বারবার আলোচনায় আসে। ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়লেও সুযোগ-সুবিধার অভাবে দরিদ্ররা দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে এমনটিও খবরে উঠে এসেছে বিভিন্ন সময়ে। ফলে সামাজিক বৈষম্যের এই দুষ্টচক্র ভাঙতে না পারলে সংকট বাড়তে পারে, এমন সতর্কতাও রয়েছে বিশ্লেষকদের- যা আমলে নেওয়া জরুরি। একদিকে দারিদ্র্য কমছে, অন্যদিকে ধনী-গরিবের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ছে- এমনটি ঘটলে তা নিশ্চিতভাবেই উদ্বেগের বিষয়। মূলত সম্পদের অসম বণ্টন এবং অবৈধ আয়ের উৎসের কারণে আয় বৈষম্য প্রকট হচ্ছে এমনটিও উঠে এসেছে নানা সময়। মাথাপিছু আয়ের ঊর্ধ্বগতির সুফল সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়ার কথা নানা সময়ে বিশ্লেষকরা বলেছেন। আমরা মনে করি, সেসব বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। আর এ জন্য ঘুষ, দুর্নীতি, কর ফাঁকির মতো বিষয়গুলো কঠোরভাবে প্রতিরোধ করার ওপরও গুরুত্বারোপ করতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, করোনা সংকটের কারণে হঠাৎ করেই জিডিপিতে ধাক্কা লেগেছে এটিকে আমলে নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে মাথাপিছু আয় বেড়েছে এই বিষয়টি ইতিবাচক এখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখা। সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিসহ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, বাণিজ্য, বৈদেশিক আয় ইত্যাদি খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। এখন করোনা পরিস্থিতিকে সামনে রেখে আগামী দিনের সমৃদ্ধি অর্জনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এ ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা নিরসন কাজ করতে হবে। বৈষম্য বিলোপে টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।