দেশে ফেরা প্রবাসীদের জীবিকা সংকট যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ১৪ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনা পরিস্থিতি সবকিছুকেই বিপর্যস্ত করেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতেই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে জানা যাচ্ছে, কোভিড-১৯ এর কারণে উপার্জনব্যবস্থা, সামাজিকসেবা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সহায়তার নেটওয়ার্কের অভাবে হাজারও অভিবাসী কর্মী প্রবাস থেকে বাংলাদেশে তাদের জেলায় ফিরে আসতে বাধ্য হন। ২০২০ সালের ফেব্রম্নয়ারি থেকে জুনের মধ্যে বিদেশফেরতদের প্রায় ৭০ শতাংশ বাংলাদেশি দেশে ফিরে কোনো কাজ পাচ্ছেন না বলেও জানা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়টি সামগ্রিকভাবেই উদ্বেগের জন্ম দেয়। উলেস্নখ্য, দেশের ১২ জেলায় বিদেশফেরত অভিবাসীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এমন তথ্য পেয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। যেখানে বলা হয়েছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৩ শতাংশ কোভিড-১৯ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন এবং পরিবারের কাছে ফেরত আসতে চেয়েছেন। পরিবার তাদের ফেরত আসতে বলায় ফিরে এসেছেন ২৬ শতাংশ। সীমান্ত বন্ধ করে দিলে আটকে পড়ার ভয়ে ফিরে এসেছেন ৯ শতাংশ। এটাও বলা দরকার, সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে মোট এক হাজার ৪৮৬ জন বিদেশফেরত অভিবাসীর ওপর এই জরিপটি চালানো হয়। উঠে এসেছে যে, গত মে ও জুলাই মাসে দেশের ১২টি উচ্চ অভিবাসনপ্রবণ জেলায় এই জরিপ পরিচালনা করা হয়, যার মধ্যে সাতটি জেলায় ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। আমরা বলতে চাই, যখন ফেরত আসা অভিবাসীরা জীবিকা, আর্থিক সংকট, স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিষয়সহ পুনরেত্রীকরণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তখন বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। একই সঙ্গে এটা বিবেচনায় রাখতে হবে, অপরিকল্পিত ও বৃহৎসংখ্যক জীবিকাহীন অভিবাসী কর্মী ফেরত আসায় সারা দেশে রেমিট্যান্সনির্ভর জনগোষ্ঠীর ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না. কোভিড-১৯ এর কারণে উপার্জনব্যবস্থা, সামাজিকসেবা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সহায়তার নেটওয়ার্কের অভাবে হাজারও অভিবাসী কর্মী প্রবাসে যে দেশে কাজ করছিলেন, সেখান থেকে বাংলাদেশে তাদের জেলায় ফিরে আসতে বাধ্য হন। কর্মস্থলে তথ্য ও স্বাস্থ্যসেবা পেতে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন ৬৪ শতাংশ প্রবাসী। ফলে এটা বলা দরকার, একদিকে দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃতু্যর সংখ্যা বাড়ছে, বিভিন্ন খাত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে দেশে ফেরা প্রবাসীরা নানামুখী সংকটে পড়ছেন, ফলে সর্বাত্মক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের এটা বিষয়টিও আমলে নিতে হবে যে, জরিপে অংশগ্রহণকারীর ৭৫ শতাংশ ব্যক্তি তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলছেন, তারা আবার অভিবাসনে আগ্রহী। তাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের আগে যে দেশে কাজ করতেন, সেই দেশেই পুনরায় অভিবাসনে ইচ্ছুক। অন্যদিকে, ৬০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী আরও ভালো বেতনের চাকরি নিশ্চিতে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আগ্রহী। এ ছাড়া জরিপে ৫৫ শতাংশ জানান, তাদের ওপর ঋণের বোঝা রয়েছে। আমরা মনে করি, সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এমনিতেই সারা বিশ্বেই অস্থিরতা ও বিপর্যস্ত পরিস্থিতি বিরাজমান। দেশেও নানা ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে গ্রহণযোগ্য ও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে না পারলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হবে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। এটাও বলা দরকার, দেশে করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকেই নিম্ন-আয়ের বহু মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। ক্রমে ক্রমে বেকার হচ্ছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তদেরও অনেকে। করোনা মহামারির মুখে দেশে বেকার হয়ে পড়া নিম্ন-আয়ের অনেক মানুষকেই পথে পথে সাহায্য চাইতে বা ভিক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে এমনটিও উঠে এসেছে। ফলে এই বিষয়গুলোকেও আমলে নিতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের এটা পর্যবেক্ষণ করতে হবে যে, বিদেশফেরতদের প্রায় ৭০ শতাংশ বাংলাদেশি দেশে ফিরে কোনো কাজ পাচ্ছেন না- যে বিষয়টি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং বিচার বিশ্লেষণ সাপেক্ষে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলয়া সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।