রাজধানীতে পরিবহন বিপযর্য়

সংকট নিরসনে দ্রæত পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষাথীের্দর ব্যাপক আন্দোলনের পর সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে আইন সংস্কারসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সড়ক-মহাসড়কে ফিটনেস ও বৈধ কাগজপত্রবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা। এতে রাজধানীতে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা ৬০ শতাংশের নিচে নেমে আসায় কয়েকদিন ধরেই নগরীতে যানবাহনের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার রাত থেকে লেগুনা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে রাজধানীর প্রায় সব সড়কেই শত শত যাত্রীকে চরম বিপযের্য়র মুখে পড়তে হয়। ভোগান্তির শিকার যাত্রীরা বলছেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করে লেগুনা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় জনসাধারণের এই দুভোর্গ। এ পরিস্থিতি সরকারের জন্য স্বস্তিকর নয় বলেও প্রতীয়মান হয়। অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, রাজধানীর মূল সড়কের বাইরে, যেখানে বাস চলাচল করতে পারে না সেখানের স্বল্প দূরত্বে পেঁৗছানোর অন্যতম বাহনই ছিল লেগুনা। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, স্বল্পগতির যানবাহন চলাচলের কারণে মহাসড়কে প্রাণহানি বেড়ে যাচ্ছে, বিশ্লেষকদের এমন পযের্বক্ষণ রয়েছে। স্বল্পগতির এসব যানের মধ্যে লেগুনা অন্যতম। গত ২৭ আগস্ট সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ জন্য লেগুনা চলাচলে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক মঙ্গলবার রাত থেকে রাজধানীর প্রায় দুইশত রুটে লেগুনা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। অন্যদিকে, বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি না করে লেগুনা বন্ধ করায় রাজধানীবাসীর অনেকেই তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতের জন্য সবাই কমবেশি ছাড় দিলেও গণপরিবহনের সংখ্যা না বাড়িয়ে হঠাৎ করে লেগুনা বন্ধের এই সিদ্ধান্ত সরকারের জন্য কিছুটা হলেও ‘হিতে বিপরীত’ হবে বলে মনে করছেন যাত্রীরা। তথ্য মতে, রাজধানীতে চার হাজারেরও বেশি হিউম্যান হলার দীঘির্দন ধরে চলাচল করছে। এসব হিউম্যান হলার চলাচলের অনুমতি দেয়া হয় মহানগর আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি বা মেট্রো আরটিসির পক্ষ থেকে। পদাধিকার বলে মহানগর পুলিশের কমিশনারই এই কমিটির প্রধান। ‘ঢাকা শহরে কোনো লেগুনা চলার কথা নয়। ঢাকা মহানগরীতে কোনো ধরনের লেগুনা চলবে না’- সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনারের এই বক্তব্যে হিউম্যান হলার মালিকরাও আশ্চযর্ হয়েছেন। মালিকরা বলছেন, এগুলো চলাচলের অনুমতি সরকার দিয়েছে। তবে সাবির্কভাবে জনদুভোের্গর কথা বিবেচনায় নিয়ে এবং বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা তৈরি করার পরই এগুলো বন্ধে সরকার পদক্ষেপ নিলে এই জনদুভোর্গ সৃষ্টি হতো না। এ প্রক্রিয়া সরকারের জন্য স্বস্তিকর হতো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বলাই বাহুল্য, রাজধানীতে মেট্রো রেলসহ সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় রাজধানীতে তীব্র যানজট লেগেই থাকে। এর মধ্যে পরিবহন সংকট হলে তা এক অবণর্নীয় দুভোের্গর বিষয়টিই সামনে আনে। রাজধানীতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রয়োজনীয় কাজে আসেন এবং কাজ শেষে বেরিয়ে যান। এ ছাড়া মহানগরের পাশ্বর্বতীর্ এলাকা থেকে অনেকেই নিয়মিত অফিস করেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। এ ছাড়া রয়েছে শ্রমজীবী অন্যান্য শ্রেণির মানুষের দৈনন্দিন আসা-যাওয়া। যাদের বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। এতে পরিবহন বিপযের্য়র ফলে চরমতম দুভোের্গ পড়তে হয় এসব মানুষকে। ফলে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের কতর্ব্য হওয়া দরকার সাবির্ক বিষয় বিবেচনা করা। সবোর্পরি বলতে চাই, হঠাৎ করে হিউম্যান হলার চলাচল বন্ধ করায় রাজধানীবাসী যেমন বিপযের্য়র মধ্যে পড়েছেন, তেমনইভাবে হিউম্যান হলারে নিয়োজিত চালক ও সহকারীরাও যে কমর্হীন হয়ে পড়েছেন তাতে সন্দেহ নেই। লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে যারা এসব হিউম্যান হলার সড়কে নামিয়েছেন, সরকারের কাছ থেকে নিবন্ধন নিয়েছেন- তারা এখন কি করবেন, ভাবতে হবে সে বিষয়টিও। গণপরিবহনের বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করাসহ শ্রমিকদের বিষয়টিও মানবিকভাবে বিবেচনায় নেয়া দরকার। আমরা মনে করি, সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্ত জনমনে অসন্তোষ তৈরি করলে তা কারও জন্যই সুখকর হতে পারে না।