মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে অস্থিরতা

নির্বাচনী ফল যাই হোক না কেন তা কেন্দ্রের সরকারের জন্য আপাতত মাথাব্যথার কোনো কারণ হিসেবে দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তবে থিন মার্জিন সরকারের স্থায়িত্বকে বাধাগ্রস্ত করেই যাবে, এটা স্পষ্ট। নভেম্বরে বাজেট অধিবেশনে পুরো বিষয়টা আরও স্পষ্ট হবে। সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

আহমদ মতিউর রহমান
মালয়েশিয়ার রাজনীতি বেশ কয়েকমাস ধরেই টালমাটাল। এই লেখাটা আরও কয়েকদিন আগেই লেখা যেত, কিন্তু বর্তমান ট্রেন্ডকে বোঝার জন্য একটি প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলির উপ-নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো। পেরাক রাজ্যে সেই উপ-নির্বাচনে সরকারি জোট পেরিকাতান নেসিওনাল (পিএন) জোটের দল আমনো প্রার্থী জয়ী হয়েছে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করব, বর্তমান ট্রেন্ড বোঝার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে মোটা দাগে কয়েকটা কথা বলে নেওয়া ভালো, প্রেক্ষাপটটা বুঝতে এতে সুবিধা হবে। 'দুর্নীতিবাজ' নাজিব সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ২০১৮ সালে রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং তাদের জোট বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসে। ৯২ বছর বয়সে নিজের পুরনো দল আমনো ছেড়ে তিনি নতুন দল গড়ে নির্বাচনে শামিল হন। তার সঙ্গে যোগ দেন তার পুরনো সহযোগী ও পরে শত্রম্ন আনোয়ার ইব্রাহিম। সমঝোতা ছিল দুই বছর পর মাহাথির আনোয়ারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নেবেন, কেননা জোটে আনোয়ারের দল পিকেআরের এমপি বেশি ছিল। কিন্তু মাহাথির কথা রাখেননি। রাজনীতির পাশা খেলায় মাহাথির ও আনোয়ার দুজনই হেরে যান। অকস্মাৎ পদত্যাগ করে বসেন মাহাথির। শেরাটন কু্য নামে পরিচিত সেই খেলায় জয়ী হয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ক্ষমতায় বসেন মাহাথিরের নতুন দল বেরাসাতুর আরেক শীর্ষ নেতা মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন আস্থা ভোটের মুখোমুখি না হয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে টিকে গেলেও বিপদ তার পিছু ছাড়েনি। প্রশ্ন উঠেছে তিনি টিকে থাকতে পারবেন তো? নিজের গড়া বেরাসাতু থেকে বহিষ্কৃৃত হন মাহাথির, গড়ে তোলেন আরও একটি নতুন দল। আর নাজিবের ১২ বছরের সাজা হওয়ায় তিনি আপাতত রাজনীতির বাইরে। এগুলো গত ৬ মাসের ডেভেলপমেন্ট। দেশে করোনা আর রাজনৈতিক দুর্যোগ পাশাপাশি চলেছে, দেখাই যাচ্ছে। আবার নতুন দল গড়ে মাহাথির কি চাইছেন সেটাও একটা প্রশ্ন বটে। পেরাকের নির্বাচনে মাহাথির প্রার্থী দিয়েছিলেন, কিন্তু কাজ হয়নি। রাজাক জেলে থাকলেও দেখা যাচ্ছে তার দল আমনো আরও শক্তি অর্জন করেছে। এর আগে আরও দুটি উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়েছে আমনো। মুহিউদ্দিনের ভয়টা সেখানেই। সেই কথায়ও পরে আসছি। মুহিউদ্দিনের বিপদ কোনখানে সে কথাও বলব। গত ফেব্রম্নয়ারিতে হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী মাহাথির পদত্যাগ করে বসায় দেশে রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয়। আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান করে মাহাথির চেয়েছিলেন আবার স্বপদে বহাল হতে। নির্বাচনপূর্ব সমঝোতা অনুযায়ী আনোয়ারও চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হতে এবং রাজার দরবারে দেন দরবারও করেন তিনি। সেই সংকট উত্তরণে রাজা মাহাথিরের নতুন দল বেরাসাতুর দ্বিতীয় নেতা মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের হাতে প্রধানমন্ত্রিত্ব তুলে দেন। আনোয়ারের দল ও জোট পাকাতান হারাপান তাকে সমর্থন দেয়নি, তাকে সমর্থন জোগায় তৎকালীন বিরোধী দল নাজিব রাজাকের আমনো ও আমনো জোটের ইসলামী দল পাস। মাহাথির এটা মেনে নেননি, মেনে নেননি আনোয়ারও। তারা পার্লামেন্টে মুহিউদ্দিনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ চান আর তা না হলে নতুন নির্বাচন চান। রাজা কোনোটাই না করে মুহিউদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসিয়ে দেন। জানা যায়, তিনি পার্লামেন্ট মেম্বারদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছেন মুহিউদ্দিনের পালস্না ভারী। মাহাথিরের পদত্যাগের কারণ ছিল পাকাতান হারাপান জোটে অস্থিরতা। হিসাব মতে আনোয়ার তখন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা। দুই বছর পার হয়ে গেলেও মাহাথির তা করেননি। এতে জোটে সংকট তৈরি হয়। কথা রক্ষা না করে মাহাথির করলেন পদত্যাগ। মাহাথিরের ধারণা ছিল আনোয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন না জোটে ভাঙন ধরার ফলে। এ কারণে তিনিই আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। গদি না পেয়ে আনোয়ার বেঁকে বসলেন। তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন তবে মাহাথিরও যেন আবার প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন। এই সুযোগে পাকাতান হারাপানের সমর্থনের আশায় না থেকে মুহিউদ্দিন হাত বাড়ান তার সাবেক দল আমনোর দিকে। আমনো সরকারে যাওয়ার এই সুযোগ লুফে নেয়। তারও আগে ২০১৮ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে একের পর এক নাটকীয়তা দেখা গেছে মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে। কথিত দুর্নীতিবাজ আমনো নেতা প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে নির্বাচনে হারাতে প্রায় দুই যুগ প্রধানমন্ত্রী থাকা প্রবীণ নেতা মাহাথির ফিরে আসেন ময়দানে। যে কথা আগে একটু বলেছি। তিনি আমনোর হয়ে দেশ চালিয়েছেন, কিন্তু রাজাকের আমনোকে হঠাতে সেই দল ছেড়ে গড়ে তোলেন নতুন দল। এখন মুহিউদ্দিনের বিপদের কথায় আসি। শুরু থেকেই আস্থা ভোট অথবা আগাম নির্বাচন চাচ্ছিলেন মাহাথির ও আনোয়ার। ১৭ আগস্ট পার্লামেন্টে সাপস্নাই বিল স্বল্প ব্যবধানে (রেজর থিন মেজরিটি) পাস হয়। পক্ষে ১১১ ভোট ও বিপক্ষে ১০৬ ভোট পড়ে। এরপর বিরোধী নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম আবার সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার নতুন বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে ক্ষমতার অংশীদার আমনো ও পাস। তারাও নতুন নির্বাচন চায়। মুহিউদ্দিন এখন কি করবেন? আপাতত আস্থা ভোটে না যেতে হলেও তিনি যে নামমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় আছেন তা টলে উঠতে কতক্ষণ? বিশ্লেষকরা সেটা নিয়েই ভাবছেন। তাদের প্রশ্ন মাহাথির ও আমনো জোটের বিরোধিতার মুখে এ বছর পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন তো? ৩০ আগস্ট 'সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট' একটি নিউজের শিরোনাম করে 'ক্যান মালয়েশিয়াস মুহিউদ্দিন সি আউট দি ইয়ার অ্যাজ পিএম, উইথ মাহাথির অ্যান্ড আমনো সার্ক্লিং?' রাজনৈতিক ভাষ্যকার তাশনি সুকুমারান এই রিপোর্টে প্রশ্ন রাখেন নো-কনফিডেন্স মোশন ছাড়া পার্লামেন্টের একটি অধিবেশন মুহিউদ্দিন পার করলেও তাকে ঘিরে থাকা (সার্ক্লিং) 'আন ইজি' শরিক আমনো ও পাস যে আগাম নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে এবং বিরোধী দল মুহিউদ্দিনের দল ভাঙার যে চেষ্টা চালাচ্ছে তাতে তিনি টিকে থাকতে পারবেন তো? আর সেটাই দেখার জন্য সবাই মুখিয়ে আছে। দেখা যাচ্ছে সব অ্যাঙ্গেল থেকেই মুহিউদ্দিন বাধার সম্মুখীন। ২৭ আগস্ট পার্লামেন্টের ৬ মাসমেয়াদি অধিবেশন শেষ হয়েছে। এই অধিবেশন ছিল তার জন্য 'বিগ টেস্ট'। ফেব্রম্নয়ারিতে রাজনৈতিক অভু্যত্থানে ক্ষমতাচু্যত পাকাতান হারাপান জোট মুহিউদ্দিনের বিশ্বাসঘাতকতা করার ঘটনায় নতুন পেরিকাতান ন্যাসিওনাল সরকারের বিরুদ্ধে নো কনফিডেন্স মোশনের মাধ্যমে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু পাকাতান হারাপানের নির্বাচিত স্পিকারকে সরিয়ে দেওয়ার ফলে এই মোশন আলোর মুখ দেখেনি। ফলে মুহিউদ্দিন প্রথম পরীক্ষায় উতরে যান। ভাষ্যকাররা বলেন, এখন সবার চোখ নভেম্বরে বাজেট অধিবেশনের দিকে। তারা দেখতে চান পিএন সরকার কতদিন টেকে। ইউনিভার্সিটি মালয়ার মালয় স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আওয়াং আজমান বলেন, মনে হচ্ছে মেয়াদ শেষের আগেই পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে মুহিউদ্দিনের ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করা হবে। তার মেয়াদের ৬ মাস সময়ে তিনি সব দিক থেকে বাধার মুখে পড়েছেন। এমনকি তিনি যে পার্টি প্রিভূমি বেরাসাতু মালয়েশিয়ার নেতা সেই দল থেকেও বাধা আসছে। বেরাসাতুর মিত্র ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (আমনো) এবং কট্টরপন্থি মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টি (পাস) এখন মুহিউদ্দিনকে নিয়ে খুশি থাকলেও ভাষ্যকাররা বলছেন তারাও একটা নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে যাতে তারা নিজেরাই ক্ষমতা দখল করতে পারে। মুহিউদ্দিন আরেক দিক থেকেও ভাগ্যবান। ২০১৮-এর নির্বাচনে পরাজিত আমনো নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক দুর্নীতি মামলায় ১২ বছরের সাজা পেয়ে রাজনীতির মাঠ থেকে ছিটকে গেছেন। তা নাহলে তিনিও প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হতেন। মুহিউদ্দিন নাজিবের অধীনে উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাকে সমর্থনকারী আমনো ও পাসের আগাম নির্বাচনের চিন্তার কথা আগেই বলেছি। পাস আরও চাচ্ছে নতুন দাবি নিয়ে আগাতে। তারা চায় দেশে শরিয়াভিত্তিক আরও কঠোর ইসলামী শাসন, যা বহু জাতিভিত্তিক এ দেশটিতে নতুন সংকটের জন্ম দিতে পারে। নির্বাচন দিতে দেরি করলে প্রবীণ নেতা মাহাথিরের আরও সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার সুযোগও কমে আসবে। তবে পাকাতান হারাপানের একটি সূত্র মতে বিরোধী দল পার্লামেন্টের মেয়াদ পুরো হতে দেবে না তাদের ক্ষমতায় ফিরে আসার সুযোগ নেবে এই প্রশ্নে বিভক্ত। কিছু বিরোধী এমপি যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় ফিরতে আগ্রহী। তবে কেউ কেউ এতে অনাগ্রহী। দুই বারের এমপি এমন একজন নেতা মনে করেন সরকারের ভঙ্গুর কোয়ালিশন ভেঙে গেলে বর্তমান বিরোধী দলই সর্বতো উপায়ে আবার সরকার গঠনের চেষ্টা করবে। বর্তমানে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে বিরোধী দল একটি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে আর বর্তমান সরকার ইতিহাসের দুর্বলতম সরকার। এমপির হারের দিক থেকে যা ৪৯ ও ৫১। এর ফলে পাকাতান হারাপান শক্ত অবস্থানে আছে, এমনকি তারা প্রতি নির্বাচনি এলাকায় সমান সমান তহবিল বরাদ্দের জন্য চাপ প্রয়োগের অবস্থানে রয়েছে। সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্লেষক ওং মনে করেন, বিরোধী দলের নেতা সমর্থকরা অনেকটা ভঙ্গুর অবস্থায়। কেন না তারা বাস্তবসম্মত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তারা পাল্টা অভু্যত্থানের স্বপ্ন দেখলেও পরাস্ত হবে এবং তা হবে জুয়াড়ির মতো, যে মনে করে সব তার হবে কিন্তু ভাগ্য তাকে ফেভার করে না। জুন মাসে বিরোধী দলের দাবির ফলে প্রধানমন্ত্রীর মনে হয়েছিল আগাম নির্বাচনের দাবি রোধ করা কঠিন হবে। পিএন আগস্টে ভোট দেওয়ার কথা বিবেচনাও করেছিল বলে সানডে টাইমস জানিয়েছিল। পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের কথা বিবেচনায় রেখে এমনটা মনে করা হচ্ছিল। তবে সে অধিবেশন নির্বিঘ্নে শেষ হওয়ায় সেই প্রশ্ন কিছুটা হলেও পিছু পড়ে গেছে। ক্ষমতাসীন পেরিকাতান ন্যাসিওনালে (পিএন) এখন সবচেয়ে বড় দল আমনো। তারা মনে করছে ভোট হলে তারা হারানো ক্ষমতা ফিরে পাবে। এ জন্যই দলটি নির্বাচনের তাড়া দিচ্ছে। তথাকথিত শেরাটন মুভের কারণে ক্ষমতা থেকে কার্যত ছিটকে পড়া মাহাথিরের পাকাতান হারাপান সরকার বিদায় নেওয়ার তিন মাস পর থেকেই আমনো এ দাবি করে আসছে। বেরাসাতু নেতা মুহিউদ্দিন ১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন এবং তার দলের এখন এমপি সংখ্যা ৪৪। আমনোর ডেপুটি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাসান ২৭ আগস্ট বলেছিলেন, সিঙ্গাপুর যেহেতু মেয়াদ পূর্তির ৬ মাস আগেই নির্বাচনে যাচ্ছে তাই বেরাসাতুরও উচিত অবিলম্বে তা করা। কেননা সরকার ভালো করে চালাতে শক্তিশালী ম্যান্ডেট দরকার, পার্লামেন্টে ভালো রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার। আমনো একা নয়- তার সহযোগী দলগুলোও এ দাবি তুলছে। সাবাহ রাজ্যে এটা হতে যাচ্ছে, মাহাথিরের সহযোগী চিফ মিনিস্টার শাফি আপদালকে হঠাতেই এ উদ্যোগ। ১ মার্চ যখন মুহিউদ্দিন শপথ নেন সেদিনও মাহাথির দাবি করেছিলেন তার প্রতি ১১৫ জন এমপির সমর্থন রয়েছে যা প্রয়োজনীয় সংখ্যা ১১২ থেকে ৩ বেশি। পার্লামেন্টে সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারানোর ভয়ে পদত্যাগ করেন মাহাথির। তার ধারণা ছিল সবার সমর্থন আবার আদায় করে তিনি আবার দায়িত্ব নেবেন। বেঁকে বসে পিকেআরের নেতা আনোয়ার। তখন সমঝোতার ভিত্তিতে তৃতীয় প্রার্থী হিসেবে সাবাহ রাজ্যের চিফ মিনিস্টার শাফির নাম চলে আসে। সে ব্যাপারে একমত হতে পারেনি পাকাতান হারাপান। পাকাতান থেকে বের হয়ে মুহিউদ্দিন করেন আলাদা জোট পেরিকাতান ন্যাসিওনাল। পিকেআরের থেকেও কিছু সদস্য ছুটে গিয়ে আনোয়ারের অবস্থান দুর্বল করে দেয়। এ সুযোগ নেয় আমনো ও পাস। এরই ফল মুহিউদ্দিনের সরকার গঠন। মুহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে মাহাথির নো কনফিডেন্স মোশন আনতে চেয়েছিলেন কিন্তু সে সুযোগ আর তিনি পাননি। সরিয়ে দেওয়া হয় স্পিকার আরিফ ইউসুফকে। আনোয়ার বিরোধী দলে বসতে সম্মত হন আর আরও পরে নিজ দল বেরাসাতু থেকেই বহিষ্কৃত হন মাহাথির ও তার অনুসারীরা। তারা এখন করেছেন নতুন দল। সাবাহ রাজ্যের নির্বাচন ২৬ সেপ্টেম্বব। এ নির্বাচন নিয়ে আমনো, বেরাসাতুসহ মাহাথির ও আনোয়ারের দল বেশ তৎপর। মাহাথিরের অনুসারী পদত্যাগ করা চিফ মিনিস্টার শাফি জয়ী হবেন কিনা বলা মুশকিল। নির্বাচনী ফল যাই হোক না কেন তা কেন্দ্রের সরকারের জন্য আপাতত মাথাব্যথার কোনো কারণ হিসেবে দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তবে থিন মার্জিন সরকারের স্থায়িত্বকে বাধাগ্রস্ত করেই যাবে, এটা স্পষ্ট। নভেম্বরে বাজেট অধিবেশনে পুরো বিষয়টা আরও স্পষ্ট হবে। সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আহমদ মতিউর রহমান : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক