প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই, কিন্তু এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ, সক্ষমতা অর্জন, সচেতনতার মধ্য দিয়ে দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। প্রসঙ্গত এটাও বলা দরকার যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির বিষয় বারবার আলোচনায় এসেছে। সঙ্গত কারণেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। আর তিনি এটাও বলেছেন যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের চক্র থেকে এ অঞ্চলের মানুষকে বের করে আনতে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে- যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই প্রতীয়মান হয়।
প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশে বৈশ্বিক অভিযোজন কেন্দ্রের (গেস্নাবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন-জিসিএ) আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা, ভূমিধস, তুষারধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে দক্ষিণ এশিয়া। এমনকি তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বাড়তে থাকলেও বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া তিনি বলেছেন, দুর্যোগে শিশু, নারী, বয়স্ক এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের ঝুঁকির বিষয়টিও ভুলে গেলে চলবে না। আমরা বলতে চাই, এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে এবং দক্ষিণ এশিয়ার সংশ্লিষ্টদের জলবায়ু ঝুঁকির বিষয়কে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টরাও প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়কে সামনে রেখে সক্ষমতা বাড়াতে আরো বেশি উদ্যোগী হবে এমনটি কাম্য।
বলা দরকার, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে তা অত্যন্ত ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করবে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। আর এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না, একদিকে জলবায়ুর ঝুঁকিতে বাংলাদেশসহ আছে দক্ষিণ এশিয়া, অন্যদিকে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ নেমে আসে। সঙ্গত কারণেই এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় আঞ্চলিক সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত এক দশকে দক্ষিণ এশিয়ার অর্ধেক জনগোষ্ঠী, অর্থাৎ প্রায় ৭০ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আরেকটি এসে আঘাত হানে। ফলে যে কোনো অগ্রগতি উল্টে যায়। এই চক্র ভাঙতে দক্ষিণ এশিয়াকে দুর্যোগে টিকে থাকার সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে- এমন বিষয় যখন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা মনে করি, বিষয়টি আমলে নিয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
উলেস্নখ্য, জানা গেছে, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন, গ্রিন হাউস গ্যাসের কারণে বাড়তে থাকা তাপমাত্রা ও অন্যান্য পরিবেশগত ক্ষতি রোধে বাংলাদেশ প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। এছাড়া সরকার ২০০৯ সালে গৃহীত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন পস্ন্যানের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে নানা পদক্ষেপ এবং অভিযোজন কর্মসূচি নিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন যেহেতু বৈশ্বিক একটি সমস্যা, তাই এর ঝুঁকি কমাতে এবং ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন দেশের প্রতিশ্রম্নত জাতীয় সহায়তা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা মনে করি, জলাবয়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির বিষয় সামনে রেখে কর্মসূচির সুষ্ঠু বাস্তবায়নেও সংশ্লিষ্টদের সর্বাত্মক পদক্ষেপ জারি রাখতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এ কথা মনে রাখা দরকার, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই এবং এই ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ানো অপরিহার্য। আর যেহেতু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চল প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ, প্রতিবছরই বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়, সঙ্গত কারণেই এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে এবং সক্ষমতা বাড়ানোর যে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সেটিকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় আঞ্চলিক সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।