নেত্রকোনায় ট্রলারডুবি দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্কতা জরুরি

প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা আর দুর্ঘটনায় মৃতু্যও থেমে নেই। যা স্বাভাবিকভাবেই ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। চালকদের অদক্ষতা, নানা ধরনের অনিয়ম, প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতাসহ বিভিন্নভাবেই দুর্ঘটনা ঘটে যা সন্দেহাতীতভাবেই অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, নেত্রকোনার মদনে ট্রলারডুবির ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের সীমান্তবর্তী উপজেলা কলমাকান্দার বড়খাপন ইউনিয়নের বাওশালী রাজনগর (বন্দি) গ্রামে বুধবার সকাল ১১টার দিকে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩ শিশুসহ ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তথ্য মতে, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর থেকে বুধবার যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার কলমাকান্দা হয়ে নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনার দিকে যাচ্ছিল। কলমাকান্দা উপজেলার বাওশালী রাজনগর (বন্দি) গুমাই নদীতে সকাল ১০টার দিকে বালুবোঝাই নৌকার সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রলারের ধাক্কা লাগে। উলেস্নখ্য, গতমাসেই নেত্রকোনার মদনে হাওড়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ডুবে মারা যায় ১৭ জন। আর তার মধ্যে ময়মনসিংহের একই পরিবারের ৮ জন ছিলেন। আমরা বলতে চাই, যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি এবং নৌ যাতায়াত বা ভ্রমণের ক্ষেত্রে ত্রম্নটিমুক্ত ইঞ্জিন, নিয়ম-নীতি মেনে চলাসহ সামগ্রিক সতর্কতা অপরিহার্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, ট্রলারডুবি বা নৌকাডুবি শুধু নয়, যাত্রীবাহী লঞ্চসহ নানা স্থানে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। বলা দরকার, এর আগে ঢাকার শ্যামবাজারের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীতে এক লঞ্চের ধাক্কায় আরেকটি ছোট লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। আমরা বলতে চাই, যখন একের পর এক ভয়াবহ ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটছেই তখন সৃষ্ট পরিস্থিতি কতটা বেদনার এবং আশঙ্কাজনক তা আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না। মনে রাখা জরুরি, বিভিন্ন সময়ে ভয়াবহ নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে যথারীতি তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনা থামেনি। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, অদক্ষ চালক, ত্রম্নটিপূর্ণ বা ফিটনেসবিহীন যান, নির্মাণ ত্রম্নটি, ধারণক্ষমতার বেশি মানুষ কিংবা মাল বহন ইত্যাদি নানা ধরনের অনিয়ম রোধ করতে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যেন কোনো ধরনের অনিয়ম কেউ করার সাহস পর্যন্ত করতে না পারে। দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে যেন লঞ্চ পরিচালিত হয় এটাও নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এ ছাড়া দুর্ঘটনা এড়াতে অতীত দুর্ঘটনা থেকেও শিক্ষা নিতে হবে। ভুলে যাওয়া যাবে না, দেশের যোগাযোগ, যাতায়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় একটা মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, জলপথে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হলেও নিরাপত্তার বিষয়টি এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। যা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নৌপথে বড় জাহাজ ছাড়াও ছোট ছোট প্রচুর যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই নিয়মনীতি মানা হয় না এমন অভিযোগও আছে। অধিক মাল ও যাত্রী নিয়ে প্রতিযোগিতাহ নানা ধরনের অনিয়মের বিষয়টি বারবার সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, যাতায়াতের ক্ষেত্রে সতর্কতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। এবারের দুর্ঘটনাসহ এর আগে বিভিন্ন সময়ের দুর্ঘটনাগুলো আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্কতা ও আইনবিধির প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, নৌপথের যাতায়াত ভ্রমণসহ সব ধরনের চলাচলে সতর্কতামূলক পদেক্ষপ নিশ্চিত করতে হবে এবং সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ জারি রাখতে হবে। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে যাতায়াতব্যবস্থার অগ্রগতি বা আধুনিকায়ন তখনই নিশ্চিত হবে যখন দুর্ঘটনা রোধ হবে। এ ক্ষেত্রে যথাযথ সতর্কতা যেমন জরুরি, তেমনি অগণিত মানুষের নিরাপদ যাতায়াত ও সুষ্ঠু ব্যবসা-বাণিজ্য অব্যাহত রাখার স্বার্থে নৌপথের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাও অপরিহার্য। সার্বিক বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।