পুলিশের তিন সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মাইলফলক

প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ঢাকার পলস্নবীর বাসিন্দা গাড়িচালক ইশতিয়াক হোসেনকে হত্যার ঘটনায় নির্যাতন ও হেফাজতে মৃতু্য (নিবারণ) আইনে করা মামলার রায়ে পুলিশের তিন সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। মামলার অন্য আসামি পুলিশের কথিত দুই সোর্সকে ৭ বছর করে কারাদন্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস এই রায় ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়ে এই প্রথম নির্যাতন ও হেফাজতে মৃতু্য (নিবারণ) আইনে করা কোনো মামলার রায় হলো। এই রায় নিঃসন্দেহে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মাইলফলক। আইনটি সাত বছর আগে ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে পাস হয়। ইশতিয়াক হত্যা মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য হলেন- পলস্নবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল ইসলাম ও এএসআই কামরুজ্জামান। তাদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে। অন্য দুই আসামি হলেন- পুলিশের কথিত সোর্স সুমন ও রাসেল। তাদের ৭ বছর করে কারাদন্ড হয়েছে। দন্ডিত আসামিদের মধ্যে কামরুজ্জামান ও রাসেল পলাতক। আগে থেকেই কারাগারে আছেন জাহিদুর রহমান ও সুমন। জামিনে ছিলেন রাশেদুল ইসলাম। রায়ের পর তাকে আজ কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার বাদী নিহত গাড়িচালক ইশতিয়াকের ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন। আমরা মনে করি, এই রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন মামলার বাদী পক্ষও। তারা এই রায়ে সন্তুষ্ট। মনে রাখতে হবে, আইনের চোখে সবাই সমান। ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিজ হাতে আইন তুলে নিতে পারেন না, পার পেতে পারেন না একের পর এক অপরাধ করে। সংবিধান অনুযায়ী একজন শীর্ষ অপরাধীরও বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের মাধ্যমে কারও মৃতু্য জঘন্য অপরাধ। এই ধরনের অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়ার কারণেই আমাদের সমাজে খুব নাটকীয় গতিতে দুর্বৃত্তায়নের উত্থান ঘটেছে। এই অপশক্তির হাতে আজ অনেকেই জিম্মি। ক্ষমতার মসনদে বসে অনেক রাজনীতিক বড় বড় আওয়াজ তুলছেন। তাদের সহযোগী দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন অভিযোগও রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে যত্রতত্র মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এই রায় এসব নেতিবাক দিক উত্তরণের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। আমরা জানি, বিচারের প্রধান মানদন্ড হচ্ছে সে দেশের সংবিধান। দেশের সংবিধানে সব মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা, সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার ন্যায্যতা কতটুকু নিশ্চিত করছে সেটাও প্রশ্ন সাপেক্ষ। অন্যদিকে দেশের সরকার সংবিধানপ্রদত্ত মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কতটা আন্তরিক সে প্রশ্নও সামনে চলে এসেছে। সরকার যদি মানবাধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে আন্তরিক না হয় তবে অপরাধীরা প্রশ্রয় পাবে এটাই স্বাভাবিক। অনেক সময় প্রশাসনিক সংকট দেশের ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করে। মানবতা, সভ্যতা, প্রগতির পথকে রুদ্ধ করে। এসব বিষয়ও সরকারকে মাথায় রাখতে হবে। দেশের কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এই রায়ের মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠিত হলো।