পাঠক মত

পাঠাগার কেন প্রয়োজন?

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

আলী আরমান রকি শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
পাঠাগার শব্দটির সন্ধিবিচ্ছেদ করলে হয় পাঠ+আগার। অর্থাৎ পাঠাগার হলো পাঠ করার উপাদান সজ্জিত আগার বা স্থান। বিশদভাবে বলা যায় পাঠাগার হলো বই, পুস্তিকা ও অন্যান্য তথ্য সামগ্রীর একটি সংগ্রহশালা যেখানে পাঠকের প্রবেশাধিকার থাকে এবং পাঠক সেখানে গবেষণা ও তথ্যানুসন্ধ্যান করতে পারে। মানুষের বই পড়ার আগ্রহ থেকেই পাঠাগারের সৃষ্টি। শতাব্দী থেকে শতাব্দী বছর ধরে মানুষের জ্ঞান জমা হয়ে থাকে পাঠাগারের বইয়ের পাতায়। অসীম জ্ঞানের ভান্ডার হলো বই। আর সেই বইয়ের আবাসস্থল হলো পাঠাগার। আমাদের দেশে পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মানুষ সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উপলব্ধি করতে পারছে শুধু বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য নয়, মনের জন্যও খাদ্য প্রয়োজন। পাঠাগার মানুষের ক্লান্ত ও বুভুক্ষু মনকে প্রফুলস্ন করতে পারে। পছন্দমতো জিনিসের সন্ধান দিয়ে তার মনের খোরাক জোগাতে সাহায্য করে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, যিশুখ্রিষ্টের জন্মের বহু আগে মিসরে, প্রাচীন গ্রিসেও পাঠাগারের অস্তিত্ব ছিল। ভারতে প্রাচীনকালে পন্ডিতদের ব্যক্তিগত পাঠাগার ছিল আধুনিককালে বিজ্ঞানের সহায়তায় উন্নত পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত পাঠাগারের মধ্যে ব্রিটিশ মিউজিয়াম, মস্কোর লেনিন লাইব্রেরি, ফ্রান্সের বিবিওথিক নাসিওনাল লাইব্রেরি, ওয়াশিংটনের লাইব্রেরি অব কংগ্রেস, কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি উলেস্নখযোগ্য। আমাদের দেশে ঢাকায় 'কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি উলেস্নখযোগ্য। এ ছাড়া ঢাকায় বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগার, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, এশিয়াটিক সোসাইটি লাইব্রেরি, ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি, খুলনার উমেশচন্দ্র স্মৃতি গ্রন্থাগার সর্বশেষ উলেস্নখযোগ্য। ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বাংলাদেশে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের প্রচলন করে আলোকিত মানুষ গড়ার কাজে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে নানারকম পাঠাগার রয়েছে। তার মধ্যে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সাধারণ ও জাতীয় পাঠাগার উলেস্নখযোগ্য। সাধারণ পাঠাগার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত বলে এর পরিসর অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকের প্রয়োজনে যে পাঠাগার গড়ে ওঠে, সেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক পাঠাগার। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই রাষ্ট্রীয়ভাবেও পাঠাগার স্থাপন করা হয়ে থাকে। এগুলোই জাতীয় পাঠাগার। এই পাঠাগারগুলো মানুষের ক্লান্ত বুভুক্ষু মনে আনন্দের সঞ্চার করে। তার জ্ঞান প্রসারে রুচিবোধ জাগিয়ে তোলে। লাইব্রেরি হাসপাতালের চেয়ে কম উপকারী নয়, তার কারণ আমাদের শিক্ষার বর্তমান অবস্থায় লাইব্রেরি হচ্ছে এক রকম মনের হাসপাতাল।' মানুষের মনে রয়েছে অনন্ত জিজ্ঞাসা, অসীম কৌতূহল। তার এই অনন্ত জিজ্ঞাসা, অন্তহীন জ্ঞান ধরে রাখে বই। আর বই সংগৃহীত থাকে পাঠাগারে। প্রতিটা সমাজে যেমন উপাসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল দরকার তেমনি পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। পাঠাগার মানুষের বয়স, রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী বই সরবরাহ করে থাকে। আর তাই সচেতন মানুষ মাত্রই পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। পৃথিবীর যত শ্রেষ্ঠ মনীষী আছেন তাদের সবাই জীবনের একটা বড় সময় পাঠাগারে কাটিয়েছেন সাহিত্য শিল্প, বিজ্ঞান, সংস্কৃতিসহ সব ধরনের জ্ঞানের আধার হতে পারে একটি পাঠাগার। পাঠাগার একটি জাতির বিকাশ ও উন্নতির মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ছাড়া জাতীয় চেতনার জাগরণ হয় না। পৃথিবীর বহুদেশ পাঠকের চাহিদা পূরণের জন্য গড়ে তুলেছে অগণিত পাঠাগার। শিক্ষার আলো বঞ্চিত কোনো জাতি পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। পাঠাগারকে শিক্ষার বাতিঘর বলা হয়। পাঠাগার ছাড়া কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র তার নাগরিককে পরিপূর্ণ শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না। অনেকেরই বই পড়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও টাকার অভাবে বই কিনতে পারে না। পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা তাই প্রতিটি সমাজে অনিবার্য। পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেছেন, 'পাঠাগারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে সংহতি যা দেশ গড়া কিংবা রক্ষার কাজে অমূল্য অবদান।' 'বই পড়ার যে আনন্দ মানুষের মনে, তাকে জাগ্রত করে তুলতে আজ সব ধরনের পাঠাগারের ব্যাপক প্রসার প্রয়োজন।' জীবনে পরিপূর্ণতার জন্য জ্ঞানের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। জ্ঞান তৃষ্ণা নিবারণ করতে প্রয়োজন পাঠাগার। একটি সমাজের রূপরেখা বদলে দিতে পারে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। গবেষকরা মনে করেন, মনকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পাঠাগারের অবদান অনস্বীকার্য। তাই শহরের পাশাপাশি প্রতিটি গ্রামে-মহলস্নায় পাঠাগার গড়ে তোলা প্রয়োজন।