মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন

বিশ্লেষকরা বলেন, এনএলডি আকাশছোঁয়া সাফল্য দাবি করলেও নির্বাচন তাদের বর্তমান বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, আসন কমে যেতে পারে।
আহমদ মতিউর রহমান
  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

মিয়ানমার রোহিঙ্গা ইসু্য এমনিতেই বিশ্বের স্পটলাইটে আছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে তাড়িয়ে দিয়ে কার্যত একঘরে হয়ে পড়েছে আসিয়ানভুক্ত এই 'অন্ধকার' দেশটি। বলা যায়, আগে থেকেই একঘরে দেশটি, যদিও সবাই আশা করেছিল গণতন্ত্র ফিরে এলে সাবেক বার্মা বর্তমান মিয়ানমার একঘরে অবস্থা কাটিয়ে উঠে আলোতে আসবে। অনেকে বলতে পারেন চীন, রাশিয়া ও ভারত যার মিত্র তার একঘরে হওয়ায় কি আসে যায়। একদিক থেকে কথা সত্য। যে অং সান সু চির জন্য মুক্ত বিশ্বে সবাই প্রাণপাত করল, তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পর্যন্ত পেলেন, কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে দেখা গেল তার কদর্য মুখ। ২০১৫ সালে নির্বাচিত হয়ে গণতন্ত্রের লেবাসে তিনিও স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে উঠলেন। সবাই ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিল, কেড়ে নিল তাকে দেয়া অসংখ্য মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পুরস্কার। এটা যে কত লজ্জার, তা সু চি বুঝতে পারলেন না। আরেকটি দুর্ভাগ্যের খবর জানা গেল ১২ সেপ্টেম্বর। তাকে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট শাখারভ প্রাইজ কমিউনিটি থেকে বাদ দিয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন সমর্থন করার দায়ে। ভিয়েতনামে ১০ জাতি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশসমূহের সংস্থা আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে ৯ সেপ্টেম্বর অন্য অনেক বিষয় ছাপিয়ে রোহিঙ্গা নির্যাতন প্রসঙ্গও উঠেছে বলে জানাচ্ছে সংবাদ মাধ্যম। সাম্প্রতিক ও এলার্মিং নিউজ হচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমার বড় ধরনের সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ পত্র হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চায়? নাকি নতুন করে রোহিঙ্গা এক্সোডাস বা উৎখাতের প্রাথমিক আলামত এটা? সময়ই সেটা বলে দেবে। আমাদের বিষয় মিয়ানমারের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, কিন্তু মোটা দাগের এ কথাগুলো বলে না নিলে পরিস্থিতি বুঝা যাবে না। আগামী ৮ নভেম্বর দেশটিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন, আর এর জন্য আনুষ্ঠানিক প্রচারাভিযানও শুরু হয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু তথ্য দিয়ে নিলে নির্বাচনের প্রেক্ষাপটটা বুঝা সহজ হবে। প্রথম কথা হচ্ছে বিশ্বের কোন দেশে ধর্মের বা পরিচয়ের সূত্র ধরে কোনো লোককে সে দেশে বসবাস বা অবস্থান করতে দেয়া হচ্ছে না বা বিদেশিরা বসবাস বা অবস্থান করছে না? রোহিঙ্গা মুসলমানরা শত শত বছর ধরে মিয়ানমারে (মূলত বার্মায়) বসবাস করে আসছে, তারা বাংলাদেশ থেকে গেছে এই অভিযোগ করে তাদের মেরে কেটে বিনাশ করতে বা তাড়িয়ে দিতে হবে? তারা বলছে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে গেছে। কয়েকশ বছর আগে কি বাংলাদেশ ছিল? ছিল পূর্ব পাকিস্তান, পূর্ব বঙ্গ, অবিভক্ত বঙ্গ নামে ভারতবর্ষের অংশ। ভারতবর্ষে একস্থান থেকে আরেক স্থানে মানুষ যেতেই পারে, ভারতবর্ষ লাগোয়া বার্মায় ব্যবসায়িক বা অন্য কাজে কিছু লোক গিয়ে থাকলে অসুবিধা কোথায়? বর্তমানে যে সব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদের সবারই তো জন্ম মিয়ানমারে, জন্মসূত্রে তারা সে দেশের নাগরিক, মিয়ানমার তাদের অস্বীকার করে কী করে, আর আমরা তা মেনে নেই কেন? তাদের লোক তারা ঠেলে আরেক দেশে ঢোকায় কী করে? আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া যে বিষয়টা ধরে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করেছে। ২০১৭ সালে নতুন করে সাত লাখ রোহিঙ্গা এলো, আগে থেকে আছে আরো চার লাখ। এত ভার ছোট দেশ বাংলাদেশ সয় কী করে? ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের গণহত্যা ধর্ষণ বাড়িঘর ধ্বংস করা শুরু করলে তারা বাংলাদেশমুখী হয়। মানবিক কারণে তাদের ঢুকতে দেয় বাংলাদেশ। এতে প্রশংসিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বাস্তব কথা হচ্ছে- এর পর তাদের ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ আর অগ্রসর হয়নি, রোহিঙ্গারা ভালো নেই, আশ্রয়দাতা বাংলাদেশও ভালো নেই। আর এ বিষয়টি ধরেই গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করেছে, যা আগেই উলেস্নখ করেছি আর তা এখন তদন্তাধীন। সম্প্রতি দুই মিয়ানমার সেনা সেখানে স্বীকারোক্তি দিয়ে রাখাইনে গণহত্যা, ধর্ষণ, আগুন দিয়ে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। আসিয়ানের মূল সম্মেলনেও বিষয়টি আসবে বা আসছে। এমন একটা প্রেক্ষাপটে এসেছে মিয়ানমারের নির্বাচন। আর মিয়ানমার বাহিনী অতিরিক্ত ৪৩ হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাখাইন স্টেটে। অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে ট্যাংক কামান বিমান সবই আছে। এর আগে তারা মানচিত্র থেকে রোহিঙ্গা গ্রামগুলো মুছে দিয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলারও প্রস্তুতি নিয়েছে বলেও খবর। আর একজনও বিদেশি নাগরিককে বাংলাদেশে ঢুকতে না দেয়ার কথাও জানা যাচ্ছে সীমান্ত রক্ষাবাহিনী সূত্রে। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। শাখারভ প্রাইজ বিজয়ীদের তালিকা থেকে সু চির নাম বাদ দেয়াও খুবই লজ্জার কথা। ১৯৯০ সালে ইপি তাকে শাখারভ পুরস্কার দেয়। এটি মানবাধিকারের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য সর্বোচ্চ পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব না হওয়ায় সু চিকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ইপির সবচেয়ে শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা এটি। এর ফলে এখন থেকে তিনি আর এই পুরস্কার জয়ীদের কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না। সব মিলিয়ে নির্বাচনের আগে সু চির জন্য নেগেটিভ খবরই আসছে।

এবার নির্বাচন প্রসঙ্গে ফিরি। মিয়ানমারে নির্বাচনের খতিয়ানটা দেখে নেয়া যাক। ১৯২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৬টি নির্বাচন হয়েছে। বছরের পর নির্বাচন হয়নি। শেষ নির্বাচন হয় ২০১৫-তে। দশকের পর দশক দেশটি শাসিত হয়েছে সামরিক শাসক দ্বারা। ২০ বছর আগে এনএলডি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েও ক্ষমতা পায়নি। বরং সেনাবাহিনীর হাতে আটক হয়ে গৃহবন্দি থেকেছে বহু বছর। এরপর সেনা শাসন ধীরে ধীরে উঠে যেতে থাকে।

করোনা সত্ত্বেও ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যাবে বলে তাদের স্থির বিশ্বাস। তাই তারা জাতিগত সংখ্যালঘু এলাকাগুলোতে জোর দিচ্ছে, গত নির্বাচনে যেখানে তারা ভালো করেছিল। তবে এবারের অবস্থা আগের মতো নয়, আর এ কারণেই তারাও সন্দিহান বলে ডিপেস্নামেটসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকার বিশ্লেষকদের অভিমত। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তো মাথাব্যথার একটা কারণই, তাছাড়া বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চলমান সংঘাত ও এসব এলাকায় ভালো স্বাস্থ্যসেবা দিতে না পারাও মাথাব্যথার কারণ। অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক নিকোলাস রস নিউ মান্ডালা পত্রিকায় লিখেছেন, এসব বাধাবিঘ্নের কারণে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেশটিতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ঢুকতে বাধা সৃষ্টি করা হলে তা পুরো নির্বাচনের বৈধতা নিয়েই সন্দেহের সৃষ্টি করতে পারে। আর পুরো পরিস্থিতি নির্ভর করবে তারা কীভাবে করোনা মোকাবিলা করে তার ওপর। নিকোলাস এশিয়া-প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চল নিয়ে কাজ করছেন এবং তার গবেষণা মিয়ানমারের জাতিগত রাজনীতির বিষয়েও।

আল জাজিরা ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, ৮ নভেম্বরের এই নির্বাচন অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন অনভিজ্ঞ (ফ্লেজলিং) গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য একটি পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মিয়ানমার টাইমস বলছে, বিশ্লেষকরা এই নির্বাচনকে মিয়ানমারের সরাসরি সামরিক শাসন থেকে ট্রানজিশনের বিষয়টিকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, ২০১৫ সালে বিপুল বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় গেলেও শান্তিতে নোবেল জয়ী সু চি ২০১৭ সালে মিলিটারি ক্র্যাকডাউনের পর লাখ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মারাত্মক আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে পড়েন। তিনি (সু চি) নিজে দি হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে দায়েরকৃত মামলায় তার সেনাবাহিনীর পক্ষে কথা বলার জন্য উপস্থিত হন। পত্রিকাটি বলছে, এ সব সত্ত্বেও সু চি তার দেশে বিপুলভাবে জনপ্রিয় যদিও তার সরকার নাগরিকদের আকাশছোঁয়া দাবি পূরণ না করায় এবং জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন। এদিকে দি ইরাবতী জানাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট উ উইন মিন্ট নেপিডোতে এনএলডির প্রচার অভিযানে ভোটারদের বলেছেন, 'ভোট ফর ডেমোক্রেসি, ভোট ফল আনফিনিশড জার্নি টু ডেমোক্রেসি, গণতন্ত্রের জন্য ভোট দিন, গণতন্ত্রের অসম্পূর্ণ পথপরিক্রমা সম্পন্ন করার জন্য ভোট দিন।' এনএলডির সিনিয়র নেতা মনিওয়া অং শিন রয়টার্সকে জানিয়েছেন, 'আমরা মনে করি, ২০১৫ সালের মতো এবারও জিতব।'

সামরিক বাহিনী সমর্থকবিরোধী দল ইউএসডিপি নেতা উ থান তায়ে বলেছেন, 'আমরা ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে আরো আসন ছিনিয়ে আনার জন্যই ভোট করছি।' বিরোধী দল হলেও পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই দলটির আসন সংখ্যা খুবই কম। সেই পরিসংখ্যানে পরে আসছি। এখানে মনে রাখা দরকার, তাদের বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ।

দেশটিতে সামরিক বাহিনী সংবিধান অনুযায়ী অনেক ক্ষমতাধর। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রত্মণালয়গুলো তারা নিয়ন্ত্রণ করে এবং পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসন সামরিক বাহিনীর জন্য নির্ধারিত। এই ব্যবস্থা কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই নেই; এমনি তাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও নেই। এবার বর্তমান পার্লামেন্টের চিত্রটা দেখি। ২২৪ আসনের উচ্চ কক্ষে এনএলডি আসন ১৩৫ ও ৪৪০ আসনের নিম্ন কক্ষে ২৫৫টি। এনএলডির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক বাহিনী সমর্থিত ইউএসডিপি অং সান সু চি ক্ষমতা গ্রহণের আগের পাঁচ বছরে দেশের ট্রানজিশনাল গভর্নমেন্টের কাজ দেখাশোনা করেছে। তারা এ নির্বাচনে কেমন ফল করে সেটাও দেখার বিষয়। তারা এখনকার পার্লামেন্টে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। উচ্চ কক্ষে তাদের আসন ১১ এবং নিম্ন কক্ষে ৩০টি। এছাড়া উচ্চ কক্ষে ১০ আসন রয়েছে আরাকান ন্যাশনালিস্ট পার্টির (এএনপি), নিম্নকক্ষে তাদের আসন ১২টি। এই কক্ষে ১২টি আসন রয়েছে শান ন্যাশনালিটিজ লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এসএনএলডি)।

বিশ্লেষকরা বলেন, এনএলডি আকাশছোঁয়া সাফল্য দাবি করলেও নির্বাচন তাদের বর্তমান বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, আসন কমে যেতে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রম্নপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মিয়ানমার ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিচার্ড হর্সে রয়টার্সকে বলেছেন, এনএলডির প্রতি বর্তমানে আকর্ষণের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু জাতি গোষ্ঠীগুলোতে। তবে দেশের মধ্যঅঞ্চলে বামার সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় সু চি এখনো খুবই জনপ্রিয়। ফলে এনএলডির আরেকটি বিপুল বিজয়ের পরিবর্তে অন্য কোনো ফলাফল দেখা কঠিন। তিনি যা ভাবছেন এটা জটিল কোনো ভাবনা নয়, কেননা, এই বিজয় পাওয়ার জন্যই তো এতদিনের আন্তর্জাতিক সহযোগী ও বন্ধু হারানোর, বিভিন্ন পুরস্কার কেড়ে নেয়ার মতো অপমানজনক পরিস্থিতিকে স্বেচ্ছায় মাথায় তুলে নিয়েছেন সু চি। এদিকে থাইল্যান্ডভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস, যে সংস্থা দুই মিয়ানমার সেনার গণহত্যা ও ধর্ষণসহ অগ্নিসংযোগ ও রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার স্বীকারোক্তির ভিডিও চিত্র জনসমক্ষে এনেেেছ, সেই সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ম্যাথু স্মিথ টু্যইট বার্তায় রাখাইন, কাচিন, শান ও চিন রাজ্যে যেখানে অস্থিরতা এখনো চলছে সে সব এলাকার বাস্তুচু্যত হাজার হাজার বেসামরিক লোকের ভোটাধিকার সরকারকে নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'যদি তা না করা হয় তবে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না।' তবে এটা করা যে কঠিন হবে, আদৌ সম্ভব নাও হতে পারে তার আলামত স্পষ্ট।

রাখাইনের অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের কথাই ধরা যাক। তারা কঠিন অবস্থায় আছে, আর তাদের তো নাগরিকত্বই নেই, ভোটাধিকার আসবে কোত্থেকে। করোনাকালে বিরোধী দল ইউএসডিপি চেয়ারম্যান উ থান তায়ে বেশ মুখর হয়েছেন সরকারের কার্যক্রম প্রশ্নে। নির্বাচনী প্রচার অভিযানকালে স্বাস্থ্যবিষয়ক গাইডলাইন অনুসরণে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছেন এনএলডির বিরুদ্ধে। ৮ সেপ্টেম্বর প্রচার অভিযান উদ্বোধনকালে তিনি বলেছেন, নেপিডোর জায়ারথিন টাউনশিপের দুটি গ্রামে নিয়ম না মেনে এনএলডি কর্মীদের প্রচার চালাতে দেখেছেন, তিনি যেখানে একটি আসনে প্রার্থী। পরের দিন থেকে নেপিডোর দলীয় সদরদপ্তর থেকে তার দলের আনুষ্ঠানিক প্রচার অভিযান শুরু হয়েছে। ওই আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী এনএলডি প্রার্থী উ মং মং সুই বলেছেন, 'তার দল বিধি মেনেই সব কিছু করছে। তবে কোনো কোনো কর্মীর ব্যাপারে ব্যত্যয় হতে পারে।' সরকারের 'স্টে এট হোম' নির্দেশনা জারিকৃত এলাকায় নির্বাচন কমিশনর্ যালি ও বাড়ি বাড়ি ক্যাম্পেইন নিষিদ্ধ করেছে। প্রার্থীদের মাস্ক ও ফেস শিল্ড পরতে বলা হয়েছে। তবে তা যে মানা হচ্ছে না তা স্পষ্ট। ১০ লাখের বেশি জনসংখ্যার নেপিডোতে ভোটার ৮ লাখ ৬০ হাজার, আর প্রার্থী সংখ্যা ৪৩। ২০১৫ এর নির্বাচনে এনএলডি সেখানে পেয়েছিল নিম্ন কক্ষের ৭ আসন, উচ্চ কক্ষের ২ আসন এবং ইউএসডিপি নিম্ন কক্ষে পেয়েছিল একটি মাত্র আসন। আগেই বলেছি, মিয়ানমারে পার্লামেন্টের উচ্চ ও নিম্নকক্ষ, রাজ্য ও অঞ্চলগুলোর স্থানীয় অ্যাসেম্বলির নির্বাচন হয়ে থাকে। তবে সামরিক বাহিনীর আসনে নির্বাচন হয় না। উচ্চ কক্ষ হাউস অব ন্যাশনালিটিজের (স্থানীয় ভাষায় আমিওথা হ্লুত্তাও) এর ২২৪ আসনের মধ্যে ১৬৮টিতে ভোট হবে। ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫৬ আসন সামরিক বাহিনীর জন রাখা, সেখানে সামরিক বাহিনী মনোনীত করবে। আর নিম্ন কক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ( বর্মী নাম পাইথু হ্লুত্তাও) এর ৪৪০ আসনের মধ্যে ৩৩০টিতে ভোট হবে। বাকি ১১০টি আসন (২৫%) সামরিক বাহিনীর দ্বারা মনোনীত হবে।

নির্বাচনে যে ফলাফলই আসুক তা সু চির জন্য আরেকটি পরীক্ষা হিসেবে দেখা দেবে বলে ভাষ্যকারদের অভিমত। কারণ তিনি সামরিক বাহিনী থেকে আরেকটু আলগা হতে চাইবেন। দেশের প্রেসিডেন্ট ও দলের উপনেতার কথায়ও সে ইঙ্গিত মিলেছে। সেটা সম্ভব হবে কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন। অন্য দিকে সামরিক বাহিনী কোন পথ পরিক্রমা করতে চায়, আর তাদের সমর্থক দল ইউএসডিপির অধিক আসন লাভের আকাঙ্কা- এ সবের ফল কী দাঁড়ায় সেটাই এখন দেখার বিষয়।

আহমদ মতিউর রহমান : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<112378 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1