দুর্ঘটনা রোধে পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি

আগস্ট মাসে ৫৫৩ জন নিহত

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না যাতায়াতজনিত দুর্ঘটনা। করোনাকালেও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, চলতি বছর আগস্ট মাসে সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৪৪৪টি দুর্ঘটনায় ৫৫৩ জনের মৃতু্য এবং ৬৬৯ জন আহত হওয়ার তথ্য এসেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে। দেশের দৈনিক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। সেখানে বলা হয়েছে, আগস্ট মাসে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৮৮টি দুর্ঘটনায় ৪৫৯ জন নিহত ও ৬১৮ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ১৫টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। নৌপথে ৪১টি দুর্ঘটনায় ৮০ জন নিহত ও ৫২ জন আহত এবং ৩১ জন নিখোঁজ হয়েছে। এই চিত্র কোনোভাবেই সুখকর নয়। এটা সত্য, প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা নেই এ দেশের মানুষের। কিন্তু ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে কারা এর জন্য দায়ী তা শনাক্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়ছে না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো হলো- ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবাদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে সরকার অভিযান চালিয়েছে বহুবার কিন্তু তেমন ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি। উলেস্নখ্য, রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহিদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় ছাত্ররা রাস্তায় নেমে পড়ে। নিজেরাই ট্রাফিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলায় দুই চালক ও এক সহকারীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে। দুজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। দুই বাসের রেষারেষির মধ্যে চাপা পড়ে রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃতু্যর ঘটনার পরে সড়ক আইন পরিবর্তন করা হয়। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সড়ক আইন জনগণের নিরাপত্তার আইন। জনগণের নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকার আপস করবে না। এ আইন সবার জন্য। রাস্তায় নৈরাজ্য চলতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু আমরা কী দেখতে পাচ্ছি। অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারি কোনো কাজে আসেনি। রাজধানীতে দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর রাজীবের মৃতু্যর ঘটনা এখনো মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। ওই সময়ে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীতেও। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অনেক লেখালেখি প্রতিবাদ আন্দোলন হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। করোনাকালেও সড়ক মহাসড়কে নৈরাজ্য চলছে কোনো রকম প্রতিকারহীনভাবে। দ্রম্নত এর অবসান হওয়া জরুরি। সরকারের পরিকল্পিত কঠোর উদ্যোগই কেবল পারে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে।