কার্যকর পদক্ষেপ নিন

ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কৃষক শস্য উৎপাদন করে যদি নায্যমূল্য না পায় তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কৃষকের উৎপাদিত শস্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, খাদ্যশস্যের বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখা ছাড়াও নিরাপত্তা মজুত গড়ে তোলা ও প্রয়োজনীয় পরিস্থিতিতে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতি মৌসুমে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এই সংগ্রহ যদি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না করে তবে বিষয়টি আমলে নেওয়া জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, চালকল মালিকদের অসহযোগিতার মধ্যে মহামারির কারণে এক দফা সময় বাড়িয়েও বোরো ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ করতে পারেনি সরকার। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। তথ্য মতে জানা যাচ্ছে, বোরো ধান-চাল সংগ্রহের শেষ দিন মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯০১ মেট্রিক টন ধান-চাল সংগৃহীত হয়েছে- যা চালের আকারে ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪৫ মেট্রিক টন। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, এবার সাড়ে ২১ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে সরকারের নির্ধারণ করা দাম থেকে বাজারে চালের দাম বেশি থাকায় বেশির ভাগ চালকল এবার সরকারকে চাল দেয়নি এমনটি জানা যাচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯০১ মেট্রিক টন বোরো ধান-চাল সংগৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ১৭ হাজার ১৮ মেট্রিক টন ধান, ৬ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৯৪ হাজার ৩৪৭ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগৃহীত হয়েছে- যা চালের আকারে ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪৫ মেট্রিক টন। আমরা বলতে চাই, যখন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি তখন এই বিষয়টি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ এবং এর যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। যদিও লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে পূরণ করা হবে, সেই প্রশ্নে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন- লক্ষ্যমাত্রাটা এবার বেশি করে নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর আগে কখনোই আট লাখ টন ধান সংগ্রহ করা হয়নি। সেদিক থেকে সংগ্রহ যে খুব বেশি কম হয়েছে তা নয়। সামনে আমনের মৌসুম রয়েছে। দুই মাস পর আমন সংগ্রহ করা হবে বলেও জানান তিনি। এছাড়া দুই মাস তেমন কোনো সমস্যা হবে না জানিয়ে বলেছেন, এই দুই মাসে সরকার যে পরিমাণ খাদ্যশস্য বের করে দেবে তা মোকাবিলা করার জন্য এই শস্যই যথেষ্ট। প্রসঙ্গত বলা দরকার, এবার বন্যা হওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা না থাকা এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম দিকে কর্মহীন ও দরিদ্রদের চাল দেওয়া হলেও এখন তা আর বিতরণের প্রয়োজন না থাকায় লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক খাদ্যশস্য সংগৃহীত হলেও খুব বেশি সমস্যা হবে না এমন বিষয়ও উঠে এসেছে। আমরা বলতে চাই, চালকল মালিকদের অসহযোগিতার মধ্যে মহামারির কারণে এক দফা সময় বাড়িয়েও যখন বোরো ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ করতে পারেনি সরকার, তখন এই পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। যেসব মিল এবার সরকারকে কোনো চাল দেয়নি তাদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে এমনটিও জানা গেছে। ফলে যারা চাল দেয়নি তাদের কাছে ব্যবসাটাই বড়- এই বিষয়টিকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের নির্ধারণ করা দাম থেকে বাজারে চালের দাম বেশি থাকায় বেশির ভাগ চালকল এবার সরকারকে চাল দেয়নি, এই বিষয়টি সুখকর নয়। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন বোরো ধান-চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সরকারিভাবে বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আরও দুই লাখ মেট্রিক টন বাড়িয়ে সাড়ে ২১ লাখে উন্নীত করা হয়। কিন্তু যখন সারাদেশে এবার দুই কোটি মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদন হলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের সঙ্গে বাজারের দামের তফাৎ থাকায় সরকারের সঙ্গে চুক্তির পরেও মিলাররা চাল দেয়নি তখন বিষয়টি আমলে নিতে হবে। এছাড়া কৃষকের নায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক উদ্যোগ জারি রাখতে হবে।