খাদ্যশস্য উৎপাদনে রেকর্ড

যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সঙ্গত কারণেই খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনাকালে পুরো বিশ্বই বিপর্যস্ত, থমকে গেছে নানা খাত, উৎপাদনও ব্যাহত হয়েছে। আর করোনাভাইরাসের মহামারিকালেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ- যা অত্যন্ত সুখকর বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। উলেস্নখ্য, ধান উৎপাদনে একধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় ধান উৎপাদনকারী দেশ। করোনা বিপর্যয়ের মধ্যেও সর্বোচ্চ খাদ্য উৎপাদন ও মজুত নিয়ে স্বস্তিতে বাংলাদেশ। বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়লেও দেশের খাদ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই এমনটিও জানা গেছে। কেননা যে পরিমাণ মজুত আছে, তাতে প্রয়োজন হলে বিশ্বে চাল রপ্তানিও করতে পারবে বাংলাদেশ। ফলে সামগ্রিকভাবেই এই পরিস্থিতি ইতিবাচক। আমরা মনে করি, এ বিষয়টিকে সামনে রেখে উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং সামগ্রিক পদক্ষেপ জারি রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। বলা দরকার, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ধান উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে থাকলেও করোনাকালে বাম্পার ফলনে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। এর আগে তৃতীয় অবস্থানে ছিল ইন্দোনেশিয়া। ধান উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম চীন ও দ্বিতীয় ভারত। চলতি বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কৃষি বিভাগ ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক প্রতিবেদন এই সুসংবাদ দিয়েছে। আর যখন এমনটি জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ এখন চাল রপ্তানিকারক ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ- তখন এই ইতিবাচক বিষয়টিকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে এবং উৎপাদন ব্যবস্থার অগ্রগতি নিশ্চিত করা ও কৃষকের ন্যায্যর বিষয়টিকেও প্রাধান্য দিতে হবে। বলা দরকার. করোনাকালে সর্বোচ্চ আতঙ্ক ছিল বোরো ধানের উৎপাদন নিয়ে। কিন্তু সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে এবার রেকর্ড পরিমাণ সর্বোচ্চ দুই কোটি দুই লাখ টন বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে। আগের দুই বছর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৮৬ লাখ টন। আমন উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ টন। আগের বছর আমন হয় ১ কোটি ৩৩ লাখ টন। চলমান দীর্ঘ বন্যায় দুই লাখ টন ধান নষ্ট হওয়ার পরও চলতি আউশ মৌসুমে ৩৪ লাখ টন আউশ ধান উৎপাদন হয়েছে। এবার বোরো আউশ ও আমনের বাম্পার ফলনে ধান-চাল গড়াগড়ি খাচ্ছে কৃষকের ঘরে, মহাজনের চাতালে, চালকল ও খাদ্যগুদামে। আর এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রীও বলেছেন, বাংলাদেশ এখন খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশ। পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত আছে। জানা গেছে, ইতিমধ্যে সারা দেশে আমন রোপণ হয়েছে ৫৮ লাখ ৯৫ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে। এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উঁচু এলাকা বরেন্দ্র অঞ্চলেও আমনের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। এবার আমন থেকে টার্গেট ১ কোটি ৫৭ লাখ টন। গত বছর আমন হয়েছিল দেড় কোটি টনের বেশি। প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এক প্রতিবেদনে বলেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতু্যর সংখ্যা বাড়ায় খাদ্য সরবরাহ চক্রে ইতিমধ্যেই চাপ পড়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যসহ সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। এমন পরিস্থিতির কারণে খাদ্যসংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। এমন অবস্থায় যখন বাংলাদেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে রেকর্ড গড়েছে তখন তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। কেননা সরকারের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত আছে। এমনও জানা গেছে, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বাংলাদেশের কৃষিকে বিশ্বের উদাহরণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এটিও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত আছে এটি যেমন ইতিবাচক, তেমনি সামগ্রিকভাবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) একজন ফেলোও বলেছেন, সুষ্ঠু খাদ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি মনিটরিং কমিটি থাকা জরুরি। বাংলাদেশ এখন চাল রপ্তানিকারক ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ- এই বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।