বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন

মনসুর আহমেদ রামকৃষ্ণ মিশন রোড হবিগঞ্জ
  ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

মফস্বল অথবা নগর সাংবাদিকতাই বলেন এই পেশার সম্মান ও শ্রদ্ধা ঠিকই আছে। সাধারণ মানুষ অনেকটা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করে সাংবাদিকদের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রামপর্যায়ের অল্পশিক্ষিত লোকজন সাংবাদিকদের থানা পুলিশের মতো ভয় পান। অনেকেই সাংবাদিকের দেখা পেলে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে মফস্বল সাংবাদিকতা আধুনিকতায় রূপ ধারণ করেছে। এখন আর হাতে লেখা সংবাদ চিঠি অথবা ফ্যাক্সের মাধ্যমে পাঠানোর সিস্টেম পুরোপুরিই বিলুপ্ত। উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে যে কোনো সংবাদ মহূর্তে মিশে যাচ্ছে নগর সংস্কৃতির সঙ্গে। সাংবাদিকতার পেশাগত দক্ষতা ও মেধার বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য দিকপাল। অনেকে মফস্বলে সাংবাদিকতা শুরু করলেও নিজ দক্ষতায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রেখেছেন। ছড়িয়ে দিয়েছেন নিজ নিজ প্রতিভা। যাদের অনন্য অবদানের কথা মানুষ আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। যারা তাদের কর্মযজ্ঞের দ্বারা নিজে আলোকিত হয়েছেন, গণমাধ্যমকেও করেছেন সমৃদ্ধ। আজ সাংবাদিকতা তারুণ্যের কাছে শীর্ষ পেশার পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু যে সাংবাদিকতা আজও সংবাদ তথা গণমাধ্যমের প্রাণশক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখছে, তা হলো মফস্বল সাংবাদিকতা। কিন্তু এই গৌরবোজ্জ্বল মফস্বল সাংবাদিকতার মধ্যেই যেন ভূত লুকিয়ে আছে, প্রচলিত কথায় যাকে বলে শর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে থাকা। আমরা অনেকেই হলুদ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে কথা বলি। বলি সুস্থধারার সাংবাদিকতার উৎকর্ষের কথা। কিন্তু ভেতরের সমস্যাগুলোর উত্তরণ না ঘটা পর্যন্ত, মফস্বল সাংবাদিকতার এ সমস্যার সমাধান অধরাই থেকে যাবে। এ কথা অনেকেই বুঝেও বুঝতে চায় না। এমনি প্রতিষ্ঠান প্রধানরা দেখেও না দেখার ভান করেন। সংবাদপত্রে ইতিহাস ঐতিহ্য কলুষিত হচ্ছে অথবা মুখ থুবড়ে পড়ছে মফস্বলে। এর পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ব্যাঙের ছাতার মতো স্থানীয় পত্রিকার বৃদ্ধিলাভ। স্থানীয়ভাবে একটি দৈনিক পত্রিকা পরিচালনা করতে ৪০-৫০ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। আর এই বড় অঙ্কের টাকার জোগান দিতে অনেক সম্পাদক ও প্রকাশক একই উপজেলায় একাধিক প্রতিনিধি দিয়ে বাণিজ্যিক ধান্দায় লিপ্ত হয়ে যান। অনেক সুযোগ সন্ধানী সম্পাদক আবার চুষে বেড়ান উপজেলার গ্রামগঞ্জে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ পত্রিকার লিড নিউজ হয়ে যায়। এবং পরে এরাই টাকার বিনিময়ে প্রতিবাদ প্রকাশ করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। সঙ্গে ইজ্জত সম্মান তো যাবেই। তবে এদের পরিমাণ অনেক কম। আত্মসম্মান ও পারিবারিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে আবার অনেক বিত্তশালী পরিবার শুদ্ধভাবে পরিচালনা করছেন সংবাদপত্র। প্রযুক্তির নতুন আবিষ্কার অনলাইন সাংবাদিকতা। প্রিন্ট পত্রিকার চেয়ে এর দূষণ অনেক অংশে বেশি। যে কেউ খেয়াল-খুশি মতো খুলে বসছেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল অথবা অনলাইন টিভি। কোনো কোনো সাংবাদিক অতিমাত্রায় অতি উৎসাহিত হয়ে নিজ ফেসবুকেই যা ইচ্ছে তা-ই প্রচার করে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। নেই আইনের প্রয়োগ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন নিউজ পোর্টালকে নিবন্ধনের আওতায় আনার কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। মফস্বল ও নগর সাংবাদিকদের যারা বাড়ি-গাড়ি আর দালানের মালিক হয়েছেন, তাদের সারাদিন-সারা বছর দেখে যায় পুলিশ আর প্রশাসনের তোয়াজগিরি করতে। জনগণের বিপদাপদ ও মামলা-মোকদ্দমায় পক্ষপাতিত্ব বা পুলিশের সঙ্গে খাতিরের সুযোগে দু'এক পয়সা হাতিয়ে নিতে। সরকারি টিআর-কাবিকা, কাবিটার প্রকল্প নিয়ে উদরপূর্তি করতে। সংবাদের নামে অর্থ হাতিয়ে নিতে। জনগুরুত্ব ও নির্যাতিত-নিপীড়িত-বঞ্চিত মানুষের সংবাদ অর্থের বিনিময়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে। অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট, দখলদারিত্ব আর টেন্ডারবাজির সংবাদ না করার বিনিময়ে পারিতোষিক নিতে। তারা পুলিশ আর প্রশাসনের সংবাদ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ব্যস্ত থাকেন প্রেসরিলিজ নিয়ে। ঘুর ঘুর করেন নেতা-পাতি নেতাদের পেছন পেছন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ষাট-সত্তর এমনকি আশির দশক পর্যন্ত মফস্বলের সাংবাদিকতাকে মনে করা হতো শখের সাংবাদিকতা। সেই সময়ে মফস্বলের সচ্ছল পরিবারের তরুণ, রাজনৈতিক কর্মীরা নিতান্ত শখের বশে কিংবা রাজনৈতিক আদর্শের টানে, আবার কেউ কেউ নিজ এলাকায় সামাজিক সম্মানের জন্য সাংবাদিকতায় আসতেন। অন্য পেশা বা কাজের পাশাপাশি সাংবাদিকতা করতেন তারা। তখনকার প্রেক্ষাপটে স্থানীয়ভাবে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে ভাবার সুযোগও ছিল না। ফলে সে সময় সাংবাদিকতায় ঝুঁকির মাত্রাও ছিল অপেক্ষাকৃত কম। তবে মফস্বল সাংবাদিকরা প্রয়োজনীয় বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা পেলে ঝুঁকি আর শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও তাদের পেশাদারিত্ব যেমন বাড়বে তেমনি বাড়তে পারে ওই পত্রিকা-মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতাও। আশা করা যায়, এ বিষয়ের সঙ্গে একমত হবেন অধিকাংশ স্থানীয় সাংবাদিক। যেখানে অর্থখোরাকির ব্যবস্থা থাকবে না, সেখানে সততাও দুর্বল হয়ে যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<112583 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1