আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষা দিবস

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

মু. সায়েম আহমদ শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা কলেজ, ঢাকা
১৭ সেপ্টেম্বর পালিত হলো মহান শিক্ষা দিবস। আমাদের ঐতিহ্য, গৌরব, সংগ্রাম, চেতনার দিন। শিক্ষা জাতির শক্তির উৎস। এ শিক্ষা দিবস সম্পর্কে আমাদের অজানা। তাই আমাদের আগে শিক্ষা দিবসের ইতিহাস জানা জরুরি। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের গণবিরোধী সংকোচনমূলক নিয়ম-নীতির প্রতিবাদে এবং গণমুখী শিক্ষা-নীতি প্রবর্তনের দাবিতে ১৯৬২ সালের ছাত্র জনতার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। আর সেদিন ছিল রক্তাক্ত, স্মৃতিবিজড়িত দিন। যা আমাদের গৌরব, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের চেতনার দিন। এই দিনে পাকিস্তানি শাসকদের শিক্ষা সংকোচন নীতির প্রতিবাদে লড়াই করতে গিয়ে শহিদ হন ওয়াজিউলস্নাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ নাম না জানা আরও অনেকেই। আর সেই আত্মত্যাগীদের স্মরণ করতে এ দিনটিকে পালন করা হয় মহান শিক্ষা দিবস হিসেবে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান তার ক্ষমতা দখলের দুই মাসের মাথায় ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর এসএম শরিফের নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। যার নাম ছিল শরিফ কমিশনখ্যাত শিক্ষা কমিশন। পরবর্তী বছরে ১৯৫৯ সালের ২৯ আগস্ট কমিশনে একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয়। আর সেই প্রতিবেদনের প্রস্তাবগুলো ছিল শিক্ষা সংকোচনের পক্ষে। প্রস্তাবিত প্রতিবেদনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্র বেতন বর্ধিত করার প্রস্তাব ছিল। ২৭ অধ্যায় বিভক্ত শরিফ কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাথমিকস্তর ও উচ্চস্তর পর্যন্ত সাধারণ, পেশামূলক শিক্ষা, শিক্ষক প্রসঙ্গ, শিক্ষার মাধ্যম, পাঠ্যপুস্তক, প্রশাসন অর্থ বরাদ্দ, শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিষয়ে বিস্তারিত সুপারিশ উপস্থাপন করা হয় এবং তা ১৯৬২ সাল থেকে বাস্তবায়ন করা হয়। শরিফ কমিশনের শিক্ষার সংকোচন নীতি-কাঠামো তিনভাগে বিভক্ত করা হয়- প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চতর। ৫ বছরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও ৩ বছরে উচ্চতর ডিগ্রি কোর্স এবং ২ বছরের স্নাতকোত্তর কোর্সের ব্যবস্থা থাকবে বলে প্রস্তাব করা হয়। শুধু তাই নয়; বরং উচ্চশিক্ষায় ধনিক শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রম করানোর জন্য ১৫ ঘণ্টা কাজের বিধান রাখা হয়েছিল। তখন এই দেশের ছাত্র-জনতা আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজের ছাত্র-জনতা। ১৭ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়। ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। এরপরে ছাত্র ও আম-জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। যার ফলে অনেকেই নিহত হন এবং গুরুতর আহত হন। আর তাদের এই ত্যাগ-তিতিক্ষার, রক্তের বিনিময়ে আমাদের আজকের এই শিক্ষা। এই শিক্ষা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় আশুলিয়ায় একটি হিফজুল মাদ্রাসায় মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। দুই শিশু শিক্ষার্থীকে হাত-পা বেঁধে মারধর করে। এতে তারা গুরুতর আহত হয়। এই শিক্ষার জন্য এত আত্মত্যাগ, এত ত্যাগ-তিতিক্ষা? এ সব কি তার ফল? যা শুধু জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়। এই মহান শিক্ষা দিবস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে আমাদের। শিক্ষকরা হচ্ছেন অনুপ্রেরণার উৎস, পরম শ্রদ্ধেয়ভাজন। তাদের হতে হবে উদার মানসিকতার অধিকারী। তাদের আচরণ হবে বন্ধুত্বসুলভ। শিক্ষা ছাড়া জাতির উন্নতি ও অগ্রগতি সম্ভব নয়। শিক্ষা জাতির প্রাণশক্তি জোগায়, যাবতীয় সুখ-সম্পদ অর্জনের জন্য পথ দেখায়, নতুন সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধির দ্বার খুলে দেয় এবং মর্যাদা ও গৌরবে মহিমান্বিত করে। আর যদি এর বিপরীত হয়, তাহলে দেশ বা জাতির দুঃখ-দুর্ভোগের সীমা থাকে না। যার ফলে, দেশ বা জাতি উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত হয়। বিশ্বে যত উন্নত দেশ বা জাতি রয়েছে, তাদের উন্নতির মূলে রয়েছে উন্নত শিক্ষার প্রভাব। তাই আমাদের দেশে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে এবং প্রত্যেক নাগরিকদের সুশিক্ষা প্রদানে নিশ্চিত করতে হবে। আর নতুন প্রজন্মদের নিয়ে সরকারের সুনিপুণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কেননা, আজকের তরুণরাই আগামীর কর্ণধার। তাদের নিয়ে ভাবতে হবে, তাদের নিয়ে পরিকল্পনা করতে এবং তা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে সম্ভব সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের তৈরি করা এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে ওঠা।