স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে

গ্রামের মানুষ অবিচারের শিকার

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সরকারি চিকিৎসকদের গ্রামে গিয়ে সেবা দিতে 'অনিহার' বিষয়টি সামনে এনে হতাশা প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছেন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার দুঃখ হয়, মেডিকেল প্রফেশন থেকে গ্রামাঞ্চলের মানুষের সেবার জন্য আমরা যতটুকু আশা করেছিলাম, ওই ধরনের সহায়তা আমরা পাইনি। চিকিৎসকদের অনিহার ফলে গ্রামের মানুষ 'অবিচারের শিকার' হচ্ছে মন্তব্য করেন তিনি। তার কথার সঙ্গে আমরা সহমত পোষণ করছি। এটা সত্য, সরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে যাদের গ্রামে বা মফস্বলে পাঠানো হয়, তাদের নিয়মিত কর্মস্থলে না থাকার অভিযোগ অনেক পুরানো। শহুরে সুযোগ সুবিধা না পাওয়া কিংবা প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ কম থাকার কারণে অনেকেই মাসের পুরো সময় উপজেলা পর্যায়ে নিজের কর্মস্থলে থাকতে চান না। ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষ জরুরি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। যা খুবই অমানবিক। এ নিয়ে খোদ সরকারপ্রধানও বিভিন্ন সময়ে সরকারি চাকরিতে থাকা চিকিৎসকদের হুঁশিয়ার করেছেন। কেবল প্রধানমন্ত্রীই নন, ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতিও। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটেনি। বরং এক্ষেত্রে উদাসীনতা ও খামখেয়ালিপনা চোখে পড়ছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা যাতে হাসপাতালে বসেই প্রাইভেট প্রাকটিস করতে পারেন সেজন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সারাদেশেই চিকিৎসার অবকাঠামো রয়েছে তারপরেও গ্রামাঞ্চলের মানুষ সঠিক চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। করোনাকালে এই চিত্র আরো প্রকট হয়ে উঠেছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বরাদ্দ অর্থের অপচয়, ভুলভাবে ব্যয় করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে দেশের স্বাস্থ্য খাত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দেশের মানুষের যথার্থ সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যসেবাকে ঢেলে সাজাতে হবে। মনে রাখতে হবে, 'স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল'। শরীর ভালো না থাকলে সব কিছুই অর্থহীন মনে হয়, এমনকি বেঁচে থাকাও। কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন- 'চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন, ব্যথিতবেদনা বুঝিতে পারে। কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে, দংশেনি যারে।' সাপে যারে দংশন করেনি, সে কী করে সাপের বিষের যাতনা বা মর্মজ্বালা উপলব্ধি করতে পারবে। যে বা যিনি অসুস্থ। কিংবা যার শিশুসন্তান, স্বজন করোনায় অথবা অন্যরোগে আক্রান্ত কিংবা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তার দুঃখ-বেদনা, শোক অন্য কি তার মতো করে উপলব্ধি করতে পারবে? দেশের স্বাস্থ্য খাতে বেহাল দশা বিরাজ করছে। সারাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চিকিৎসা খাতে রীতিমতো নৈরাজ্য বিরাজ করছে। একদিকে মানুষ ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না, অন্যদিকে ভুল চিকিৎসা ও ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়েছে। গ্রামের স্বাস্থ্যসেবার চিত্র সরেজমিন না দেখলে বোঝা যাবে না কোন পর্যায়ে রয়েছে দুর্দশাগ্রস্ত অসহায় মানুষ। \হআমরা দীর্ঘদিন থেকে লক্ষ্য করে আসছি, দেশের স্বাস্থ্য খাতে যখন কোনো সমস্যা হয়, তখন তাতে তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তারপর সব কিছুই আগের মতো। এখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার অভাব আছে কি না তা তলিয়ে দেখতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে পুরানো ধাঁচের ব্যবস্থাপনা। সে কারণে কোনো সংকট দেখা দিলে তাতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু স্থায়ী কোনো পরিকল্পনা হয় না। প্রকৃত অর্থে স্বাস্থ্য বিভাগে এখন যে সংস্কার দরকার তা হলো আমূল পরিবর্তন। যদি স্বাস্থ্য খাতের আমূল পরিবর্তন করা যায় তা হলে সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি কমে আসবে। গ্রামের সাধারণ মানুষও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে না।