পাঠক মত

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ। অধিকাংশ জনসংখ্যা এখানে দারিদ্র্যসীমার মধ্যে বাস করে। বর্তমানে দেশের অন্যতম আলোচ্য বিষয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। কালোবাজারি, মুনাফাখোর, মজুতদার প্রভৃতির কারণে খাদ্যদ্রব্য, চাল, ডাল, তেল, মরিচ, পেঁয়াজ, চিনি, দুধ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য দ্রব্যগুলোর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন এবং ক্রমে এ সব পণ্য সংগ্রহ কঠিনতর হচ্ছে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য। জনজীবন আজ বিপর্যস্ত, করোনাকালে থেমে থাকা অর্থনীতিকে সচল করতে মানুষ যোগ দিচ্ছে কর্মস্থলে। কালোবাজারি, মুনাফাভোগী কিছু ব্যবসায়ীর অশুভ হস্তক্ষেপে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। তার মধ্যে ভারত পেঁয়াজ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশকে। ফলে গতবারের মতোই বৃদ্ধি পেতে পারে পেঁয়াজের দাম। ফলে যার প্রভাব পড়বে জনজীবনে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষকে অর্ধাহার ও অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য করছে। মানুষের একটু ভালোভাবে বাঁচার দাবি আজ সর্বত্র। কিন্তু করোনাকালে দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিসহ নানান বাস্তব পরিস্থিতি তাদের প্রতিকূলে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সীমাকে অতিক্রম করে অশ্বের ন্যায় দ্রম্নতগতিতে বেড়ে চলেছে প্রতিটি পণ্যের মূল্য। দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে জীবনযাত্রার সম্পর্ক অতি নিবিড় এবং বাস্তব। একটি পরিবার কীভাবে তাদের দৈনন্দিন জীবনকে নির্বাহ করবে তা নির্ভর করে তাদের আয়, চাহিদা এবং দ্রব্যমূল্যের ওপর। প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের মূল্য যখন সহনীয় পর্যায়ে এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে তখন তাদের জীবন কাটে স্বস্তিতে। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন সাধারণ মানুষের আর্থিক সঙ্গতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যায় তখন দরিদ্র এবং অতি দরিদ্র পরিবারে চলে অর্ধাহার, অনাহার এবং পারিবারিক অশান্তি। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে একদিকে জনজীবনে নেমে আসে কষ্টের কালো ছায়া। অন্যদিকে মুনাফাখোরি, কালোবাজারিদের কারণে দেশে বিরাজ করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনকে করেছে দুর্বিষহ। কালোবাজারি, মুনাফালোভী, মজুতদাররা এই সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলেছে। পণ্য ক্ষেত থেকে শহরের বাজার পর্যন্ত আসতে কৃষককে চাঁদা, দালালি, মধ্যস্বত্বভোগী, পরিবহণ খরচ প্রভৃতি বাবদ প্রচুর অর্থ গুনতে হয়। কৃষক তখন বাধ্য হয়ে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পণ্য মজুত রাখে আর শুধু নিজের স্বার্থে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। অনেক সময় আমদানি পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে বিক্রয় করে ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মাথাপিছু ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাওয়া, জমির অনুর্বরতার দরুন উৎপাদন কম হওয়া, অনুন্নত পরিবহণব্যবস্থার কারণে পর্যাপ্ত পণ্য বাজারজাত না হওয়া, চোরাচালান ইত্যাদি কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য হচ্ছে আকাশচুম্বী। পেঁয়াজের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। কৃষকদের পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিনা সুদে ঋণসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর কালোবাজারি, মুনাফালোভী মজুতদার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে যেন বাধাগ্রস্ত না করে। আরিফুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়