বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

দ্রম্নত কার্যকর উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
'কিশোর গ্যাং' বিষয়টি বহুল আলোচিত। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে উঠতি বয়সি কিছু কিশোর। স্কুল-কলেজের গন্ডি পার হওয়ার আগেই কিশোরদের একটা অংশের বেপরোয়া আচরণ নানাভাবেই আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি এরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের লাগাম টানার মাধ্যমে সুপথে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এ লক্ষ্যে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা ১২ দফা সুপারিশও তৈরি করেছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। কেননা, উঠতি বয়সি কিশোররা যদি বিপথে চলে যায়, যদি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়- তবে তা অত্যন্ত ভয়ানক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে; যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। উলেস্নখ্য, বেপরোয়া হয়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের লাগাম টানার মাধ্যমে সুপথে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গোয়েন্দা সংস্থার সুপারিশগুলোতে- ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান, জুমার খুতবায় কিশোর অপরাধের ভয়াবহতা সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন করা, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে নিয়মিত কাউন্সিলিং করাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তথ্য মতে জানা যাচ্ছে, গত সপ্তাহে তৈরি করা প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এই প্রতিবেদনে শিশু-কিশোরদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে অভিভাবকদের আরও যত্নবান হওয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। পারিবারিক বন্ধন জোরদারের পাশাপাশি সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কাদের সঙ্গে মিশছে এ ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া কিশোরদের অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা, সংস্কৃতিচর্চা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করাসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিশোর-তরুণদের গ্যাং কালচার থেকে ফিরিয়ে আনতে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ কর্তৃক কিশোর গ্যাং নির্মূলে হটস্পট চিহ্নিত করে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা, জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, সুপারিশে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা আমলে নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে যে, করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৫ মার্চ গার্মেন্ট ও শিল্পকারখানা বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার চাপ নেই। অনেক কিশোর করোনার কারণে কর্মসংস্থান হারিয়েছে। একদিকে স্কুল-কলেজ বন্ধ, অন্যদিকে বেকার হয়ে পড়ায় কিশোররা একত্রে পাড়া-মহলস্নার অলিগলিতে আড্ডা দেয়। নিজেদের গ্রম্নপ ভারী করার জন্য তারা উঠতি বয়সি কিশোরদের দলে টানছে। পাড়া-মহলস্নায় নারী ও কিশোরী মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা ও এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। এতে এক পক্ষের সঙ্গে অপর পক্ষের সামান্য কারণে কথা কাটাকাটি ও খুনের মতো ঘটনাও ঘটছে। যা অত্যন্ত ভয়ানক। আমরা মনে করি, এই পরিস্থিতি রোধ করতে না পারলে জীবনযাপনের স্বাভাবিকতাই বিঘ্নিত হবে। বলা দরকার, শুধু ঢাকার ডেমরা, সূত্রাপুর, সবুজবাগ, খিলক্ষেত, কোতোয়ালি, উত্তরা পশ্চিম, তুরাগ, খিলগাঁও, দক্ষিণখান ও টঙ্গী থানা এলাকায় ৩২টি কিশোর গ্যাং বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। করোনার আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের পর তাদের কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের তৎপরতা আরও বেড়ে গেছে এমনটিও খবরে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক অবস্থা আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, কিশোররা যেভাবে অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে- এই প্রবণতা রোধে উদ্যোগী হওয়ার বিকল্প নেই। কিশোর গ্যাং কালচার রোধ করা, কিশোরদের সঠিক পথের অনুসারী করে তুলতে সব ধরনের উদ্যোগ জারি রাখতে হবে। ফলে রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের লাগাম টানার মাধ্যমে সুপথে ফিরিয়ে আনার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর এ লক্ষ্যে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা ১২ দফা সুপারিশও তৈরি করেছে- সামগ্রিক এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে কিশোর গ্যাং সদস্যদের সুপথে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক, কিশোদের অপরাধপ্রবণতা দূর হোক এমনটি কাম্য।