ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন

যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের অবস্থা নাজুক। অনেক ভবনই জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, দেশের সাড়ে ৬৫ হাজার ভবনের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ভবনের অধিকাংশই ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়ে নির্মিত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে নির্মাণকাজ করায় কয়েক বছর পর ভবনগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এসব জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে লাখো শিশু। জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনগুলোর কোনোটির পিলার নড়বড়ে, কোনোটির ছাদ বা দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। ভবনগুলোর ছাদের অবস্থাও খুব নাজুক। পলেস্তারা উঠে বেরিয়ে পড়েছে রড। নতুন অনেক ভবনের দরজা-জানালাও নেই। পরিস্থিতি যদি এমন হয় তা হলে শিশু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে। মনে রাখতে হবে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত পরিবেশের সঙ্গে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নির্ভর করে। সম্প্রতি সারাদেশে বন্যার কারণে বিদ্যালয়ের বসার চেয়ার-টেবিলসহ আসবাবপত্র এবং অবকাঠামোর অবস্থা আরো নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকার বিদ্যালয় ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। উলেস্নখ্য, দেশে ৬৫ হাজার ৫৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের মধ্যে ৩৬ হাজার ১৬৫টি পুরানো। এসব জরাজীর্ণ ভবন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ২৬ হাজার স্কুল ভবন নতুন। তথ্য মতে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে ১৯৯০ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সঙ্গে ডিপিই'র চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় এলজিই। ওইসব ভবন নির্মাণ করার ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ফাটল ধরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। ঝুঁকিপূর্ণ অনেক স্থানে এসব ভবন ভেঙে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যেখানে যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, সেখানে তা করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আর কোনো জরাজীর্ণ ভবন থাকবে না। এটা সত্য, ভবণ নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। যার কারণে ভবন নির্মাণ করার ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ফাটল ধরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে তার রয়েছে জিরো টলারেন্স নীতি। ইতিমধ্যে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে হয়েছে দুর্নীতি। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকলে এত অল্পসময়ে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতো না। প্রকৃত অর্থে আমরা দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে এখনো মুক্ত হতে পারিনি। সরকারি কাজে দুর্নীতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ এক সময় দুর্নীতির জন্য পর পর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। দুর্নীতির সেই কলঙ্ক-তিলক মোচন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি এটা যেমন সত্য, একইভাবে সত্য যে, আমরা সমাজ-রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে পারিনি। যার কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। যে সব ভবন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সে সব ভবন সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ করতে হবে। পাশাপাশি যাদের অনিয়ম দুর্নীতির কারণে বিদ্যালয় ভবনের এমন নাজুক অবস্থা, তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।