পাঠক মত

শিশুদের কোরআন শরিফ শিক্ষা আনন্দদায়ক হোক

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

তাসনিম হাসান মজুমদার ঢাকা
একটি স্বাধীন দেশের নাম বাংলাদেশ। এর শতকরা ৯০ ভাগই মুসলমান। নব্বই ভাগ মুসলমান সন্তানদের স্কুল কিংবা মাদ্রাসায় তাদের প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। যাদের দুটি ছেলেসন্তান আছে তাদের একজনকে স্কুলে অন্যজনকে মাদ্রাসায় পাঠানো হয়। অন্যদিকে দেখা যায় অনেক দম্পতির ছেলেসন্তান হচ্ছে না। তারা মানত করে তাদের ছেলেসন্তান হলে হাফেজ বানাবে। আবার অনেকে তিন-চারজন কন্যাসন্তান হওয়ার পর একটা ছেলেসন্তানের জন্ম হয়। তারাও ভেবে থাকে এটাকে মাদ্রাসায় পড়াবেন। প্রকৃতপক্ষে তারা নিয়ত সঠিক না রেখেই বাচ্চাদের কোরআন শিখতে মক্তব বা হিফজখানায় পাঠাচ্ছেন। এখানেই আসল সমস্যা। আমরা মুসলমান হিসেবে আমাদের কোরআন শিক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ে বাচ্চাদের কোরআন শিখানো হয়। বাদ ফজর মক্তবে। নূরানি মাদ্রাসায়। অথবা যারা কোরআন শরিফ মুখস্থ-আত্মস্থ বা কণ্ঠস্থ করতে আগ্রহী তাদের জন্য হিফজখানা। এখানে বাচ্চাদের কোরআন শরিফ এক পারা থেকে ত্রিশ পারা পর্যন্ত মুখস্থ করানো হয়। এই কোরআন মাজিদ হিফজ করানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে বাচ্চারা অনেক সময় শিখতে চায় না। বাসায় চলে আসে পলায়ন করে কিংবা শিক্ষকদের জোর-জুলুমের শিকার হয়ে। আমরা জানি, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মারধর নিষিদ্ধ করেছেন। তারপরও কিছু একগুঁয়ে গার্ডিয়ানদের জন্যই সব বিপত্তি বাধে। তাদের বাচ্চার সঠিক জ্ঞান-মেধা না থাকা সত্ত্বেও বাচ্চাদের জোর করে হিফজখানায় ভর্তি করে। আর টিচারদের বলে থাকে, রক্ত-মাংস আপনার আর হাড্ডি আমার। এরপর টিচার যখন মারেন অভিভাবকই রেগেমেগে হাঙ্গামা সৃষ্টি করে। তবে অনেক সময় পরিলক্ষিত হয়েছে হিফজখানার টিচাররা ছোট বাচ্চাদের ওপর বেশিই অত্যাচার করেছেন। যা টোটালি ক্রাইম। কিছুদিন আগে একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে বেদম মার মেরেছেন। যা কখনো একজন কোরআনের শিক্ষক থেকে কাম্য নয়। শুধু কোরআন শরিফ মুখস্থ করলেই হবে না। কোরআনের ধারক-বাহক হতে হবে। কোরআনের আলোয় আলোকিত হতে হবে। আমরা পরে দেখেছি ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মনে একটি বদ ধারণা আছে, যারা কোরআন মুখস্থ করে। তাদের রেগুলার বেত্রাঘাত না করলে মনে হয়, হাফেজ হবে না। এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। ঢাকার ডেমরায় দারুননাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসার আওতাধীন একটি হেফজখানা আছে। এখানে ছাত্রদের বেত্রাঘাত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এখান থেকে প্রতি বছর দশের অধিক কোরআন শরিফ মুখস্থ করে হাফেজ হচ্ছেন। যারা ভেবে থাকেন বাচ্চাদের মারধর করেই হাফেজ বানাতে হবে তাদের ধারণাটি ভুল। যাদের মেধা আছে তারা পুরো কোরআন শরিফ মুখস্থ করবে। আর যাদের কম মেধা তাদের নূরানি মাদ্রাসায় পড়ান। অন্তত কোরআন সহীহভাবে পড়া শিখুক। বাচ্চাদের মেরে হাফেজ বানানোর কালচার থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এত অমানবিক নিষ্ঠুর হলে বাচ্চারা মানসিক রোগী হয়ে যাবে। এরপর এর দায়ভার কে নেবে। যারা এমন করছেন, তারা নীরবে ইসলামের- কোরআনের কত ক্ষতি করেছেন জানেন না। আপনাদের নিন্দনীয় কর্মকান্ড দেখে নানান মানুষ নানান সুরে কথা বলার সুযোগ পায়। অবশেষে বলব যারা কোরআনের শিক্ষক আপনারা মানবিক হোন। বাচ্চা কোরআন শিখতে অপারগ হলে গার্ডিয়ান ডেকে বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। আর গার্ডিয়ানরা সচেতন হোন আপনার আদরের বাচ্চার ব্যাপারে। তারা কোনোভাবে মানসিক-শারীরিক অশান্তিতে ভুগছে কিনা তার খোঁজখবর রাখুন। সংশ্লিষ্ট সবাই সচেতন থাকুন। পৃথিবী হোক কোরআনের আলোয় আলোকিত।