নির্মূল করতে হবে

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে বাংলাদেশ এখনো মুক্ত হতে পারেনি। বাংলাদেশ এক সময় দুর্নীতির জন্য পর পর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। দুর্নীতির সেই কলঙ্ক-তিলক মোচন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি এটা যেমন সত্য, একইভাবে সত্য, আমরা সমাজ-রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে পারিনি। যার কারণে আমাদের আশানুরূপ উন্নতি অগ্রগতি হয়নি। এটা আমাদের জাতীয় ব্যর্থতা। বাংলাদেশে প্রতি বছর দুর্নীতির মাধ্যমে কী পরিমাণ অর্থ আয়-রোজগার করা হয়, তার আসলে সঠিক কোনো তথ্য-উপাত্ত কারও কাছে নেই। তবে দুর্নীতি নিয়ে যে সব সরকারি-বেসরকারি সংস্থা কাজ করে, তাদের ধারণা এ সংখ্যা লাখো কোটি টাকার কম নয়। সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি দেশব্যাপী আলোচনায় এসেছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত ৪৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পত্তির উৎসের বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোটিপতি গাড়িচালক আব্দুল মালেকর্ যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুদক সচিব এ তথ্য জানান। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য খাতের ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্ত্রীসহ ২০ জনের সম্পত্তির হিসাবও চেয়েছে দুদক। ৪৫ জনের তালিকায় এই ১২ জন ছাড়াও মালেকের নামও রয়েছে। উলেস্নখ্য, সর্বশেষ ২০১৮ সালের সূচকে দুর্নীতির দিক থেকে শীর্ষ ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩তম। এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত প্রতিষ্ঠিত হয় যে, বাংলাদেশে দুর্নীতিজনিত পরিস্থিতি সুখকর নয়, বিপজ্জনক। বিশেষ করে করোনাকালে দেশের স্বাস্থ্য খাতে এ চিত্র প্রকট হয়ে উঠেছে। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে তার রয়েছে জিরো টলারেন্স নীতি। ইতিমধ্যে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যেতে পারত। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি বড় বাধা। দুর্নীতির কারণেই আমরা পিছিয়ে রয়েছি। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতিতে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছেন, তাদের বেতন দ্বিগুণ করেও কোনো লাভ হয়নি। তাদের অতি লোভী মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। নিচের পর্যায়ের সরকারি কর্মচারীরা দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে, যা ভাবলে অবাক হতে হয়। দুর্নীতি বাংলাদেশে আগেও ছিল, তবে এখন এর মাত্রা অনেক বেশি। প্রশ্ন হচ্ছে, বেঁচে থাকার জন্য মানুষের কত টাকা প্রয়োজন। দেশের সবাই যদি অবৈধভাবে কোটিপতি হতে চায় তা হলে এটা একটা বিপজ্জনক বার্তা। আমরা দীর্ঘদিন থেকে লক্ষ্য করে আসছি, দেশের স্বাস্থ্য খাতে যখন কোনো সমস্যা হয়, তখন তাতে তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তারপর সব কিছুই আগের মতো। এখানে সরকারের আন্তরিকতা বা সদিচ্ছার অভাব আছে কিনা তা তলিয়ে দেখতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে পুরনো ধাঁচের ব্যবস্থাপনা। সে কারণে কোনো সংকট দেখা দিলে তাতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু স্থায়ী কোনো পরিকল্পনা হয় না। প্রকৃত অর্থে স্বাস্থ্য বিভাগে এখন যে সংস্কার দরকার তা হলো আমূল পরিবর্তন। যদি স্বাস্থ্য খাতের আমূল পরিবর্তন করা যায় তা হলে সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি কমে আসবে বলে আমরা মনে করি। দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশালী ও গর্বিত দেশ। আমাদের সেদিকেই অগ্রসর হওয়া জরুরি।