যথাযথ বাস্তবায়ন হোক

শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধে পদক্ষেপ

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে- এ প্রবণতা শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, সরকার শিক্ষা খাতে নানা উদ্যোগ নিলেও শিক্ষার্থী ঝরেপড়ার হার গত ৫ বছর থেকে একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। আমরা মনে করি, এ বিষয়টি উদ্বেগজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। এ ছাড়া আমলে নেওয়া দরকার, করোনা মহামারিতে অভিভাবকদের আয় কমে যাওয়া এবং কর্মহীন হয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হওয়াসহ নানা সংকটে এ সংখ্যা লাফিয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, উদ্বেগজনক এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার ১৩টি বড় কারণ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করেছে সরকার এবং এ বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের নতুন ছক কষা হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। আমরা মনে করি এ বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। এখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, এ ১৩টি কারণকে সামনে রেখে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করা। জানা গেছে, এ সব বিষয় পর্যালোচনা করে সরকার ৭টি স্বল্পমেয়াদি ও ৬টি দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। স্বল্পমেয়াদি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে, তাদের একটা ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। এ তালিকা তৈরিতে শিক্ষকদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাজে লাগানো হতে পারে। এ সব শিক্ষার্থীকে মাসে মাথাপিছু ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বৃত্তি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের এক বেলা করে খাবারের ব্যবস্থা করারও সিদ্ধান্ত রয়েছে। আরেকটি বিষয় উলেস্নখ্য, শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধে সরকার দীর্ঘমেয়াদি যে সব পরিকল্পনা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে, এর মধ্যে শিক্ষকদের দক্ষতা ও মানোন্নয়নের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুকে সহজবোধ্য করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। আমরা মনে করি, যেহেতু সুনির্দিষ্টভাবে ১৩টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে এবং শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে ফলে এগুলোর যথার্থ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, করোনা পরিস্থিতিতে নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত থেকে হতদরিদ্রের কাতারে দাঁড়ানো পরিবারের শিক্ষার্থীদের খাতা-কলমসহ সব ধরনের শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে এবং এ সময় যাদের টিউশন ফি বকেয়া পড়েছে তা মওকুফ করানো যায় কিনা, সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এ বিষয়গুলো বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হবে এবং অভিভাবকদের ওপরও চাপ কমবে যা শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধে সহায়ক হতে পারে। এ ছাড়া স্মার্টফোন, নেট সংযোগ এবং টিভি-রেডিও না থাকার কারণে অতিদরিদ্র যে সব শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত, করোনা বিদায় নেওয়ার পর ওই সব শিক্ষার্থীকে স্কুল শিক্ষকদের মাধ্যমে অতিরিক্ত ক্লাস করানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। যাতে তারা তাদের লেখাপড়ার ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ করতে পারে। ফলে এ বিষয়গুলোর যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীর ঝরেপড়া রোধ হোক এমনটি কাম্য। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, করোনার কারণে সারা বিশ্বেই বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে নানা খাতেই বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আর করোনা মহামারির ফলে শিক্ষায় বৈষম্য আরও প্রকট হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। কেননা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চললেও দরিদ্র ও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পরিসংখ্যানও বলছে, অর্ধেক শিক্ষার্থীও এ সবের আওতায় নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ বৈষম্যও ঝরে পড়ার ক্ষেত্রে প্রভাবক ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও শঙ্কা উঠে আসছে, যা এড়ানোর সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, সামগ্রিক এই পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে সম্পদে পরিণত হওয়ার পরিবর্তে সমাজের বোঝায় পরিণত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।