পাঠক মত

ফল, শাক-সবজি সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণের সবচেয়ে সহজ ও সস্তা উৎস হলো ফল ও শাক-সবজি। কিন্তু ফল ও শাক-সবজির একটি বড় সমস্যা হলো এগুলো দ্রম্নত পচনশীল এবং তাজা অবস্থায় এগুলোর সংরক্ষণকাল খুবই সীমিত। একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রতি বছর মোট উৎপাদনের শতকরা ২০-৩০ শতাংশ ফল ও শাক-সবজি পচে নষ্ট হয়ে যায়। যদিও এগুলো সংরক্ষণের সহজ ও সস্তা কিছু নিয়ম আছে। যেমন- শুকিয়ে সংরক্ষণ, ডিপ ফ্রিজিং পদ্ধতিতে সংরক্ষণ, হিমাগার পদ্ধতি ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক দরিদ্র ও অশিক্ষিত হওয়ায় তাদের পক্ষে এসব পদ্ধতি অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া আমাদের দেশের বেশির ভাগ ফল ও শাক-সবজির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এগুলো মৌসুমী ফসল। অর্থাৎ বছরের নির্দিষ্ট সময়ে উৎপাদিত হয়। যার জন্য উৎপাদন মৌসুমে বাজার সরবরাহ বেড়ে গিয়ে তাৎক্ষণিক চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থেকে যায়। কিন্তু পরিবহণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার জন্য সময়মতো বাজারজাতকরণ করা যায় না। প্রাকৃতিক কারণে এ সব অবিক্রিত তাজা ফল ও শাক-সবজি অতি অল্প সময়ে পচে নষ্ট হয়ে যায়। তাই কৃষকরা ফল ও শাক-সবজি সংগ্রহের পর বাজারজাতকরণকেই সংরক্ষণের প্রধান হাতিয়ার মনে করে। কিন্তু অধিকাংশ কৃষক সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ সম্পর্কে ততটা সচেতন নয়। আমাদের দেশের কৃষকরা বাজারজাতকরণ বলতে শুধু ফল ও শাক-সবজি সংগ্রহ করে পাইকারি বা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রয় করাকে বোঝে। যার ফলে ফল ও শাক-সবজি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। বাজারজাতকরণের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে যা যথাযথভাবে কৃষকরা অনুসরণ করলে এক মৌসুমের ফল ও শাক-সবজি অন্য মৌসুমেও খাওয়ার উপযুক্ত থাকবে। বাজারজাতকরণের কিছু ধাপ বা পর্যায় আছে। যেমন- ১. বাছাইকরণ ২. প্যাকিং ৩. পরিবহণ গ্রামীণ পর্যায়ের কৃষকরা ফল ও শাক-সবজি সংরক্ষণে ততটা সচেতন না হলেও পাইকারি বিক্রেতারা এ বিষয়ে বেশ দক্ষ ও সচেতন। কারণ তাদের মূল লক্ষ্যই হলো মৌসুমের বাইরেও ফল ও শাক-সবজি সরবরাহ করে অধিক মুনাফা লাভ করা। তাই তারা কৃষকদের থেকে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ফল ও শাক-সবজি কিনে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে রেখে পরবর্তীতে বেশি দামে বিক্রয় করে। এতে ফল ও শাক-সবজির সঠিক সংরক্ষণ ও মানুষের চাহিদা দুই-ই মেটে। এ জন্য গ্রামীণ কৃষকদের জন্য ফল ও শাক-সবজির সঠিক বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। ফড়িয়া, দালাল, ঠিকাদার ইত্যাদি শ্রেণির মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীর সংখ্যা হ্রাস করতে হবে। বাংলাদেশের ফল ও শাক-সবজি বাজারজাতকরণ করার বর্তমান ব্যবস্থাগুলোর উন্নতির সঙ্গে উৎপাদনকারীর ও ক্রেতা উভয়ের স্বার্থ জড়িত। উৎপাদনকারী তার পণ্য সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও অধিক মূল্য পেতে এবং ক্রেতা তাজা ফল ও শাক-সবজি কম মূল্যে পেতে সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ খুবই জরুরি। বর্তমানে বাংলাদেশ ফল ও শাক-সবজি রপ্তানি বাণিজ্যে বিশ্বে যে স্থান পেয়েছে সে জন্যও সুষ্ঠু বাজারজাতকরণে অধিক দৃষ্টি দিতে হবে। শারমিন আক্তার শানু শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়