নাব্য সংকট নিরসনে পরিকল্পিত ড্রেজিং দরকার

প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:১৬

সাধন সরকার ভ‚গোল ও পরিবেশ বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাতায়াতের প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া-কঁাঠালবাড়ী নৌরুট। কিন্তু ব্যস্ত এই নৌরুটে ফেরি সাভির্স বিপযের্য়র মুখে পড়েছে। প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে এই নৌরুট। পলি জমে ভরাট হয়ে এই নৌরুটে নদীর তলদেশ অগভীর হয়ে গেছে। নদীর বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ডুবোচর। ফলে নৌ-চ্যানেলে ফেরি আটকে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চল-রাজধানীমুখী যাতায়াতকারী যাত্রীদের। গত প্রায় তিন মাস ধরে এই সমস্যা চলে আসছে। নাব্য সংকট ও ডুবোচরের কারণে রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। জোয়ারভাটার ওপর নিভর্র করে চলছে ফেরি! আবার বাধ্য হয়ে স্বাভাবিক রুট বাদ দিয়ে নতুন রুটে বা বিকল্প চ্যানেলে ফেরি চলাচলে সময় কয়েক ঘণ্টা বেশি লেগে যাচ্ছে। ফলে ঈদের সময় ভোগান্তির মাত্রা চরমে পেঁৗছায়। নাব্য সংকট নিরসনে কমবেশি ড্রেজিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু ড্রেজিং করলেও কোনো উপকারই হচ্ছে না। একদিক ড্রেজিং করলে অন্যদিকে পলিতে ভরে যাচ্ছে! কারণ ড্রেজিং করে পলি মাটি দূরে না ফেলে পাশে ফেলায় ঘূণর্য়মান স্রোতে পলি মাটি আবার সেখানেই জড়ো হচ্ছে। ফলে নাব্য সংকট রয়েই যাচ্ছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথেও নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। এই নৌপথে মাঝে মাঝে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। ব্যস্ত এই নৌপথেও পরিকল্পিত ড্রেজিং করা জরুরি হয়ে পড়েছে। দায়সারা গোছের কাজ না করে সমন্বিত ও পরিকল্পিত উপায়ে ড্রেজিং তথা ক্যাপিটাল ড্রেজিং (গভীর খনন) করতে হবে। ড্রেজিংয়ের পলি মাটি নদীতে বা নদীর পাড়ে না রেখে দূরে ফেলতে হবে। তথ্য মতে, একটি ফেরি চলতে অন্তত ৭ ফুট গভীরতা দরকার। কিন্তু শিমুলিয়া-কঁাঠালবাড়ী নৌপথে কোথাও কোথাও গভীরতা ৫ ফুটের কাছাকাছি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কতৃর্পক্ষের (বিআইডবিøউটিএ) তথ্য অনুযায়ী, এবার পদ্মায় মাত্রাতিরিক্ত পলির কারণে নাব্য সংকট নিরসনে ৩২ লাখ ঘনমিটার পলি মাটি অপসারণ করতে হবে। কিন্তু জুন মাস থেকে এ পযর্ন্ত পলি অপসরণ করা হয়েছে মাত্র ৯ লাখ ঘনমিটার। কী পরিমাণ পলি অপসারণ করা হচ্ছে সেটা যেমন গুরুত্বপূণর্ তার চেয়ে গুরুত্বপূণর্ কীভাবে পলি অপসারণ করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় অপসারিত পলি পরবতীের্ত আবার নদীতেই ফিরে আসে! অপসারিত পলি যেন আর কখনোই নদীতে ফিরে না আসে সে ব্যাপারে কতৃর্পক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে। ড্রেজিংয়ের পলি মাটি দূরে ফেলার মাধ্যমে তা আবার কাজে লাগানোও যেতে পারে। নদীর আশপাশের নিচু জায়গা পলি মাটি দ্বারা ভরাট করা যেতে পারে। আবার উবর্র এ পলি মাটি জমিতে ফেললে জমির উৎপাদন শক্তিও বৃদ্ধি পাবে। ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে শিমুলিয়া-কঁাঠালবাড়ী ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ব্যস্ত নৌপথ সম্পূণর্ চলাচলের উপযোগী করা খুবই জরুরি। নাব্য সংকট দূর হলে দেশের নদ-নদীগুলো যেমন প্রাণ ফিরে পাবে তেমনি নৌপথে চলাচল স্বস্তিদায়ক হবে।